X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

আদর্শিক ধারাবাহিকতা রুখে দেওয়ার কৌশল

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
০৩ নভেম্বর ২০২০, ১৬:৫০আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২০, ১৬:৫২

হায়দার মোহাম্মদ জিতু উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক ইতিহাস রক্তপাতের ইতিহাস। রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ইতিহাস। যার ফলাফল ক্ষমতাকেন্দ্রিক আচরণে এখানে রক্তের সম্পর্কসহ যেকোনও সম্পর্কই অর্থহীন! মহাকাল সেই সাক্ষ্যই বহন করে। তবে ঢাল-তরবারি আর মহাবিষ হেমলকের পথ অতিক্রম করে আধুনিক-উত্তরাধুনিকতার টানেলে মানুষ এখন সুরিয়ালিজম বা অতিকাল্পনিক জগতে প্রবেশের অপেক্ষায়। কিন্তু তবুও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ক্ষমতাকেন্দ্রিক হত্যা লিপ্সা তার যায়নি। বরং সময়ের দোলাচলে তা রূপ নিয়েছে আরও বর্বর বাস্তবতায়।
শুধু তাই নয়, সময়ের প্রবাহে তা রূপান্তরিত হয়েছে ক্ষমতাকেন্দ্রিক হত্যা আচরণ থেকে আদর্শিক নিশ্চিহ্নের মানসে। তেমনি এক বর্বর হত্যাকাণ্ড ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বরের জেল হত্যা। যেখানে প্রদীপ্ত প্রত্যয়ের প্রবাদ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর দর্শন বাস্তবায়নের সারথি বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

বিস্তৃত চিন্তায় এই হত্যাকাণ্ড শুধুই রাজনৈতিক নয় বরং আদর্শিক। কারণ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং চিন্তার সারথি ছিলেন এই চার নেতা। খুনিদের বিশ্বাস ছিল তারা বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে নিশ্চিত হাল ধরবেন। সেই আতঙ্কেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপর তাদের গ্রেফতার ও হত্যা করা। মিথোলজিক্যাল চরিত্র বিশ্লেষণে শৈশবে গাঁয়ের গুরুজনদের মুখে শোনা মানুষ বেশি ‘ভূত’ চিনবার পন্থা তাদের ‘পা’। কারণ হয় এদের পা থাকে না অথবা থাকলেও উল্টা। এ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও তার সহযোগী চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতা দখলকারীদের পথচলা নিরীক্ষণ করলে স্পষ্ট হয় যে এরা সেই গাঁয়ের শোনা ভূতই।

যার প্রামাণ্য দলিল, এরা দেশকে বঙ্গবন্ধুর প্রগতিশীল এবং মুক্তবুদ্ধির জায়গা থেকে সরিয়ে উল্টো পথে অর্থাৎ মৌলবাদী বা পাকিস্তানি কায়দায় নিয়ে গিয়েছিলেন। আরও ভিন্নভাবে বললে নিজেদের পা’হীন ভূত বিবেচনার সমান্তরালে দেশকে অবস্থানহীনতার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

তবে এখানকার সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো এর ভুলে যাওয়ার সংস্কৃতি। ফলাফল জেলের ভেতর জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়টিও চাপা পড়ে গিয়েছিল। যেমনটি করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরও। তবে ইতিহাসের নান্দনিকতা ওইখানটায় যে এটা ধারাবাহিক প্রবাহের ফলাফল হিসেবে সকল বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়েও তা পাড়ে উঠে যায়। বাঙালির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

আর এই পাড়ে উঠিয়ে নেওয়ার নাবিক বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্ব-ন্যায়বোধের ফলাফল হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, জাতীয় চারনেতা হত্যাকাণ্ডের বিচারিক রায় হয়েছে এবং সেগুলো এখন সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হওয়ার পথে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জনসাধারণের ন্যায়বোধ। যদিও এই ন্যায় বাস্তবায়নের পথ বড়ই বন্ধুর। কিন্তু এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সাহস তার জনগণ। আর জনগণেরও একক নেতৃত্ব সারথি শেখ হাসিনা।

কারণ এটা এখন প্রতিষ্ঠিত যে বাংলার মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার চেয়ে বড় কোনও বঙ্গবন্ধু-বাংলাদেশপ্রেমী নেই। যার প্রমাণ উইলিয়াম শেকসপিয়রের ট্র্যাজেডি নাটক হ্যামলেটে যেমন যুবরাজ হ্যামলেট এককভাবে তার পিতার হত্যা রহস্য উন্মোচন করেছেন তেমনি শেখ হাসিনাও একক সদিচ্ছায় সমস্ত রাজনৈতিক এবং আদর্শিক হত্যাকাণ্ডের বিচারিক কাজ করে চলেছেন, যা আগের কেউই গ্রহণ করেননি। আর মহাযজ্ঞ সম্ভব হয়েছে একমাত্র শেখ হাসিনার দীর্ঘ সংগ্রাম, সংযম এবং প্রজ্ঞার বাস্তবতায়। 

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

[email protected]

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ