X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোগীর সঙ্গে বসে দেখা স্বাস্থ‌্য খাত

তুষার আবদুল্লাহ
১৪ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৩৭আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৪০

তুষার আবদুল্লাহ হাসপাতালের একটি কক্ষ দরকার। সপ্তাহখানেক ধরে অপেক্ষায় আছি। করোনাকালে হাসপাতালের একটি কক্ষ পাওয়া চাঁদকে পাওয়ার চেয়েও বেশি। সরকারি হাসপাতালে যেমন, তেমনি শীতাতপ হোটেল সদৃশ হাসপাতালেও। রোগী কোন হাসপাতালে ভর্তি হবেন চিকিৎসার জন্য, রোগীর ইচ্ছার ওপর তা খুব কমই নির্ভর করে। চিকিৎসক তার পছন্দ, সুবিধামতো বা যোগাযোগ বিবেচনায় রোগীকে হাসপাতালের ঠিকানা দেখিয়ে দেন। বেচারা চিকিৎসকদের আবার হাসপাতালগুলোর মধ্যে রোগী সমবণ্টন করে দিতে হয়। কোন মাসে কয়টি রোগী কাকে দেওয়া হলো, সেই হিসাবমতো আসে সম্মানী বা কমিশন।
যে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে তাড়া, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচজন চিকিৎসক, তিন হাসপাতাল এবং কয়েক গুচ্ছ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছে। অস্ত্রোপচারের চেয়ে পরীক্ষার ধকল আরও কষ্টকর। সেটা যেমন সইতে হয়েছে, তেমনি সংশয়ের মধ্যে থাকতে হয়েছে, বাড়িতে বসে অনলাইনে যিনি রোগী দেখছেন, তিনি রোগীর সমস্যা কতটা বুঝতে পারছেন। দেখা গেলো হাসপাতালে রোগী বসিয়ে রাখা হয়েছে ক্লাসরুমের মতো করে। চিকিৎসক তার বাড়িতে। হাসপাতালে তার সহকারীরা রোগীর রোগের ইতিহাস লিখছেন, সেই ইতিহাস যথাযথ থাকছে না। রোগী বলছেন এক, ‘লেখক’ লিখছেন আরেক। এক ঘর অন্য রোগীর সামনে রোগী নিজের সমস্যা বা কষ্টের কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ‌্যবোধ নাও করতে পারেন। গোপনীয়তার বিষয়ও আছে। কিন্তু চিকিৎসক যদি বাড়ি থেকে গোপন কথাটিই শুনতে চান, এবং রোগী লাজ ভেঙে না বলেন, তাহলে পরিণতি কী হতে পারে? গত কয়েকদিন হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে এমন অভিজ্ঞতাই হয়েছে। বাকি দিনগুলোতে আরও কী অপেক্ষা করছে জানি না।

অপারেশন বা হাসপাতালের চিকিৎসার আবার সেট মেন্যু আছে। বিলাসিতা বা আরাম এর সঙ্গে যুক্ত এমন বলা যাবে না এক বাক্যে। আসলে টাকার পরিমাণের ওপর পরিচ্ছন্নতা এবং হাসপাতাল কর্মীদের ব্যবহার নির্ভর করে। মূলত পরিচ্ছন্নতার কথা বিবেচনা করেই রোগী বা তার পরিজনেরা বেশি টাকা খরচ করতে বাধ্য হন। আবার কোনও কোনও হাসপাতালে ইচ্ছা করলেই কম টাকায় সাধারণভাবে থাকার সুযোগ নেই। অভিজাত হোটেল তুল্য হাসপাতালে কেন গরিবের পা পড়বে? এই হুঙ্কার তোয়াক্কা করেই গরিব জীবন বাঁচাতে সর্বস্ব হারিয়ে আসে এ ধরনের হাসপাতালে। বাজারে গুজব ভালো চিকিৎসা, বড় ডাক্তার বসেন এমন শীতাতপ হাসপাতালেই।

আমাদের স্বাস্থ‌্যসেবা খাত থেকে সেবা উড়ে গেছে। হাসপাতাল নিজেই গভীর অসুখে। এই অভিযোগগুলো চরম সত্য হয়ে সামনে আসে করোনাকালে। এখনও করোনাকালে আছি। কবে বের হবো এই কাল থেকে জানি না । দিন যত যাচ্ছে স্বাস্থ‌্য খাতের অসুখের নানা দিক প্রকাশিত হচ্ছে। করোনার মতোই স্বাস্থ‌্য খাতের কোনও কোনও অসুখ উপসর্গহীন। তাই অজানা রয়ে গেছে আরও কিছু রোগ। এই যেমন কানাঘুষা শোনা গেলেও সেদিনই প্রকাশ্যে এলো, মানসিক রোগীর চিকিৎসা হয়, অমানুষিক চিকিৎসার মাধ্যমে। পুলিশ কর্মকর্তা মারা না গেলে, আমরা কি জানতে পারতাম, স্বাস্থ‌্য খাতের এই মানসিক রোগের কথাটি?

আমরা যে বলি রোগীরা বিদেশ চলে যাচ্ছে। দেশে চিকিৎসা করাতে চায় না কেউ। এটা যে শুধু লোক দেখানোর জন্য যাওয়া বা ভালো ডাক্তার খোঁজার জন্য যাওয়া তা নয়। ভালো চিকিৎসকের আমাদের ঘাটতি নেই। ঘাটতি আছে ব্যবস্থাপনা, পেশাদারিত্ব এবং ভালো ব্যবহারের। এই তিনের ঘাটতি মিললে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের শারীরিক, মানসিক দুই স্বাস্থ‌্যই ভালো হয়ে উঠবে, নিশ্চিতভাবেই।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি



/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ