X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু ছড়িয়ে যাক গোটা বাংলায়

লীনা পারভীন
২০ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৩২আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৩৩

লীনা পারভীন গোটা দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের প্রস্তুতি চলছে বছরজুড়ে। ২০২১ সালটি আমাদের দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। কেন? আমি চাই আমার এই লেখার পাঠকরা এই কেন’র উত্তরটা জানুক। ১৯৭১ সালে যে দেশটির জন্ম সেই দেশটি তার ৫০তম জন্মবার্ষিকী পালন করবে। একই সাথে যে মানুষটির হাত ধরে এই দেশের জন্ম সেই মানুষটির জন্মের ১০০তম বছরও একই সালে। একটি দেশ, বাংলাদেশ যার নাম আর একজন জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার নাম। এই যে দুইয়ের মিলন,মিলিত একটি বছর এমন ঐতিহাসিক সাল আর কোনও দেশের ইতিহাসে এসেছে কিনা জানি না। ব্যক্তিগতভাবে আমি অত্যন্ত গুরুত্বসহ তাই এই সালটিকে বিবেচনা করছি।
স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই কলঙ্কজনক ঘটনার পর এই দলটি টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আছে,যার নেতৃত্বে আছেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বেই এগিয়ে চলেছে দেশ এবং এই উন্নয়নের চাকা একদিনের জন্যও থেমে নেই এটাও বলতেই হবে। কিন্তু কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই একটি দেশের মাপকাঠি ধরে নিয়ে বসে থাকার কোনও উপায় নেই। ভুলে গেলে মারাত্মক ভুল হবে যে স্বাধীনতার শত্রুরা সদা জাগ্রত। তারা সেদিনও বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি আজও নিচ্ছে না। এই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেই যাচ্ছে নানাভাবে দেশকে আবারও পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার। এই চেষ্টা তারা কেবল রাজনৈতিকভাবে করছে তা নয়, করছে সাংস্কৃতিক দিকেও। একদিকে সরকারকে চাপে রাখছে নানা রাজনৈতিক ছলচাতুরির মাধ্যমে,আবার অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প।

একটা সময় ছিল যখন বঙ্গবন্ধুর নামটিও উচ্চারণে ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। সেই সময়টা আমরা পার করে এসেছি,তবে হারিয়ে গিয়েছে অনেক কিছু। অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। প্রশ্ন আসে,বঙ্গবন্ধুর দল ক্ষমতায় আছে ইতিহাসের দীর্ঘতম সময় নিয়ে। এই সময়টাকে তারা কাজে লাগিয়েছে কেমন করে? এই যে সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন,এই সাহস তারা পাচ্ছে কোথায়? ধীরে ধীরে তারা এগিয়েছে। আজকে যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রস্তুতি চলছে তখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর আঘাত কীসের লক্ষণ? এটা কি কেবল দরকষাকষির বিষয়?

না। মোটেও নয়। তারা ল্যাব টেস্ট চালাচ্ছে। পালস বোঝার চেষ্টা করছে। ধীরে ধীরে লক্ষ্যের দিকে আগাচ্ছে। কী সেই লক্ষ্য? এর উত্তরও বুঝতে হবে আমাদের। ফিরে যেতে হবে জাতির জনকের হত্যার পিছনের কারণের দিকে। কারা,কেন সেদিন বঙ্গবন্ধুকে পরিবারসহ হত্যা করেছিল। কী স্বার্থ ছিল? সেদিন তারা সাময়িক জয় লাভ করেছিল কিন্তু পারেনি বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে। মুছে ফেলতে চেয়েও মুছতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর নামকে। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখলেই তো ওদের লস। ব্যর্থতার ইতিহাস সামনে আসে। পাকিস্তান কায়েমের লুকায়িত খায়েশ তাদের ঘুমাতে দেয় না। একটার পর একটা পরিকল্পনা করেও ব্যর্থ হচ্ছে কিন্তু থেমে নেই। আবার নতুন করে উঠে দাঁড়ায়।

সম্প্রতি কিছু ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে যে লম্ফঝম্ফ এগুলো সেই লুকায়িত খায়েশেরই ফল। বলা হয়,আওয়ামী লীগ জিতলে জিতে যায় বাংলাদেশ আর হারলেও হেরে যায় দেশ। কেন বলা হয়? বলা হয় কারণ একমাত্র এই দলটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ধারণ করেছে। এই যে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ এখনও কিছু স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি একদিন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দেখবো বলে, যে বাংলাদেশে কোনও ধর্মীয় বিভেদ থাকবে না,ধর্মের নামে হানাহানি থাকবে না। এখানে সবার হৃদয়ে থাকবে কেবল একটি নাম আর সে নামটি হবে সোনার বাংলাদেশ। এই স্বপ্ন দেখার সাহস এখনও পাই। কারণ,বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এখনও বেঁচে আছে। এখনও শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন আর তিনিই আমাদের আবারও সাহস দিয়েছেন স্বপ্ন দেখার। কিন্তু সেই স্বপ্নের দুয়ারে কারা বারবার আঘাত দিতে চাইছে? কেন আজকে শেখ হাসিনার বাংলাদেশেও বঙ্গবন্ধুকে নিতে পারছে না। কেন আজকে আওয়ামী লীগ নিশ্চুপ আছে? কেন গর্জে উঠছে না গোটা বাংলা? কী হবে এত অর্থ দিয়ে যদি আমরা জনকের পরিচয়কে ধারণ করতে না পারি? কী হবে এত বড়লোকি দিয়ে যদি আমরা ইতিহাসকে মুছে ফেলে দেই। কাদের জন্য এই উন্নয়ন? তবে কি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আজকে আবারও নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে? তবে কি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আজ আবারও প্রশ্নের মুখে?

কেন এত বছরেও বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দিতে পারলাম না গোটা বাংলাদেশের হৃদয়ে? কেন তিন দফায় ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগ শিক্ষা ব্যবস্থাকে অসাম্প্রদায়িক করতে পারলো না? বাঙালি সংস্কৃতিকে কেন আজকে ধর্মের বিপরীতে দাঁড় করানো হলো? সংস্কৃতি আর ধর্ম কেউ কারও বিরোধী ছিল না কখনও, অথচ একটি অপরাজনৈতিক শক্তি সবসময় চেষ্টা চালিয়ে আসছিল আমাদের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার। কারণ, তারা জানতো এই জাতির একটাই ভিত্তি আর সেটা হচ্ছে সংস্কৃতির শিক্ষা। আমরা সবসময় বলে এসেছিলাম মুক্তিযুদ্ধকে পৌঁছে দিতে হবে এই দেশের প্রতিটি কোনায়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশকে গড়ে তুলতে না পারলে স্বপ্নের সোনার বাংলা আসবে না কোনোভাবেই। সেই চেষ্টার কতটা সফল হতে পেরেছে আওয়ামী লীগ বা আদৌ কি চেষ্টা করেছে তারা?

সময় এসে গেছে মূল্যায়নের। বঙ্গবন্ধুকে কেবল ভাস্কর্য আর ব্যানারে সীমাবদ্ধ রাখলে এই আঘাত আসবেই। মুক্তিযুদ্ধকে বুলি হিসাবে নয়, স্লোগানে সীমাবদ্ধ নয়, শিক্ষা  ও আদর্শে পরিণত করতেই হবে। প্রজন্মের মাঝে ঢুকিয়ে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে। আপসে সমাধান আসে না। কিছু কিছু জায়গায় আপস করতে নেই। ব্যক্তি যেমন আপস করে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রেরও একটি চরিত্র পরিষ্কার থাকা দরকার। নতজানু নীতি দিয়ে মৌলবাদকে ঠেকানো যাবে না। শরীরে ক্যানসারের জীবাণুকে বাড়তে দিলে সে একদিন আপনার গোটা শরীরকে অচল করে মৃত বানাবেই। তাই আহ্বান করি, এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। মৌনতার খোলস ছেড়ে শক্ত হাতে দমন করুন সেসব ফানুসকে, যারা এই দেশ থেকে আবারও বঙ্গবন্ধুকে সরাতে চায়, মুছে ফেলতে চায় মুক্তিযুদ্ধের নিশানা।

লেখক: কলামিস্ট

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ