X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

তবে কি শুরু হলো করোনার সেকেন্ড ওয়েভ!

সালেক উদ্দিন
২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৩৪আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৩৭

সালেক উদ্দিন করোনাভাইরাস কম তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে। যার কারণেই হয়তো বিশ্বব্যাপী করোনা বা কোভিডের সংক্রমণ শুরুতেই বা প্রথম ওয়েভে শীত অঞ্চলগুলোয় মহামারি আকার ধারণ করেছিল এবং শীতপ্রধান এলাকায় এখনও এর প্রভাব কম নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন আমাদের দেশে শীতকালে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানবে। সে অনুযায়ী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে তার বক্তব্যে দেশবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব বজিয়ে রেখে চলাচলের কথা বলেছেন। বলেছেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের কথা।
এ বছর মার্চে আমাদের দেশে করোনা যখন প্রথম আঘাত হানে তখন আমরা করোনা নিয়ে যতটা ভীত ছিলাম, যতটা সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম, এখন তা আর নেই বললেই চলে। অবশ্য দেশে করোনা যখন এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল, তখন আমাদের নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছিলেন, আমরা নাকি করোনার চেয়ে শক্তিশালী। সে সময় অনেকেই কথাটি নিয়ে বেশ হাসাহাসি করেছিলেন। দেশে আগস্ট মাস থেকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকে। করোনার আক্রমণ মোটামুটি নিম্নহারে চলে এলে জনগণ নিজেদেরকে করোনার চেয়ে শক্তিশালী মনে করে শান্তির নিশ্বাস ফেলেছেন কিনা জানি না, তবে করোনাকে এখন আর তারা বাঘ মনে করেন না। যার প্রমাণ মিলে রাস্তাঘাটে, হাটে বাজারে, বাস-ট্রেন-লঞ্চে, অফিস আদালতে। বলা যেতে পারে সবখানে।

আগে সর্দি জ্বর কাশি হলে প্রথমে করোনার কথা মনে পড়তো এবং তাৎক্ষণিকভাবে মানুষ করোনা টেস্ট করাতো। এখন আর অতি সামান্যতে মানুষ ভয় পেয়ে করোনা টেস্ট করায় না। ভাবে করোনা হয়ে থাকলেও এটি ওষুধেই চলে যাবে। বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করার দরকার নেই।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যেতে পারে আমার আবাসস্থল ঢাকার মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটির ২৩টি বিল্ডিংয়ের মধ্যে প্রথম করোনা ধরা পড়লো একটি বিল্ডিংয়ের একটি পরিবারে। সে কী অবস্থা! এই বিল্ডিংটাকে লকডাউন করা হলো। প্রশাসনের লোকজন এসে মাইকিং করলো। দৈনিক পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে খবর হলো। গার্ডেন সিটির অতি উৎসুক কিছু মানুষও নিয়মিত ওই বিল্ডিং থেকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকে ঘোষণা করতে শুরু করলো। ফলে ভয়ে ওই বিল্ডিংয়ের আশেপাশে অন্য কোনও বিল্ডিংয়ের বসবাসকারীরা যেতেন না। তাদেরকে নিজ বিল্ডিং থেকে বের হতে দেওয়া হতো না। অনেকটা মৃত্যুপুরীর মতো শুনশান অবস্থা ছিল সেটি। কথাটি উল্লেখ করলাম এ কারণেই যে এখন সেই জাপান গার্ডেন সিটিতে অনেক বিল্ডিংয়েই করোনা আক্রান্ত রোগী আছে, কিন্তু সেই প্রথম শনাক্ত হওয়া বিল্ডিংয়ের মতো অবস্থায় কোনও বিল্ডিংয়ে হয় না। কারণ করোনা দেখে শুরুতে মানুষ যে ভয় পেতো, এখন তা আর পায় না।
এই ক’দিন আগে ঢাকার সন্নিকটে টাঙ্গাইল সদরে আমার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমি কদাচিৎ দু’একজন ছাড়া কারোর মুখে মাস্ক দেখিনি। গ্রামের মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার সময় আমি একাই মাস্ক পরিহিত ছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল বাকিরা সবাই সম্ভবত আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।
শুধু মফস্বল শহরে বা গ্রামে নয়, রাজধানীসহ দেশজুড়ে করোনার বিষয়ে এখন অতি ঢিলেঢালা অবস্থা বিরাজ করছে। খালি চোখে যা দেখছি তাতে প্রতীয়মান হচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে মানুষের মধ্যে করোনার ভীতি কমেছে, সচেতনতা কমেছে। মাস্ক ব্যবহার, স্যানিটাইজার ব্যবস্থা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রবণতা ইত্যাদি কমেছে। ঢাকার বাইরে অনেক জায়গায় এসবের তো বালাই নেই। ইদানীং ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরেও করোনা  সংক্রমণ প্রতিরোধে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার তা মানা হচ্ছে না। বরং গা ঘেঁষাঘেঁষি করে রাস্তাঘাটে, কাঁচাবাজারে, শপিং মলে, বাসে-লঞ্চে, অফিসে-আদালতে মানুষ চলাচল করছে। এক কথায় বলা যেতে পারে যে মানুষের মধ্যে এখন বিধিনিষেধ না মানার প্রবণতা কাজ করছে।

করোনার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ মোকাবিলায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা এবং সরকারি নির্দেশনাতেই হবে হয়তো মাস্কবিহীন চলাচলের কারণে মফস্বল শহরে দুয়েকজনের জেল-জরিমানার খবর পত্রিকায় দেখলেও রাজধানীতে এর তেমন কোনও প্রয়োগ নেই।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পর ক্রমে সেটা বাড়তে থাকে। একসময় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক রূপ ধারণ করে। আবার আগস্ট মাস থেকে দৈনিক করোনা রোগীর শনাক্তের হার ২০ শতাংশের নিচে থাকায় আমরা স্বস্তি অনুভব করেছিলাম। এই শনাক্তের হার এবং মৃত্যুর হার নভেম্বর মাসের শুরু থেকে ক্রমেই বাড়ছে। লেখাটি যখন তৈরি করছি  তার আগে টানা চতুর্থ দিনের মতো দৈনিক দুই হাজারের বেশি মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এবং করোনায় মৃত্যুর হার এক দিনের তুলনায় পরেরদিন বেশি হয়েছে। আগে করোনায় আক্রান্তের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২০-এর নিচে এখন তা ৩০-এ উত্তীর্ণ হয়েছে। সংক্রমণ বাড়ছে বলে মৃত্যুহারও যে আরও বাড়বে এতে কোনও সন্দেহ নেই। গত সপ্তাহ থেকে এ সপ্তাহে সংক্রমণের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। তবে কি ইতালি স্পেন যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র কানাডা প্রভৃতি দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার সেকেন্ড ওয়েভ আঘাত করার পূর্বলক্ষণ এটি? অন্তত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার ফলাফল ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান থেকে সেরকমই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
বিশ্বজুড়ে দেখা গেছে ইতিপূর্বে অনেক ফ্লুর সেকেন্ড ওয়েভ ফাস্ট ওয়েভের চেয়ে বেশি ধ্বংস সাধন করেছে। করোনার সেকেন্ড ওয়েভের বেলায়ও বিশেষজ্ঞরা সেরকমটাই মনে করছেন। আর সে কারণেই জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশের সকলকে অন্ততপক্ষে বাইরে মাস্ক পরে থাকার অনুরোধ করেছেন। পরিছন্নতা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

দেশে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু এই দুইয়ের ঊর্ধ্বগতি করোনার সেকেন্ড ওয়েভের আঘাতের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সেকেন্ড ওয়েভের আক্রমণ মোকাবিলার জন্য এখনই যদি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে তার পরিণতি যে ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর জন্য সামাজিক সচেতনতার যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কঠিন অবস্থান গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু করোনা প্রতিরোধ টিকা পাওয়ার সুযোগ আসতে এখনও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে সেহেতু করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা ও বিধিনিষেধ পরিপালনের আপাতত কোনও বিকল্প নেই। এতে জনগণ জনপ্রতিনিধি প্রশাসন স্বাস্থ্যকর্মী সকলেরই কাজ করে যেতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় মাস্ক পরা সহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য মানুষকে বাধ্য করতে হবে। এর জন্য কঠিন পদক্ষেপ নিতে হলেও দিতে হবে। ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র জনসমাগম হয় এমনসব স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজিয়ে না রাখার কারণে জেল-জরিমানার প্রথা এখনই শুরু করা উচিত। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ শুধু অফিসে আদালতে নয়, হাটে-বাজারে দোকানপাটে কলকারখানায় বাসে লঞ্চে সর্বত্র এর বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।

করোনা সেকেন্ড ওয়েভের কালো ছোবল থেকে বাঁচার জন্য এসবের আর কোনও বিকল্প নেই।

লেখক: কথাসাহিত্যিক

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
খাদে পড়া গাড়ি উদ্ধারের সময় বাসচাপায় প্রাণ গেলো ২ জনের
খাদে পড়া গাড়ি উদ্ধারের সময় বাসচাপায় প্রাণ গেলো ২ জনের
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘সেফ জোনে’ ২৩ নাবিক, নিরাপত্তায় ইতালির যুদ্ধ জাহাজ
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
‘আজ থেকে শুরু হচ্ছে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ