X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্য খাতে জনশক্তি সংকটের স্বরূপ

স ম মাহবুবুল আলম
০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:২০আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:২১

স ম মাহবুবুল আলম আগের লেখায় বলেছি অপ্রতুল বাজেট ও বাজেট ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় প্রথম ও প্রধান অন্তরায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতে অপর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রধান সংকট হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অর্থায়ন কৌশলপত্রে তার স্বীকৃতি রয়েছে। এই সকল বিষয়ে মনোযোগ দিতে হলে স্বাস্থ্যসেবাকর্মী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের চিন্তাকে সূত্রবদ্ধ করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তাদের মধ্যেকার সম্পর্কটি এখন স্মরণকালের নিম্নতম পর্যায়ে অবস্থান করছে। সংকটের কারণ নিয়ে শুধু অস্পষ্টতা নয়, তারা প্রধান কারণটি চিহ্নিত করতে পারছে না। বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসক সমার্থক। তাই রোগীদের কম সময় দেওয়া, দুর্ব্যবহার, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি ও নানা অনৈতিক আচরণসহ স্বাস্থ্যসেবার ব্যর্থতার দায়ে চিকিৎসকরা অভিযুক্ত। অন্যদিকে প্রাপ্য আর্থ-সামাজিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত সামাজিক নিগ্রহ, সহিংসতা, গ্রেফতার ও রোগীর স্বজন দ্বারা খুন হচ্ছে। একদা অত্যন্ত আকর্ষণীয় পেশা হিসেবে গণ্য হলেও চিকিৎসকদের বড় একটা অংশ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে প্রেরণা হারিয়ে ফেলছে। স্বাস্থ্যসেবায় অবকাঠামো ও সম্পদের সন্নিবেশ ঘটাতে পারলেও শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের দক্ষতা ও অন্তর্নিহিত অনুপ্রেরণা শক্তির ওপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যসেবার উন্নত মান। তাই দুর্বল কার্যপ্রণালী ও মানবসম্পদের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্যসেবার কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনে গুরুতর বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বাংলাদেশ সেই সমস্ত ৫০টি দেশের তালিকার একটি যেখানে স্বাস্থ্যসেবা খাত তীব্র জনবল সংকটে ভুগছে। প্রতি ১০ হাজার জনে ৩ জন চিকিৎসক। মানদণ্ড অনুসারে ২৩ জন থাকার কথা। আর প্রতি ১০ হাজার জনগণের জন্য আছে ২ জন নার্স। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসা কর্মীর বৈশ্বিক অনুপাত ১:৩:৫। বাংলাদেশে তা বৈশ্বিক মানদণ্ডের বিপরীতে চিকিৎসকের দিকে ঝুঁকে অনুপাত ১:০.৫:০.৩। বৈশ্বিক মানদণ্ডে এই সময়ে বাংলাদেশ কমপক্ষে ৯১০০০ চিকিৎসক, ২৮০০০০ নার্স ও ৪৮৩০০০ অন্যান্য চিকিৎসাকর্মীর (টেকনোলজিস্ট) ঘাটতিতে আছে। ভৌগোলিক অবস্থান ভেদে ঘাটতি আরও বেড়ে ব্যাপক অসমতা তৈরি করছে। ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামীণ জনপদে বাস করলেও শহর এলাকায় ১৮ গুণ চিকিৎসক বেশি। আরও উদ্বেগের বিষয় গ্রামাঞ্চলে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সরকার অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৩০-৫০ শতাংশ পদ শূন্য থাকছে। জনবল ঘাটতিই একমাত্র সমস্যা নয়। জনবলের বিভিন্ন দক্ষ অংশের সংমিশ্রণে ভারসাম্যহীনতা বিদ্যমান। যেমন, একটি সার্জারি টিমে লোকবল ঠিক থাকলেও বিভিন্ন দক্ষতার সংমিশ্রণে একটির ঘাটতিতে (যেমন: অ্যানেস্থেসিস্ট) পুরো টিম অকার্যকর। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সাধারণভাবে প্রয়োজনীয় দক্ষতার ঘাটতি এবং একই সঙ্গে দক্ষ জনবলের তীব্র অভাব দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রাষ্ট্রের প্রয়োজন অনুযায়ী অনুপাত মেনে তৈরি হচ্ছে না। অ্যানেস্থেসিস্ট, রেডিওলজিস্ট, নার্সসহ অনান্য দক্ষ জনবলের তীব্র ঘাটতি পূরণ করা যাচ্ছে না। ২০০৮ সাল থেকে দীর্ঘ ১২ বছর পর্যন্ত রোগ নির্ণয়কারী টেকনোলজিস্টদের কোনও সরকারি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্যসেবা মানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে শুধু রেজিস্টার্ড ৭৫ হাজার চিকিৎসক নয় সঙ্গে যুক্ত আরও প্রায় চার লাখ স্বাস্থ্যসেবা কর্মী। তাদের দক্ষতা, মানবৃদ্ধি ও বিকাশের বিষয়টি ভীষণ অবহেলিত থাকছে। স্বাস্থ্যসেবায় জনশক্তির নানাবিধ সংকট থাকা সত্ত্বেও তা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে জনবল ও চিকিৎসাসামগ্রীর ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে সত্যি, তবে দুঃখজনক বিষয় যে প্রয়োজনীয় কার্যপদ্ধতির অভাবে বিদ্যমান স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও জনবল অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর বাইরে ওয়ার্ডবয়, সুইপার, কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রণালয়, নীতি-নির্ধারকরা স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মান উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সে কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই।

জেলা, উপজেলায় কর্মরত চিকিৎসকদের ওপর সমীক্ষায় দেখা যায় কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা (শারীরিক নিগ্রহ, আবেগতাড়িত কর্মকাণ্ড, হাসপাতালে ভাংচুর ইত্যাদি), নাজুক কর্মপরিবেশ, প্রতিদিন গড় কাজের ঘণ্টা, প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত রাত্রিকালীন দায়িত্ব, অপর্যাপ্ত বেতনভাতাদি, নিম্নমানের আবাসিক ব্যবস্থা, যাতায়াত সুবিধার অভাব, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসাসামগ্রীর অপ্রতুলতা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সীমিত কাজের সুযোগ ইত্যাদি চিকিৎসকদের গুরুতর হতাশায় ঠেলে দিচ্ছে।

তরুণ চিকিৎসকরা অপরিচিত গ্রামীণ জীবনের অনিশ্চয়তার সঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের লক্ষ্য ও পেশাগত উন্নতির বিষয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বদলির অনিশ্চয়তা, পদোন্নতির সীমিত ও জটিল পদ্ধতি, পরিবার বিচ্ছিন্ন জীবন, সন্তানদের শিক্ষা ইত্যাদি নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, বদলি ও পদোন্নতিতে চূড়ান্ত অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবে পেশাগত জীবনের শুরুতেই বড় ধাক্কা খায়। চিকিৎসাসেবায় বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি অর্জনের জন্য ৭-১০ বছর সময় লেগে যায়। আর তার জন্য প্রয়োজন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে থাকা। উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়া চিকিৎসকদের পদোন্নতির সুযোগ নাই।

সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররা স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে নগ্ন আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের দুর্ভাগ্যজনক শিকার। প্রশাসন ক্যাডারের তুলনায় পদোন্নতিতে, কর্তৃত্বে ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধার প্রকট বৈষম্যে স্বাস্থ্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত অপদস্থ ও অপমানিত হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এই করোনা মহামারির সময়ে জাতি দেখেছে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত চিকিৎসক বনাম আহত ইউএনও’র প্রতি রাষ্ট্রের আচরণের বৈপরীত্য, দেখেছে করোনা সেবায় নিবেদিত চিকিৎসক হেলিকপ্টার না পেলেও আহত সহকারী কমিশনারকে ঢাকায় আনতে হেলিকপ্টার পাওয়া যায়। অতি সম্প্রতি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকারি চিকিৎসককে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ব্যর্থ চিকিৎসক নেতৃত্বকে সময়ের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, অপমানে চিকিৎসকদের হৃদয় হয়েছে রক্তাক্ত।

করোনা মহামারিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের কথা না শুনে স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পদে প্রশাসন ক্যাডার তাদের অপ্রতিরোধ্য আগ্রাসন সম্প্রসারণ করছে। করোনাকালে দায়িত্ব নেওয়া সচিব চিকিৎসকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ধমক দিয়ে কথা বলছেন। তার এই বোধোদয় নাই, তার কথা তাকে স্বাস্থ্য খাতে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। এই আমলাতন্ত্র সরকারকে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্তহীন করে ফেলছে। প্রয়োজন দক্ষ, বিজ্ঞানমনস্ক ও বিনয়ী আমলাতন্ত্র। স্বাস্থ্যসেবার অন্যান্য কর্মীর অবস্থা আরও করুণ। আর্থিক সুবিধা ও সামাজিক স্বীকৃতি বঞ্চিত কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ড্রপ-আউট অনেক বেশি।

স্বাস্থ্যসেবায় মন্ত্রী থেকে উপজেলা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতৃত্বকে আসার সুযোগ করে দিতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নেতৃত্বের সূচক নয়। আজকের দিনে একজন চিকিৎসক নেতাকে অবশ্যই জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য অর্থায়ন ও তথ্য প্রযুক্তিতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যে সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক প্রশাসন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যুক্ত থাকতে চায় তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কাজের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমিক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে উচ্চ নেতৃত্বে আনতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কাজের পুনারাবৃত্তি ও দ্বন্দ্ব দূর করে জনবল ও অর্থের অপচয় রোধ করে কর্মদক্ষতার বৃদ্ধির সুযোগ আছে। নার্স ও অনান্য চিকিৎসাকর্মীর অনুপাতিক ব্যাপক ঘাটতিকে দ্রুততম সময়ে দূর করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর বেতন কাঠামো ও সামাজিক মর্যাদা উন্নত করতে হবে। রাজনীতিবহির্ভূত, পক্ষপাতহীন, সুশৃঙ্খল মানবসম্পদ উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। সকল স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে একটি সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ তথ্য ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যা স্বাস্থ্যসেবা কর্মকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজের অংশ হয়ে তৈরি হবে।

ঐতিহাসিকভাবে পৃথিবীজুড়ে সরকারি চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিসে যুক্ত। এই দ্বৈত প্র্যাকটিসের বাস্তবতার মধ্যে একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্রের ডাক্তার হয়ে ওঠা। স্বাস্থ্য খাতে নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাব দূর করতে দ্বৈত প্র্যাকটিসের অবসান ঘটানোর সময় এসেছে। মনে রাখতে হবে আমাদের বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মূলত সরকারি চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া প্রাইভেট প্র্যাকটিস থেকে চিকিৎসকদের বিপুল আয়কে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ  করা যাবে তা নিয়ে নীতিনির্ধারক ও চিকিৎসকদের উদ্ভাবনী পথ বের করতে হবে। এটা সরকারি নির্দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণার মতো বিষয় না, পরিস্থিতিকে সেই মাত্রায় উন্নীত করে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে একটি শক্তিশালী ও পূর্ণাঙ্গ  স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সক্ষম কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করতে হবে। সকল জরুরি সেবা ও প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ সেবার ২৪ ঘণ্টা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে। যেসব  অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ে জোর দিলে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা উপজেলা স্তরে থাকে তার সবই গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে দিয়ে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির অগ্রযাত্রায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। স্বাস্থ্যেসেবায় শৃঙ্খলা ফিরে একটা রেফারেল সিস্টেম গড়ে উঠবে। সরকার ৮টি বিভাগের ৮টি উপজেলাকে প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলট প্রকল্পের মধ্যে এনে নিবিড় পর্যবেক্ষণ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। দুর্বলতা ও সবলতার জায়গা চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ে এগিয়ে যেতে পারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সক্ষমতা ও মান তৈরিতে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে নগরে সম্প্রসারণ করতে হবে।

এর ফলে রোগীর চাপ কমে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা ও শিক্ষার মান বাড়াতে সুযোগ পাবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোয় পরিবর্তন ও কারিক্যুলামকে সময়োপযোগী করে দক্ষ জনবল তৈরির বিশ্বমানে উন্নীত করতে হবে। এটা লজ্জার, বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করা ভারতীয় নাগরিকদের ৮৩-৮৭ শতাংশই মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষায় ফেল করেছে।  উচ্চ মেধাবী ও নিবেদিতরা যাতে জ্যেষ্ঠতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে রাজনীতি ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও সঠিক পদে পদোন্নতি পায় তার প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মেডিক্যাল শিক্ষাকে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বের করে এনে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালনা করা যেতে পারে। একটি সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত  কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে  দক্ষ জনবল তৈরি ও জনবল সংকট সমস্যার সহনীয় সমধান আনতে পারবে। জেলা সরকারি হাসপাতালের জনবল ও  ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে সেকেন্ডারি স্বাস্থ্যসেবার  প্রয়োজন মেটানোর উপযোগী করে গড়তে হবে। চিকিৎসাসেবার প্রতিদিনের কাজের মধ্যে একটি শক্তিশালী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে।

করোনাকালে শত চিকিৎসক জীবন দেওয়ার পরও কি জনগণ চিকিৎসকদের এত কষ্টের কিছু অংশ অনুধাবন করতে পেরেছে? জনগণ সেই অবস্থায় নেই। করোনাকালে অবর্ণনীয় দুর্দশা, অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয় ও চিকিৎসা পেতে অসহায়ত্ব জনসাধারণকে চিকিৎসকদের প্রতি আরও ক্ষুব্ধ ও বীতশ্রদ্ধ করে তুলছে। জনগণের এই অসন্তোষকে পুঁজি করে সমস্যার মূল কারণ থেকে দৃষ্টি সরাতে সরকার, মিডিয়া, হাসপাতাল মালিক, ওষুধ কোম্পানি, ল্যাব মালিক, প্রশাসন-পুলিশ সকলেরই আঙুল ডাক্তারদের দিকে। 

চিকিৎসকদের সম্মান ও নিরাপত্তা জনগণের জন্যই। জীবন-মৃত্যুর সংকটময় মুহূর্তে একজন ডাক্তারই হলেন স্নেহময়ী ‘মা’। সেভ দ্য মাদার ফাস্ট। উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন, মোটিভেটেড স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের মূল শক্তি। স্বাস্থ্যসেবার কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনে প্রয়োজনীয় সমস্ত শর্তের মধ্যে যা পূরণ করা সবচেয়ে কঠিনতম। কঠিন হলেও ১৬ কোটি মানুষের দেশে জনবলের সংকট বা দক্ষ জনশক্তির অভাব একটি কৃত্রিম সংকট। সংকটের প্রকৃত কারণকে অনুধাবন করার মধ্যেই উত্তরণ।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। সিনিয়র কনসালটেন্ট ও ল্যাব কোঅর্ডিনেটর, প্যাথলজি বিভাগ, এভার কেয়ার হাসপাতাল



[email protected]

 

/এসএএস/এমএমজে/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
মধ্যরাতে বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর সিট বাতিল
মধ্যরাতে বুয়েটে ছাত্রলীগের প্রবেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর সিট বাতিল
সীমান্তে গোলাগুলি: নাফ নদে ঘুরে গেলো মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ
সীমান্তে গোলাগুলি: নাফ নদে ঘুরে গেলো মিয়ানমারের যুদ্ধজাহাজ
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
রেলের প্রতিটি টিকিটের জন্য গড়ে হিট পড়েছে ৫ শতাধিক
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ