X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষ হলো রাজনৈতিক প্রাণী

লতিফুল ইসলাম শিবলী
১১ মার্চ ২০১৬, ১৬:১৮আপডেট : ১১ মার্চ ২০১৬, ১৬:২৪

লতিফুল ইসলাম শিবলী না থাক, আজ খেলা নিয়ে কিছু বলবো না, বলবো রাজনীতি নিয়ে। আমার পর্যবেক্ষণ বলে- মানুষ হলো রাজনৈতিক প্রাণী। মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক রাজনৈতিক। এক রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক রাজনৈতিক। এই যে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে খেলাধুলা হয়, সেটা রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণেই হয়। রাজনৈতিক সম্পর্ক নাই বলে আমরা ইসরায়েল আর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে খেলি না। প্রধানমন্ত্রী যখন স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসেন সেটা রাজনীতি আবার তিনি যখন খেলা দেখতে আসেন না সেটাও রাজনীতি। কারণ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বটাই হচ্ছে রাজনৈতিক দায়িত্ব। এই রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রীকে বেতন দেয়।
চাল ডাল গ্যাস বিদ্যুৎ পানি ট্যাক্স ইত্যাদি বাড়া কমার মধ্যে আছে রাজনীতি, তাই মানুষকে সারাটা জীবন রাজনৈতিক সংগ্রাম করেই কাটাতে হয়। এটা বোঝার পর থেকে আমি রাজনীতিকে ভালোবাসতে শুরু করেছি। আর মুসলমান হিসেবে রাজনীতিকে ভালো না বেসে উপায়ও নাই। কারণ ইসলাম একটি রাজনৈতিক ধর্ম, রাজনীতি আমার ঈমানের অঙ্গ। কীভাবে? আমাকে বিশ্বাস করতে হয় ‘ইন্নাকা আলা কুল্লে সাইয়িন কাদির’ (আল কোরআন) অর্থাৎ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ, আবার আমার রাষ্ট্র বলে ‘সভরিনটি বিলংস টু দ্য পিপলস’ (জ্যাক রুশো), অর্থাৎ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণ। আসলে সার্বভৌম ক্ষমতা কার? আল্লাহর না জনগণের এই ক্যাচালের চিপায় পড়ে আমার রাজনৈতিক জ্ঞান দিন দিন শানিত হচ্ছে। আমি ২৪ ঘণ্টা রাজনীতির মধ্যে থাকি, এমনকি আমার ঘুমও রাজনৈতিক।
লোডসেডিংয়ে ঘুম ভেঙে গেলে সরকারের প্রতি মেজাজ দেখাই, আবার ঘুমটা ভালো হলে সরকারের প্রতি প্রসন্ন হই, এটা রাজনৈতিক ঘুম ছাড়া আর কী। শুধু এটুকুই নয়, আমি চাই আমার ঘুমটা আরও শান্তির এবং নিরাপদ হোক, তাই চাই রাষ্ট্র আমার বেডরুমটা পাহারা দিক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উনি আমাদের বেডরুম পাহারা দিতে পারবেন না। সুতরাং আমার বেডরুমেরও একটা রাজনৈতিক অবস্থান আছে।
এই পৃথিবীর কারও পক্ষে রাজনীতির উর্ধ্বে ওঠা সম্ভব না। যখন কেউ বলে যে ‘খেলার সঙ্গে রাজনীতি মেশাবেন না’ একথা বলে সে আসলে একটা রাজনৈতিক স্লোগান দিল এবং তার রাজনৈতিক চিন্তা আপনার ওপরে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল। ঠিক যেভাবে বলা হয় ‘ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মেশাবেন না’। ধর্মে রাজনীতি না থাকলে অথবা রাজনীতিতে ধর্ম না থাকলে মোহতারাম নরেন্দ্র মোদি কীভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন! খেলার নিষ্পাপ বিনোদনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে নিষ্পাপ রাজনৈতিক বিনোদন। ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে খেলায় জয় পরাজয়ে যে আনন্দ বেদনা জড়িয়ে আছে সেটার সঙ্গে প্রতিশোধপরায়ণতা প্রতিহিংসা এমনকি পৈশাচিকতা অনুভূত হয় না, এমন কথা খুব কম লোকই আছে যে হলফ করে বলতে পারে। এমনটা যদি আপনার না হয় তবে বুঝতে হবে আপনি মহান এবং দেশ দুটির প্রতি আপনার নির্মোহ বা আবেগহীন নিরপেক্ষতা আছে, আপনার এই মহান নিরপেক্ষতা হলো রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা, ঠিক এই অর্থে কেউ বলতেই পারে- ‘খেলার সঙ্গে আবেগ (রাজনীতি) মেশাবেন না’।
এবার তাহলে খেলা নিয়ে একটু না বললেই নয়। বাসায় টিভি নাই বলে আমার দুই ছেলে নিয়ে বের হয়েছিলাম মহল্লার জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখার জন্য। কারণ প্ল্যান ছিল আজ (৬ মার্চ ২০১৬) ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে আমাদের দেশ জিতলে তিন বাপবেটা মিলে সারারাত হইহই করবো। কিন্তু মাঠে বাংলাদেশ টিমের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে আমি চমকে উঠলাম। (দৈনিক মানবজমিনের ভাষায় ‘এ যেন অসহায় আত্মসমর্পণ’, ৭ মার্চ ২০১৬)। আমারে নিয়া এই এক মুশকিল, আমি সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি দেখি। মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বার বার মন খারাপ দুই ছেলেকে বলেছি ‘সরি বাবা’, আর আমার দুই ছেলে আমাকে বার বার বুঝিয়েছে, ‘বাবা তুমি সরি বলছো কেন, তুমিতো আর খেলনি’। আমি জানি ওরা বড় হয়ে যখন রাজনীতি বুঝবে, আমার এই যাতনাটা তখন ঠিকই বুঝতে পারবে।



লেখক: কবি

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ