X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘জলির অভিমান বুঝতে না পারা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা’

রাবি প্রতিনিধি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৭:১৬আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৭:১৬

আকতার জাহান ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন দ্বিতীয় বর্ষে তখন জলি প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। আমি তাকে কখনও আকতার জাহান বলিনি, জলি বলতাম। সহকর্মী হওয়ার পরও প্রতিদিন আমার খোঁজ নিত-ওষুধ খাচ্ছি কিনা, কতোদিন ধরে খাচ্ছি। অন্যকোনও সহকর্মী এটা করে না। জলি শুধু যে আমার সঙ্গেই এমনটা করেছে, তা নয়। সবার সঙ্গে পেশার বাহিরে ব্যক্তি-সম্পর্ক রেখে গেছে জলি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলি স্মরণে শোকসভায় এসব কথা বলেন একই বিভাগের শিক্ষক মশিহুর রহমান। রবিবার দুপুরে বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় আকতার জাহানের বড় বোন ইসরাত জাহান বলেন, ‘আমরা দুই বোন একসঙ্গে বড় হয়েছি; পিঠাপিঠি ছিলাম তো। আমি দেশের বাহিরে ছিলাম। যাওয়ার আগে সোয়াদকে (আকতার জাহানের ছেলে) নিয়ে আলোচনা হয়েছে যে, গণিতে সে একটু দুর্বল, কিভাবে সে ভালো করবে! সন্তানকে নিয়ে যে এত উদ্বিগ্ন, সে এ ধরনের একটা...।’ আর কিছু বলতে পারেননি তিনি।

ছোট ভাই কামরুল হাসান বলেন, ‘আমার বোন মারা গেছে, তাকে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তার মৃত্যুর কারণ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে, এটাই আমি আশা করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম বলেন, ‘আমরা তার (আকতার জাহান) অভিমান বুঝতে পারিনি, এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। এ মৃত্যুতে কোনও প্ররোচনাকারী থাকলে তার বিচার চাই। তিনি শুধু আকতার জাহানকে হত্যা করেননি, তার স্বপ্নও হত্যা করেছেন।’

বিভাগের আরেক শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, ‘আমি তাকে জলি হিসেবেই সবসময় হাসিখুশি দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। কী পরিস্থিতি তৈরি হলে একটা মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে, তা আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। কোনও মানুষ একবারে একাকি না হলে আত্মহত্যার দিকে যেতে পারে না। আমরা জলির মৃত্যুর দায় এড়াতে পারি না।’

বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে বলেন, ‘জলি আপার মৃত্যু আমাকে দুই ভাবে বিধ্বস্ত করেছে। ব্যক্তি হিসেবে আর বিভাগের সভাপতি হিসেবে। দায়টা আমার একটু বেশি। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছি।’

তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রতিটা ক্ষেত্রে সবাইকে আগলে রেখেছিলেন তিনি, যেমনটা মা করতেন। মেয়েদের বলতেন, স্বার্থপর হও, নইলে টিকতে পারবে না।’

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জোবায়দা শিরিন জ্যোতি বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীরা খরচ চালাতে পারে না, ম্যাম তার বেতনের একটা অংশ ওই শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ব্যয় করতেন। ম্যাম কখনও মচকাননি, তাকে ভেঙ্গে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা বিচার চাই।’

ড. প্রদীপ কুমার পান্ডের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া, মহিলা পরিষদ রাবি শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাধুরী রায় চৌধুরী প্রমুখ। সভায় আকতার জাহানকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এর আগে সাড়ে ১১টায় বিভাগের সামনে থেকে একটি শোকর‌্যালি বের হয়।

গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনের নিজ কক্ষ থেকে আকতার জাহানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মতিহার থানায় একটি মামলা হয়েছে।

/এআরএল/

আরও পড়ুন: 

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে অটোরিকশা চালকদের যত ফন্দি


সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিহত বৈমানিক আসিম জাওয়াদের পরিবারের সাক্ষাৎ
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিহত বৈমানিক আসিম জাওয়াদের পরিবারের সাক্ষাৎ
দাঁড়িয়ে থাকা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন
দাঁড়িয়ে থাকা যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝরনায় ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝরনায় ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
এই দিনে ফিরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা
এই দিনে ফিরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
এডিপি: সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে যে ১০ প্রকল্প
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়