X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষায় মা, পুড়ে মরলেন শিকলবাঁধা মানসিক প্রতিবন্ধী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
১৩ আগস্ট ২০১৮, ০৫:২২আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০১৮, ০৫:৩৪

চট্টগ্রামে বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড

হাত খোলা থাকলেই নিজেকেই নিজে মারধর করতেন। পিটিয়ে নিজের মাথা নিজে রক্তাক্ত করতেন। খামছে দিতেন সামনে থাকা লোকজনকে। ছেলের এমন অস্বাভাবিক আচরণে তাকে ঘরে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন মা। নিজেকে নিজে পিটিয়ে যেন আহত করতে না পারে ছেলে, সেজন্য তার হাতে লাগিয়ে দিয়েছিলেন লোহার শিকল। মায়ের লাগানো এই শিকলই কাল হলো রবিউলের। শিকলে বাঁধা থাকায় রবিবার (১২ আগস্ট) সকালে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার।

রবিউলের (৩০) গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলায়। ছোটবেলা থেকেই রবিউল মায়ের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীতে থাকতেন। রবিবার (১২ আগস্ট) সকালে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন ফরিদারপাড়ার খন্দকার কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দগ্ধ হয়ে শিকলে হাত বাঁধা অবস্থায় রবিউলের মৃত্যু হয়। এসময় তার মা ফাতেমা বেগম ভিক্ষা করতে গিয়েছিলেন।

রবিবার দুপুরে খন্দকার কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন মা ফাতেমা বেগম। প্রতিবেশী আরও কয়েকজন মহিলা তাকে ঘিরে বসে আছেন।  ছেলেকে হারানোর কষ্ট কাটিয়ে উঠতে ফাতেমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন ওই মহিলারা।

মানসিক প্রতিবন্ধী রবিউলের মা ফাতেমা বেগম

সামান্য অদূরে রাস্তার পাশে রবিউলের লাশ রাখা হয়েছে। মরদেহ সমাহিত করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় কিছু যুবক। লোকজনের কাছ থেকে টাকা তুলে তার দাফনের ব্যবস্থা করছেন তারা।

রবিউলের প্রতিবেশী ইমরান বলেন, ‘আমার আর তার বয়স কাছাকাছি। ছোটবেলা থেকেই আমি তাকে চিনতাম। ছোট বেলায় সে আমাদের মতো স্বাভাবিক ছিল। মানসিক অসুস্থতার আগে রবিউল রিকশা চালাতো, যখন যে কাজ পেতো করতো। কয়েক বছর আগে হঠাৎ সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এরপর সে বাসা থেকে বের হয়ে যেতো, মানুষকে মারধর করতো। নিজেকে নিজে মারধর করতো। এ কারণেই তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিকল ভেঙে রবিউল দুই-তিন বার পালিয়ে গেছে। এরপর তার মা অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে ফিরিয়ে আনেন।’

একই কথা জানান রবিউলের পাশের ঘরের বাসিন্দা ময়না। প্রতিবেশী এই নারী বলেন, ‘রবিউল অনেক সময় তার মায়ের গলা টিপে ধরতো। তখন তিনি লাঠি নিয়ে গিয়ে ছাড়াতেন। তার পাশে একটি বালতি রাখতেন তার মা, ওই বালতিতে সে প্রাকৃতিক কাজ সারতো। পরে তার মা এসে এগুলো পরিষ্কার করতেন। তাকে গোসল করাতেন।’

রবিউলের বিষয়ে জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফাতেমা বেগম বলেন, ‘হাত খোলা থাকলে রবিউল নিজেকে নিজে চড়-থাপ্পর দিতো। মাথায় আঘাত করতো, মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করে ফেলতো। মানুষকে খামছে ধরে মারধর করতো। এসব কারণে হাতে শিকল পরিয়ে রাখতাম।’

চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘শিকলে বাঁধা থাকার কারণেই আজ আমার ছেলে আগুনে পুড়ে মারা গেছে।’

ফাতেমা বলেন, ‘একবেলা হাতে শিকল দিয়ে রাখতাম। দুপুর ১টার দিকে ভিক্ষা থেকে এসে গোসল করিয়ে ভাত খাওয়ানোর পর হাত ছেড়ে দিয়ে পা বেঁধে রাখতাম। বেঁধে না রাখলে বাসা থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়। এ কারণে বেঁধে রাখতাম।’

কবে থেকে রবিউল এমন আচরণ করেন জানতে চাইলে ফাতেমা বেগম বলেন, ‘২০০৭ সালের দিকে রবিউলের মাথায় সমস্যা দেখা দেয়। এরপর থেকে সে এমন আচরণ করতে শুরু করে। কাউকে দেখলে ডাক দিয়ে তার কাছ থেকে সিগারেট চাইতো।’

ফাতেমা বলেন, ‘মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা এনে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, কোনও লাভ হয়নি। কত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছিলাম, তাতেও কোনও ফল হয়নি। বিয়ে করলে মাথা ঠিক হয়ে যাবে ভেবে তাকে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। বিয়ের সাত মাস পর রবিউলের স্ত্রী তাকে রেখে চলে যায়।’

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ এপ্রিল, ২০২৪)
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি
সর্বাধিক পঠিত
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই