রাজশাহীর বাঘায় ট্রেনের নিচে পড়ে দুই পা হারালেন রেলস্টেশনের ফুটপাতে ভাত বিক্রেতা বুলু বেওয়া (৬৫)। কোলে থাকা সাড়ে তিন বছরের নাতনি রাবেয়া খাতুন অক্ষত রয়েছেন। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আড়ানী রেল স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত বুলু বেওয়া আড়ানী নুরনগর গ্রামের মৃত রব্বেল আলীর স্ত্রী।
আড়ানী নুরনগর গ্রামের বুল বেওয়ার প্রতিবেশী বজলুর রহমান বলেন, ‘বুলু বেওয়া আড়ানী রেলস্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাতে ভাত ও খিচুড়ি বিক্রি করেন। শনিবার সকালে রেললাইন পার হয়ে প্ল্যাটফার্মের ওপর নিজ দোকানে আসছিলেন। সে সময় ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী কমিউটার ট্রেনও চলে আসে। ওই ট্রেনের ধাক্কায় চাকার নিচে পড়ে দুটি পা কাটা পড়ে তার। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে আড়ানী স্টেশনে আরেক ভাতের হোটেল মালিক মোস্তাকিন হোসেন বলেন, ‘সকালে ৩ নম্বর লাইনে কোনও ট্রেনে আসে না। তাই নাতনিকে কোলে নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছিলেন বুলু। কিন্তু ওই লাইনেই চলে আসে ট্রেন। নাতনিকে কোলে নিয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে যান তিনি। এতে তার দুই পা হাঁটুর উপর থেকে কেটে গেছে। তবে কোলে থাকা শিশুর কিছু হয়নি।’
বুলু বেওয়ার বাড়ি আড়ানী স্টেশন সংলগ্ন নুরনগর গ্রামে। তার স্বামী প্রায় ২০-২২ বছর আগে মারা গেছেন। এরপর তিনি স্টেশনের ফুটপাতে ভাত ও খিচুড়ি বিক্রি করে ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন।
ছেলে জুয়েল রানা শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমান মা রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
জুয়েল আরও বলেন, ‘বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে এসে স্টেশনে ভাত-খিচুড়ি বিক্রি করে আমাদের আট ভাই-বোনকে মানুষ করেছেন মা। আমি মায়ের সঙ্গে কাজে সহযোগিতা এবং বিকালে এখানে চা বিক্রি করি।’
এ বিষয়ে বুলু বেওয়ার ছেলে রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমার বড় ভাই সোহেল রানার মেয়ে রাবেয়া খাতুনকে কোলে নিয়ে রেললাইন পার হচ্ছিলেন মা। সে সময় ট্রেনের ধাক্কায় মায়ের দুই পা কাটা পড়লেও ভাতিজির কিছুই হয়নি। এদিকে আমি শুক্রবার রাতে বিয়ে করেছি। বাড়ি নতুন আত্মীয়রা আসবেন। তাই শনিবার দোকান খোলা হয়নি। বিশেষ কাজে মা নাতনিকে কোলে নিয়ে দোকানে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’
আড়ানী স্টেশন মাস্টার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী ও ঢাকার মধ্যে বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহী থেকে আসতে দেরি করে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে ট্রেনটি আড়ানী স্টেশন ছেড়ে যায়। ট্রেনটি বিলম্বের কারণে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনকে আড়ানী স্টেশনে রেখে বনলতাকে পার করতে হবে বলে নির্দেশনা আসে। একই সময়ে ঈশ্বরদী থেকে কমিউটার ট্রেন আড়ানী স্টেশনে পৌঁছাবে। এই জন্য সিল্কসিটিকে ১ নম্বরে, বনলতার জন্য ২ নম্বর লাইন ফাঁকা রেখে কমিউটারকে ৩ নম্বর লাইনে নেওয়া হয়। সাধারণত কোনও ট্রেন ৩ নম্বরে নেওয়া হয় না। এজন্য সকালে কয়েক দফা মাইকে ঘোষণা করা হয়, যে কমিউটার ট্রেনটি ৩ নম্বর লাইনে ঢুকছে। তারপরও এক নারী রেললাইন পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।’
