ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার পর এলাকায় শান্তি-সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে বাউল গানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতভর নাসিরপুর গ্রামের হরি মন্দিরে বাউল গানের আসর চলে। সুরের মূর্ছনায় গানে গানে অসুরের ভয়াল থাবা ভুলে যেতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার সব সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
জেলা পুলিশ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বাউল গানের আয়োজন করা হয়। আয়োজকরা জানান, বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতিরই অংশ বাউল, জারি-সারি, ভাটিয়ালি গান। এসব গান প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় এবং প্রাণের উৎসব। অতীতের সব হিংসা, হানাহানি এবং ভেদাভেদ ভুলে সারাদিনের কর্মযজ্ঞ শেষে গত রাতে নাসিরনগরের হরি মন্দিরে বসে বাউল গানের আসর। এই আসরে সব ধর্ম-বর্ণের সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সুরের মূর্ছনায় অতীতের হিংসা-বিদ্বেষকে ভুলে আগের মতো আবারও সহ-অবস্থানে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন গ্রামের মানুষেরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনাথ বন্ধু দাস এবং অরুণ জ্যোতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিরই অংশ বাউল, জারি-সারি, ভাটিয়ালি গান। এসব গানের মধ্য দিয়ে আমাদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে। অসুর শক্তি বিনাশ হবে। অতীতের কালিমা মুছে আবারও নতুন সূর্য উদিত হবে এটাই প্রত্যাশা।’
অংশগ্রহণকারী বাউল শিল্পী দূর্গাচরণ দাস এবং রাধু ঠাকুর জানান, সুরের মাধ্যমেই মানুষকে কাছে টানা সম্ভব পাশাপাশি, অসুরের ভয়াল থাবাকেও রুখে দেওয়া সম্ভব।
জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী জানান, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী গানের উৎসব বাউল গানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সব ভেদাভেদ ভুলে নাসিরনগরের মানুষ আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা প্রশাসনের।
নাসিরনগরের প্রত্যন্ত এলাকা নাসিরপুর গ্রামের হরি মন্দিরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় বাউল গানের আসর শুরু হয়। চলে রাত ৩টা পর্যন্ত। এতে এলাকার খ্যাতিমান বাউল শিল্পীসহ অন্তত দুই হাজার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে গত ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১০টি মন্দিরসহ হিন্দুদের শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। পিটিয়ে আহত করা হয় বেশ কয়েকজনকে। এ ঘটনায় মোট ৮টি মামলা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ১০২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
/বিটি/আপ-এমও/