X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্প কারখানার গাড়ির দখলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২০ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:৫৮আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৮, ০৮:৫২

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড এলাকায় এভাবেই সড়ক দখল করে রাখে কারখানার গাড়ি বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সংযোগ সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছিল যানজটের আরেক নাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই মহাসড়কে বাস-ট্রাক-লরি-কাভার্ড ভ্যানের ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকাই যেন ছিল নিয়তি। এই পরিস্থিতি থেকে মানুষকে নিষ্কৃতি দিতে চার লেনে উন্নীত করা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কিন্তু মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার গাড়িতেই দখল হয়ে যাচ্ছে সড়কের একাংশ। এছাড়া, মহাসড়কেই চলে পণ্য ও কাঁচামাল লোড-আনলোডের কাজ। তাতে করে এখন সীতাকুণ্ড এলাকা পার হতে গেলেই যানজটের কবলে পড়ে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে বহুল কাঙ্ক্ষিত চার লেন বাস্তবায়িত হলেও তার সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, শিল্প কারখানাগুলোর পণ্য ও কাঁচামাল পরিবহনকারী গাড়ির পার্কিংয়ে দখল হয়ে থাকে সড়কের একপাশ। শুধু তাই নয়, কারখানাগুলোর কাঁচামাল ও পণ্য লোড-আনলোডের কাজও অনেক সময় চলে সড়কের ওপরেই। নিয়ম না থাকলেও থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করে এভাবে পার্কিং ও লোড-আনলোডের কাজ কারখানাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারখানার গাড়িতে সড়ক দখলের বিষয়টি মেনে নিলেও ‘ম্যানেজ’ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের বারো আউলিয়া পোস্টের পরিদর্শক আহসান হাবিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিল্প কারখানাগুলো নিজস্ব ট্রাক স্ট্যান্ড নেই। তাদের অধিকাংশ গাড়ি সড়কে ডাম্পিং করে রাখা হয়। এ কারণেই মূলত মহাসড়কের এই অংশে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।’
সড়ক দখলে রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে এই পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের নিজস্ব ট্রাক স্ট্যান্ড করতে বলেছি। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হচ্ছে না। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান ট্রাক স্ট্যান্ড তৈরির আশ্বাস দিলেও কেউই তা বাস্তবায়ন করেনি।’ তবে টাকা নিয়ে পার্কিংয়ের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
মহাসড়ক যেন কারখানার গাড়ির পার্কিং লট আহসান হাবিব আরও বলেন, ‘নিজস্ব ট্রাক স্ট্যান্ড না থাকলেও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদ দিয়েছে সরকার। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়ার জন্য যেসব শর্ত আছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয় সেগুলো মেনে অনুমোদন দিলে সড়কে এই যানজট থাকত না। প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ট্রাক স্ট্যান্ড থাকলে তখন তাদের আর সড়কে ডাম্পিং করতে হতো না।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিটি গেট থেকে কুমিরা পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে রয়েছে অর্ধশতাধিক বৃহৎ শিল্প কারখানা। এগুলো গড়ে উঠেছে গত কয়েক বছরে। এসব কারখানার মধ্যে কবির স্টিল রি-রোলিং মিল, জিপিএস ইস্পাত কারখানা, বিএসআরএম স্টিল মিল, কনফিডেন্স সিমেন্ট কারখানা, কেডিএস লজিস্টিক কন্টেনার ডিপো, আবুল খায়ের স্টিল মিলস, পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানা, মোস্তফা হাকিম সিমেন্ট কারখানা উল্লেখযোগ্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে চার লেন সড়কের দু’পাশের বেশিরভাগ অংশই দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন কারখানার কন্টেইনার মুভার, লরি, কাভার্ড ভ্যান ও পণ্যবাহী ট্রাক। এছাড়া এসব কারখানার পণ্য ও কাঁচামাল আনা-নেওয়ার জন্য গাড়িগুলো কারখানায় ঢোকা ও বের হওয়ার সময়ও সড়কের বড় একটি অংশ দখল হয়ে যায়। এসময় রাস্তার উভয়দিকে যানচলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পণ্য ও কাঁচামাল আনা নেওয়ার জন্য কবির স্টিল মিলে একশটিরও বেশি ট্রেলার, প্রায় ৫০টি ট্রাক ও ৫০টি ডাম ট্রাক রয়েছে। এসব গাড়ি রাখার জন্য নিজস্ব কোনও ট্রাক স্ট্যান্ড নেই ওই কারখানায়। পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা এসব গাড়ি মহাসড়কের ওপর পার্কিং করেন। একই অবস্থা বিএসআরএম, আবুল খায়ের স্টিল মিল, জিপিএইচ ইস্পাতেরও। এই তিনটি কারখানাতে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয় চার থেকে পাঁচশ গাড়ি। এসব গাড়িগুলোও সড়কে পার্কিং করা হয়।
কারখানার গাড়ি বের হওয়ার সময় এভাবেই দুই পাশের রাস্তা আটকে রাখা হয়, তৈরি হয় যানজট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেএসআরএম কারখানার পরিবহন সেক্টরের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কে পার্কিং করার জন্য থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। টাকা না দিলে পুলিশ অভিযান চালায়, ঝামেলা করে।’
তবে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাস্তায় এলোমেলো করে গাড়ি পার্কিং না করার জন্য আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের চিঠি দিয়েছি। ইউএনও ও এসি ল্যান্ডকে নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করা হয়েছে। তারপরও গাড়িগুলো সড়কে পার্কিং করে রাখা হয়। মাঝে মধ্যে আমরা গাড়িগুলো ডাম্পিংয়ে নিয়ে রেখেছি, অনেক কিছুই করেছি। তারপরেও তাদের এই প্রবণতা বন্ধ হয়নি। তারা কোনও আইনই মানে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আইনিভাবে যা কিছু করা সম্ভব, আমরা তার সবই করি। তারপরও তারা সড়কে গাড়ি রাখছে। গাড়ি সংখ্যা বেশি, রাখার জায়গা নেই— এসব বলে তারা সড়কেই পার্কিং করছে। টাকা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
যানজট নিরসনে এসব প্রতিষ্ঠানের গাড়িগুলো সড়ক থেকে সরানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি ইফতেখার বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এলেই কেবল এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। অন্যাথায় এই প্রবণতা দিনের পর দিন চলতে থাকবে, যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হবে।’
আরও পড়ুন-
খুনের মামলার সালিসে বসে আরেক খুন!

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া চালাবে রাশিয়া
কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রের মহড়া চালাবে রাশিয়া
প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলছে কাল
প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলছে কাল
আরও ২-৩ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবে সুন্দরবনের আগুন লাগা এলাকা
আরও ২-৩ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবে সুন্দরবনের আগুন লাগা এলাকা
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা চালাতে ওআইসির সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা চালাতে ওআইসির সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?