X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

নদীতে চলছে ট্রাক

জসিম উদ্দিন মজুমদার, খাগড়াছড়ি
২৪ মে ২০২১, ১০:৫০আপডেট : ২৪ মে ২০২১, ১০:৫০

নদীতে থাকার কথা পানি, মাছ ও জলজ প্রাণীর। চলার কথা নৌকাসহ বিভিন্ন জলযানের। কিন্তু যা থাকার তা নেই, যা চলার তাও চলছে না। চলছে বালু তোলার ট্রাক। মাটি, বালু আর ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে খাগড়াছড়ির তিন নদী। নদীগুলো খনন করে প্রকৃত চেহারায় ফিরিয়ে আনার দাবি খাগড়াছড়িবাসীর। দাবির প্রেক্ষিতে আশ্বাস দিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

খাগড়াছড়ি পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলায় চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনী নামের তিনটি নদী রয়েছে। ফেনী নদীটি বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত নদী হিসেবেই পরিচিত। একসময় এই তিন নদীই ছিল যোগাযোগের মাধ্যম। চলতো বাণিজ্যিক নৌকাসহ নানা জলযান। নদী থেকে চাহিদা মেটানো হতো পানি ও মাছের। নদীতে ছিল নানা জলজপ্রাণী। কৃষিতে সেচের সিংহভাগ পানির যোগান দিতো এই তিন নদী। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ তিনটি নদী মরুময়। পানি নেই বললেই চলে। বালু, মাটি আর ময়লার ভাগাড় তিন নদীর তলদেশ। নদীগুলোর সর্বত্র মাথা তুলেছে বালুচর, মাটির চর আর ময়লার ডিপো। নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার বা জলযানের পরিবর্তে চলছে বালু তোলার ট্রাক। নদীর তলদেশে গজে উঠেছে ঘাস। চরে বেড়াচ্ছে গরু ও ছাগল। পুরো বছরে দুই মাসও থাকে না পানি।

ট্রাক চলছে নদীতে খাগড়াছড়ি জেলার গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান মো. জাফর উল্ল্যাহ বলেন, ‘এই নদীতে একসময় লঞ্চ, স্টিমার চলতো। ব্যবসা-বাণিজ্য নৌপথে চলতো। জেলেরা মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো। কৃষকেরা নদীর পানি দিয়ে সেচ দিতো। পরিবারের দৈনন্দিন কাজে নদীর পানি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এসব আর দেখা যায় না। এখন নদীর বুকে বালু তোলার ট্রাক চলছে। খননের মাধ্যমে নদীটি পুরনো চেহারা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

খাগড়াছড়ি সদরের গঞ্জপাড়া এলাকার মো. নুরুল আলম বলেন, ‘আগে নদী অনেক গভীর ছিল। বর্তমানে বালুতে ভরাট হওয়ায় নদীর গভীরতা কমেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। নদীর পাড় ভেঙে যায়। ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে যায়। গত দশ বছরে আমার এলাকার প্রায় ১০০ পরিবার বাড়ি-ঘর হারিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর হয়েছে।’ দুর্ভোগ লাগব করতে নদীগুলো খননের দাবি জানান তিনি।

ট্রাক চলছে নদীতে দিঘীনালা উপজেলার কবাখালী এলাকার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আগে দিঘীনালা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যেতে নৌকা লাগতো। এখন মাইনী নদী ভরাট হয়ে গেছে। কোথাও নৌকায় যাওয়া যায় না। নিত্য প্রয়োজনীয় গোসল ও রান্নার কাজে আগে নদীর পানি ব্যবহার করলেও এখন তা সম্ভব নয়। যে যতসামান্য পানি আছে, তা ময়লার ভাগাড়। গায়ে লাগলেই চুলকানি শুরু হয়। রান্নার কাজে লাগালে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে হয়।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আফসার বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে নদী ভরাটের বিষয়টি সত্য। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বিষয়ে কাজ করেছে। চেংগী ও মাইনী নদীর ওপর জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এই দুই নদীকে পূর্বের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে খাগড়াছড়ির দিঘীনালার পাশাপাশি রাঙামাটির নানিয়ার চর, মহালছড়ি, দাঁতকুপিয়া, কমলছড়ি হয়ে নদী খনন, চর কাটিং,

একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করার জন্য প্রায় ৬৪০ কোটি টাকার কাজের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। চলমান মহামারি করোনার কারণে বাস্তবায়নে একটু সময় লাগছে। তবে অচিরেই এসব কাজ সম্পন্ন করে নদী শাসনের মাধ্যমে খাগড়াছড়িবাসীর জীবন-জীবিকাসহ সব ক্ষেত্রে পানি সমস্যার সমাধান করা হবে।’

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৪)
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে