X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউএনওর প্রচেষ্টায় রঙিন ঘর পেলো ওরা

আবদুর রহমান, টেকনাফ
১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৩৫আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৩৫

সত্তর বছরের নুর নাহারের জীবন কেটেছে বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে। জীবনের দীর্ঘ এই পথচলায় তার পাশে কেউ ছিল না। নিজের একটি ঘরের স্বপ্ন দেখেননি কোনোদিন। একদিন জানতে পারলেন, তিনি পেয়েছেন ‘রঙিন ঘর’।

টেকনাফ বাহারছড়ার চৌকিদার পাড়া গ্রামের একটি ঝুপড়ি ঘরে এক মেয়ে ও নাতনিকে নিয়ে কষ্টের জীবন পার করছিলেন নুর নাহার। সম্প্রতি চৌকিদার পাড়া পরিদর্শনের সময় অসহায় লোকজনের দুরাবস্থা দেখে তাদের বাড়ি করে দেওয়ার উদ্যোগ নেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী। তার প্রচেষ্টা ও রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায় ২৭টি পরিবার পেয়েছে ‘রঙিন ঘর’।

এলাকায় ৪০টি পরিবারের বাকিদেরও ‘রঙিন ঘরের’ আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। ঘরগুলো বাস্তাবায়নে সহায়তা করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

মেরিন ড্রাইভ ঘেঁষা রঙিন ঘরে বসে নুর নাহার জানান, স্বপ্ন ছিল নিজের বাড়িতে পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দে দিন কাটাবেন। দীর্ঘ জীবনে তা সম্ভব হয়নি। তার স্বপ্নপূরণে মেয়ে শামসুন নাহার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছিল অন্যের জমিতে। তাতে যা আয় হতো সেটা সংসারের খরচেই চলে যেতো।

ইউএনওর প্রচেষ্টা ও এনজিওর সহায়তায় ২৭টি পরিবার পেলো রঙিন ঘর

টেকনাফ শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চৌকিদার পাড়া গ্রামে পা রাখতেই দেখা যাবে নারিকেল গাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে গড়ে উঠেছে রঙিন টিন সেডের ঘর। আগে থেকে দুই-একটি পরিবারের অবস্থা ভালো হলেও বাকিদের অবস্থা ছিল বেশ খারাপ। এদের অধিকাংশই মাছ ধরে ও অন্যের জমিতে কাজ করে। বাঁশ-চাটাইয়ের বেড়ার ঘরে মানবেতর দিন কাটছিল তাদের। শীতের রাতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঢুকতো কণকণে ঠান্ডা বাতাস। একপর্যায়ে অসহায় ২৭টি পরিবারের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন ইউএনও পারভেজ চৌধুরী।

এখন ‘রঙিন ঘরে’ সুখে আছেন ইয়াছমিন আক্তার। স্বামী জসিম উদ্দিনের মাছ শিকার ও নিজের কাজের আয়ে দুই সন্তান নিয়ে ইয়াছমিনের সংসার চলছে ভালোই। চকচকে রঙিন ঘরে ফুটফুটে আট মাসের সন্তান ইমরানকে নিয়ে ইয়াছমিনের স্বপ্ন এখন বহুদূর।

ইয়াছমিন বলেন, ‘সংসারের ঘানি টানতে স্বামীর পাশাপাশি নিজেও সেলাইয়ের কাজ শুরু করি। স্বপ্ন দেখেছিলাম ভিটেমাটি যোগাড় করে পাকা ঘর নির্মাণের। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। ইউএনও স্যারের উদ্যোগে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’

ঘর পেয়েছেন আহমদ করিম (৩৭), অনুর কবির (৫০) ও নুরুল ইসলাম (৫৫)। এরা সবাই অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন।

নুরুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ‘২৩ বছরের সংসার। এখন আমি আর আমার স্ত্রী বলতে পারি নিজের একটি বাড়ি আছে।’

আট মাসের সন্তানকে নিয়ে ইয়াছমিনের স্বপ্ন এখন বহুদূর

টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন জানান, ‘চৌকিদার পাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘরগুলো পরিদর্শনে আসেন ইউএনও পারভেজ চৌধুরী। এসময় সেখানকার আরও অনেক পরিবারের দুর্ভোগের বিষয়টি নজরে আসে তার। এরপর তাঁর প্রচেষ্টা ও এনজিওর সহায়তায় ২৭টি পরিবার রঙিন ঘর পায়।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী জানান,‘ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রদানকালে আরও কিছু অসহায় মানুষ পাকা ঘর চেয়ে জড়ো হন। এসময় তাদের কষ্ট চোখে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় ২৭টি পরিবারকে রঙিন ঘর দেওয়া হয়। আশা করি এমন উদ্যোগ দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসবে।’

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ এক সদস্য গ্রেফতার
‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের’ এক সদস্য গ্রেফতার
বিশ্বসাহিত্যের খবর
বিশ্বসাহিত্যের খবর
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
দেশজুড়ে এমপিরাজ শুরু হয়েছে: রিজভী
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের