X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চার ছেলেই পঙ্গু, কাজ করতে পারেন না বাবাও

জসিম উদ্দিন মজুমদার, খাগড়াছড়ি
২১ জানুয়ারি ২০২২, ২০:০৩আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ২০:১৪

নিংপ্রু চাই মারমা ও আরেমা মারমা দম্পতির এক মেয়ে ও চার ছেলে। খাগড়াছড়ির মহালছড়ির উপজেলার প্রত্যন্ত চৌংড়াছড়ির রোয়াজাপাড়া গ্রামে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট ঘরে তাদের বাস। কোনোরকমে দিন চলে যায়। এর মধ্যে অভাবের সংসারে চার ছেলেই পঙ্গু। নিংপ্রু মারমা নিজেও দুর্ঘটনার পর কাজ করতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে চরম বিপদে পড়েছে পরিবারটি।

সরেজমিন দেখা যায়, বাঁশের বেড়ার একটি ছোট ঘরে তারা বসবাস করে। সেটারও জায়গায় জায়গায় ভাঙা। শীতে ঘরে বাতাস ও কুয়াশা অনায়াসে ঢুকতে পারে। অভাবের সংসার হলেও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে সুখী ছিলেন নিংপ্রু মারমা ও আরেমা মারমা। সন্তানরা বেড়ে উঠছিল স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু ছেলেদের বয়স ৮ থেকে ১০ বছর হওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে।

প্রথম ছেলে উচিমং মারমার বয়স যখন আট বছর, তখন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর মহালছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পর ভালো হয়ে ওঠে। পরে হঠাৎ করে অজ্ঞাত রোগে ধীরে ধীরে হাত-পা শুকিয়ে যায়। দ্ররিদ্র বাবা নিংপ্রু মারমা ছেলেকে কয়েকবার মহালছড়িতে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু পরে আর ভালো হয়ে ওঠেনি। এমনি করে আরও তিন সন্তানের একই অবস্থা হয়। বর্তমানে তার ছেলে উচিমং মারমা (১৮), থুইচানু মারমা (১৫), থুইসাচিং মারমা (১২) ও সুইসাচিং মারমা (৯) সবাই অসুস্থ। এক দুঘর্টনায় আঘাত পেয়ে নিংপ্রু মারমাও কাজ করতে পারেন না। তিনিও পঙ্গু হওয়ার পথে। এই অবস্থায় পরিবারটি নিঃস্ব হওয়ার পথে। 

বাঁশের বেড়ার ঘরে নিংপ্রু চাই মারমা ও আরেমা মারমা দম্পতির বাস

নিংপ্রু মারমা বলেন, দুই ছেলে আগে পঙ্গু হয়েছে। পরে আরও দুই জনও পঙ্গু হয়ে গেছে। নিজের কোনও জায়গা-জমি নেই। সরকারি খাস জায়গায় থাকেন। সরকারের সহযোগিতায় কোনোরকমে বেঁচে আছেন। কিন্তু নিজে করতে পারেন না। সংসারেও লোক কম নয়। তাই পরিবারের জন্য সরকারের কাছে আরও সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। 

আরেমা মারমা বলেন, তাদের পরিবারের ছয় জনের মধ্যে তিনি ছাড়া সবাই অসুস্থ। খুব কষ্টে আছেন তারা। নিংপ্রু চাকমাও কাজ করতে পারেন না। প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়ে চলছে সংসার। তিনি সরকারের কাছে চিকিৎসা ও আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। 

রোয়াজাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মংচিং উ মারমা বলেন, নিংপ্রু মারমার ছেলেরা তাদের স্কুলে পড়তো। তারা অসুস্থ পড়ায় স্কুলে আসতে পারেনি। নিরূপায় হয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

পরিবারের ছয় সদস্যের ৫ জনই পঙ্গু

আরেক সহকারী শিক্ষক বসুদেব চাকমা বলেন, এক পরিবারের প্রায় সবাই কর্মহীন। এলাকাবাসী তাদের দেখে কিন্তু, কত আর দেখা যায়? তাদের জন্য স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

জেলার প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকতা মো. শাহাজাহান বলেন, তারা যখন প্রথম আসে, তখন চিকিৎসা করিয়েছেন। তারা নিয়মিত আসতে না পারায় দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের রোগ বিরল। সিভিল সার্জনসহ মেডিক্যাল টিম গঠন করে চিকিৎসা করা হয়, তাহলে হয়তো রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে।

খাগড়াছড়ির ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মিটন চাকমা বলেন, বিষয়টি আগে জানা ছিল না। যেহেতু অবগত হয়েছেন, তারা শিশু ও মেডিসিন বিশেজ্ঞ চিকিৎসকের সম্বনয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা