X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘যদি বিচার না পাই আত্মহত্যা করবো’

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
১৫ মে ২০২২, ২০:৫৬আপডেট : ১৫ মে ২০২২, ২০:৫৬

এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চট্টগ্রামের পটিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা জিতেন কান্তি গুহ। তাকে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়। এ ঘটনার বিচার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জিতেন। তবে বিচার না পেলে আত্মহত্যা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এরই মধ্যে ঘটনার মূলহোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিদের গ্রেফতারের দাবিতে চলছে প্রতিবাদ সভা ও সমাবেশ। প্রশাসন বলছে, মামলার এজাহারনামীয় বাকি আসামিরা আত্মগোপনে চলে গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। 

গত ২৯ এপ্রিল পটিয়া উপজেলার পূর্ব হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গাউছিয়া কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় সংসদের হুইপ ও পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী উপস্থিত থাকার কথা ছিল। ওই দিন বিকাল ৩টার দিকে স্থানীয় চেয়ারম্যান বিএম জসিম অনুসারীদের নিয়ে ইফতার মাহফিলস্থলে যান। সেখানে উপস্থিত জিতেন কান্তির কাছে জানতে চান, কেন জসিমকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি এবং মাহফিলের ব্যানারে নাম রাখা হয়নি। এ নিয়ে জিতেনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় জসিমের।

আরও পড়ুন: ইফতার অনুষ্ঠানের ব্যানারে নাম না থাকায় আ. লীগ নেতাকে গাছে বেঁধে মারধর

এরপর খুলে ফেলা হয় ইফতার মাহফিলের ব্যানার। চেয়ার-টেবিল ছুড়ে ফেলে পণ্ড করে দেওয়া হয় মাহফিল। সেই সঙ্গে জিতেনকে মারধর করা হয়। পরে পোশাক খুলে কমিউনিটি সেন্টারের সামনের একটি গাছে বেঁধে আরেক দফায় মারধর করা হয়। এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জিতেন হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এছাড়া তিনি দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সম্পাদক।

হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জিতেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের পাঁচতলার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন তিনি।

রবিবার (১৫ মে) সকালে বাংলা ট্রিবিউনকে জিতেন বলেন, ‘আমার হাতে অপারেশন হয়েছে। মাথায় করা সেলাই শনিবার কাটা হয়েছে। এখনও বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, শরীর দুর্বল। কখন সুস্থ হতে পারবো, তা বলতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘আমার ওপর যারা হামলা করেছে তাদের মধ্যে মামলায় এজাহারনামীয় সাত জনের মধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনও সাকিব, রবিউলসহ অন্যদের গ্রেফতার করা হয়নি। বাইরে থাকা আসামিরা আমাকে এবং পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আমি পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

আরও পড়ুন: পটিয়ার সেই আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখতে গেলেন আমিন

জিতেন আরও বলেন, ‘কোনও কারণ ছাড়াই ইফতার মাহফিলে দাওয়াত না দেওয়া ও ব্যানারে নাম কেন রাখা হয়নি এমন অজুহাতে ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে আমাকে মারধর করেছে জসিম। এমনকি চেয়ারম্যান জসিম আমার হাত কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে। যেভাবে তারা হামলা করেছে মনে করেছিলাম আর বেঁচে ফিরবো না। এই হামলা আমার জন্য অপমানজনক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দিলাম। যদি বিচার না পাই তাহলে আত্মহত্যা করবো।’

এদিকে, গত ২ মে আহত জিতেনকে হাসপাতালে দেখতে গেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনসহ একাধিক নেতাকর্মী।

এ সময় তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা জিতেন কান্তি গুহের ওপর হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক। দলের নাম ভাঙিয়ে যারা দলের পরীক্ষিত নেতাদের নিগৃহীত করে এমন দুর্বৃত্তদের জায়গা আওয়ামী লীগে নেই। জিতেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আজকের পর্যায়ে এসেছেন। তার ওপর যে হামলা হয়েছে, সেটি শুধু নিন্দনীয় নয়, এটি জঘন্য। যারা হামলা করেছে তারা দল থেকে বহিষ্কৃত। আমাদের দলের সমস্ত নেতাকর্মী জিতেনের সঙ্গে আছে। এই ধরনের দুষ্কৃতকারীদের দলে স্থান নেই।’

জিতেন কান্তির ভগ্নিপতি তপন সিংহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতবার জিতেন হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ ফয়সালকে। নির্বাচনে ফয়সালের প্রধান এজেন্ট ছিলেন জিতেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বিএম জসিম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। এ কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফয়সালের পক্ষে কাজ করায় জিতেন বিএম জসিমের রোষানলে পড়েন। তবে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী বিএম জসিম জয়ী হন। এরপর থেকে দ্বন্দ্ব শুরু। সেই দ্বন্দ্বের জেরে তাকে মারধর করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: ‘যারা পরীক্ষিত নেতাদের নিগৃহীত করে তাদের জায়গা আ.লীগে নেই’

আবুল হাসনাত ফয়সাল বলেন, ‘দাওয়াত না দেওয়া এবং ব্যানারে নাম না থাকায় বিএম জসিম ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ইফতার মাহফিলে হামলা চালিয়েছে। দলীয় অনুষ্ঠানে তাকে দাওয়াত দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ নির্দয়ভাবে মেরে জিতেনকে আহত করেছে জসিম। আমরা এ হামলার বিচার চাই।’

এ ঘটনায় জিতেনের ভাই তাপস কান্তি গুহ বাদী হয়ে ২৯ এপ্রিল রাতে সাত জনের নাম উল্লেখসহ আরও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন। 

মামলার বাদী তাপস কান্তি গুহ বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা নির্দয়ভাবে মেরে আহত করেছে তাদের শান্তি চাই। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আমি তার কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’

জিতেন কান্তির ছেলে ইমন কান্তি গুহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাবার মাথায় সেলাই করা হয়েছে। হাতের ক্ষত স্থানে প্রচণ্ড ব্যথা রয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত আছে এখনও। চিকিৎসক বলেছেন, আরও কিছুদিন বাবাকে চিকিৎসাধীন থাকতে হবে। আমার বাবাকে যারা নির্মমভাবে মেরেছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

জিতেন কান্তিকে মারধরের প্রতিবাদে ১ মে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করেছে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। এতে হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানানো হয়।

পূজা উদযাপন পরিষদ মহানগরের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিতেনকে যেভাবে মারা হয়েছে তা অত্যন্ত অমানবিক। আমরা এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিলাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে জসিম ও তার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ কারণে আমরা নতুন করে কর্মসূচি রাখিনি।’

আরও পড়ুন: আ.লীগ নেতাকে গাছে বেঁধে মারধর, সাবেক ইউপি সদস্য গ্রেফতার

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি চেয়ারম্যান জসিমের সঙ্গে জিতেন কান্তির বিরোধ অনেক আগের। গত ইউপি নির্বাচনে জসিম ছিলেন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফয়সালের পক্ষে কাজ করেছিলেন জিতেন। এসব বিষয় নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ ছিল। সর্বশেষ ইফতার মাহফিলের ব্যানারে জসিমের নাম না দেওয়ার অজুহাতে জিতেনকে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়েছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার গুহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত মামলার প্রধান আসামিসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কি কারণে জিতেনকে মারধর করা হয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। তবে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চেয়ারম্যান জসিমকে ইফতার মাহফিলে দাওয়াত না দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।’

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমার যতটুকু মনে হয় এটি স্থানীয় আওয়ামী লীগে গ্রুপিংয়ের কারণে ঘটেছে। গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় জসিমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে জিতেনকে গাছে বেঁধে যেভাবে মারধর করা হয়েছে, তা অমানবিক। এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পিবিআইয়ের প্রতিবেদন গ্রহণ, পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
সর্বশেষ খবর
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
কুকি চিনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা: নুর
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা  
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক
ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক