বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ‘চাঁদের গাড়ি’। বিশেষ এই গাড়িগুলো মূলত পুরনো মডেলের জিপ গাড়ি। বছরের পর বছর ধরে পাহাড়ের অলিগলি চষে পর্যটকদের ঘোরার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে এসব গাড়ি। তবে সম্প্রতি আধুনিক মডেলের পণ্যবাহী মাহিন্দ্র বোলারো গাড়িগুলোকে রূপান্তর করে চাঁদের গাড়ি বলে চালানো হচ্ছে। এসব গাড়ির চালকরাও অদক্ষ এবং অনেকেরই লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টিকে পটকদের সঙ্গে প্রতারণা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় এসব গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বান্দরবানে প্রায় তিনশ’র বেশি পণ্যবাহী মাহিন্দ্র বোলারো গাড়িতে রেলিং লাগিয়ে তা যাত্রীবাহী গাড়িতে রূপান্তর করা হয়েছে। আর এসব গাড়িকেই পর্যটকদের কাছে চাঁদের গাড়ি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি আসল চাঁদের গাড়ি দেখা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয়, এসব গাড়ির অধিকাংশেরই নেই কাগজপত্র। অনেকে আবার চুরি করা গাড়িতে অন্য গাড়ির নম্বর লাগিয়ে চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এসব গাড়ি যারা চালাচ্ছেন তাদের অর্ধেকের বেশি চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ি চালানোর দক্ষতা। এতে বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ট্রাফিক বিভাগ, পুলিশ, বিআরটিএ এমনকি প্রশাসনের লোকরা জানার পরও এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ম্যানেজ করেই পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে নকল চাঁদের গাড়ি। প্রশাসনের চোখ শুধু সমিতির বাইরের ছোট ছোট যানের দিকে। এ সুযোগে বছরের পর বছর পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান মাইক্রো স্টেশনে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে চাঁদের গাড়ি পরিচয় দেওয়া পণ্যবাহী গাড়ি। আবার কোনও কোনও গাড়ি পর্যটক নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের উদ্দেশে। কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে বিষয়টি দেখলেও কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। চাঁদের গাড়ির নামে চলা পণ্যবাহী গাড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন জানান, প্রথমদিকে কয়েকটি গাড়ি থাকলেও চাহিদা বাড়ায় সম্প্রতি পণ্যবাহী গাড়ি রয়েছে তিনশ’র বেশি। আর এসব গাড়ি যারা চালাচ্ছে তাদের বেশির ভাগেরই লাইসেন্স নেই। ফলে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।
যাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত পণ্যবাহী গাড়ির কয়েকজন চালক জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মাসোহারা দিয়ে ম্যানেজ করে তাদের চলতে হয়। অবৈধভাবে চলাচল, রেলিং লাগানো ও সঠিক কাগজপত্র না থাকায় বান্দরবানের বাইরের জেলায় এসব গাড়ি যেতে পারে না। অনেক সময় পর্যটক কমে গেলে তারা মালামাল বহন করে।
তবে চাঁদের গাড়ির নামে এমন প্রতারণার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন বান্দরবান মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকআপ মালিক সমবায় সমিতির সেক্রেটারি মোজাম্মেল হক বাহাদুর। তিনি বলেন, এসব গাড়ি যে পণ্য পরিবহনে ব্যবহার তা আমি জানি না। গাড়ির চাকা আছে চলছে, সেগুলো কীভাবে চাঁদের গাড়ি হলো তাও আমি জানি না। বান্দরবানে এ ধরনের অনেক গাড়ি আছে বলে জানান তিনি।
চাঁদের গাড়ির নামের প্রতারণার বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম (তারিক) বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বান্দরবানের বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (অতি. দায়িত্ব) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মাহিন্দ্র বোলারো গাড়িগুলো মূলত পণ্যবাহী গাড়ি। এ গাড়িগুলোতে রেলিং লাগিয়ে পর্যটক বহন করা হচ্ছে। এগুলোর বিরুদ্ধে কয়েকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এসব গাড়ি বন্ধে প্রশাসন তৎপর আছে বলে দাবি করেন তিনি।