X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মিতুকে বাবুল আক্তারই হত্যা করিয়েছেন’

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম 
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৩৭আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৪

চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। অভিযোগপত্রে হত্যার প্রধান আসামি করা হয়েছে তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রের বিষয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেছেন, ‘যারা মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় জড়িত ছিল তাদের আমরা চিহ্নিত করেছি। জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে হত্যায় জড়িতদের আমরা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি।’ বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনকে এ কথা বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এ মামলা তদন্তে কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মামলায় আমাদের কোনও না কোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এ মামলায়ও কম ছিল না। এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলাটির তদন্তভার পেয়েছিলাম। আড়াই বছরে তদন্ত শেষ করতে পেরেছি। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদেরকে আসামি করা হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে মামলাটি তদন্ত করেছি। পিবিআই কখনও পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে তদন্ত করে না।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলাটি শুরু থেকে আমরা মোট পাঁচ কর্মকর্তা তদন্ত করেছি। আমি ছিলাম এ মামলার পাঁচ নম্বর তদন্ত কর্মকর্তা। ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর আমি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলাম। স্বাধীনভাবে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে আমি মামলা তদন্ত করেছি। তদন্তে যা পেয়েছি আমি তা তুলে ধরেছি। তথ্য-প্রমাণে যারা মিতুকে খুন করেছে বলে মনে হয়েছে তাদের আসামি করা হয়েছে।’

মামলার চার নম্বর তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন পিবিআই ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমার চাকমা। বর্তমানে তিনি সিএমপির খুলশী থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত আছেন। মূলত এই কর্মকর্তার তদন্তে উঠে আসে মিতু হত্যায় বাবুল আক্তারই জড়িত থাকার বিষয়টি। তিনিই বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করেন। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠান। তার তদন্তে এই হত্যা মামলায় নতুন মোড় নেয়।

এই প্রসঙ্গে সন্তোষ কুমার চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তে যা পাওয়া গেছে, আমি তাই তুলে ধরেছি। বাবুল আক্তার যে স্ত্রী মিতুকে খুন করেছে তা তদন্তে উঠে এসেছিল। এ কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।’

মামলার বাদী ও মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে বাবুল আক্তারই খুন করিয়েছে- তাতে কোনও সন্দেহ নেই। পুলিশের তদন্তেও বাবুলই যে খুন করিয়েছে তা উঠে এসেছে। দীর্ঘ ছয় বছর লেগেছে তদন্ত শেষ করতে। এত দিন ছিল মামলাটি তদন্তাধীন। এখন এই মামলা বিচারাধীন। এখন নতুন করে আশা দেখছি। আমি মেয়ে হত্যার বিচার পাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবুলের প্রেমের কারণেই মিতুকে খুন করা হয়েছে। তার প্রেমের সম্পর্কের কিছু ডকুমেন্টস আমরা পিবিআইকে হস্তান্তর করেছি। বাবুল যদি স্ত্রী হত্যায় সম্পৃক্ত না থাকে তাহলে প্রমাণ করুক, সে খুন করেনি। মিতু খুনের পর প্রচার করেছিল জঙ্গিরাই তাকে খুন করেছে। মিথ্যা সংবাদ এবং মিথ্যা মামলা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হয়রানি করেছে। মিথ্যা সংবাদ ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে পুলিশ চাইলে পৃথক মামলা করতে পারে। যা আইনেও আছে।’

পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে মিতু হত্যা মামলায় সাত জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- বাবুল আক্তার, মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ ওরফে হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া।

তবে এই হত্যাকাণ্ডে মোট ৯ জন জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে সরাসরি অংশ নেয় সাত জন। এর মধ্যে গ্রেফতার নুরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। মামলায় গ্রেফতার হওয়া চার জনকে অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দিয়েছে পিবিআই। তারা হলেন- কারাগারে থাকা মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু ও গুইন্না। সাইদুল ও গুইন্নার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাকে অভিযোগপত্রে বাদ দেয়া হয়েছে।
নিহত নুরুন্নবী, রাশেদকেও মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

আসামিদের মধ্যে ভোলাইয়া, ওয়াসিম ও আনোয়ার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছিলেন। পিবিআইয়ের জমা দেওয়া ২০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে মোট ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। অভিযোগপত্রের সঙ্গে ২১ ধরনের আলামত জমা দেওয়া হয়েছে। দুই হাজার ৮৪ পাতার কেস ডকেটে আসামি ও সাক্ষীদের জবানবন্দিসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত গায়ত্রী অমর সিং নামে এক বিদেশি নারীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের কথা মিতু জেনে যান। এ কারণে বাবুল তার বিশ্বস্ত সোর্সদের দিয়ে তাকে হত্যা করিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলে মাহিরকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে নিহত হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে তিন জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিতু হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।

২০২১ সালের ১১ মে বাবুলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন ১২ মে তার মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। একই দিন মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। বাবুলকে প্রধান করে এ মামলায় সাত জনকে আসামি করা হয়। পরদিন ১২ মে এই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

/এফআর/
সম্পর্কিত
মিতু হত্যা: বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো হলো ফেনী কারাগারে
কোন পর্যায়ে আছে মিতু হত্যা মামলা
আদালতে সাক্ষী মোস্তাইন বললেনবাবুল আক্তারের সোর্স মুছাকে পাঠানো হয় ৪৯ হাজার টাকা
সর্বশেষ খবর
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা