X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান

ইব্রাহীম রনি, চাঁদপুর
০৩ অক্টোবর ২০২২, ১০:১৫আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১০:১৭

বাইরে থেকে দেখে মনে হয় পরিত্যক্ত কোনও বাড়ি। দীর্ঘদিন সেখানে কারও পদচিহ্ন পড়েনি। কয়েকটি কক্ষের চাল নেই। দরজা-জানালা ভেঙে গেছে কবে। কয়েকটি কক্ষের পলেস্তারা খসে পড়ছে টুপ টাপ করে। সব দেয়ালে ফাটল। না, এটি কোনও পরিত্যক্ত বাড়ি নয়; সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঝুঁকি নিয়ে এখানেই চলছে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান।

চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৬২ নম্বর নিজ গাছতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। আতঙ্ক নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা বলছেন, বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই পাঠদান চলছে। এতে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। 

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে নিজ গাছতলা কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরৈ এটি রেজিস্টার্ড স্কুল থেকে ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করে সরকার। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়টি নিরাপদ শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছে। দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও একটি নতুন ভবন না হওয়ায় বর্তমান ভবনটির শ্রেণিকক্ষগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। মাথার ওপর টিনের চাল কোথাও আছে, কোথাও ফুটো, আবার কোথাও একেবারেই নেই। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ে সেখানে পরগাছা জমেছে। অনেক কক্ষের দরজা-জানালা নেই। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষক ও ৪ জন সহকারী শিক্ষাক পাঠদান করছেন। নার্সারি বিভাগ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক।

আতঙ্ক নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী

শিক্ষকরা বলছেন, বিদ্যালয়ের মূল ভবনের কয়েকটি কক্ষ পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। ভবনের ভাঙাচোরা তিনটি কক্ষের মধ্যে দুটি কক্ষে বর্তমানে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। একটি কক্ষে চলছে অফিসিয়াল কার্যক্রম। এই কক্ষগুলোর অবস্থাও খারাপ। এছাড়া একটি টিনের ঘরে চলছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এই ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। আরসিসি পিলার ও গ্রেট বিমগুলোতে বিস্তৃত ফাটল দেখা দেওয়ায় ভবনটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে থাকে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না।

শিক্ষার্থীরা বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে তাদের ভয় করে। কখন যে দেয়াল ভেঙে পড়ে এই আতঙ্কে থাকে। ছাদের পলেস্তারা ভেঙে ধুলাবালি চোখে ও গায়ে পড়ে। পড়াশোনা করতে খুব সমস্যা হয়। জনালাগুলোর গ্রিল কিংবা দরোজা না থাকায় দেয়ালের সঙ্গে থাকা পার্শবর্তী বাড়ির খোলা পায়খানা ও গোয়ালের দুর্গন্ধে শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না।

অভিভাবকরা বলছেন, সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে ভয়ে থাকতে হয়। কাছাকাছি ভালো কোনও স্কুল না থাকায় এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই সন্তানদের পড়ালেখা করতে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছেন। মাঝে মাঝে শোনা যায়, অনেক অফিসার এসে দেখে গেছেন। কিন্তু আজও কোনও নতুন ভবন হলো না।

কয়েকটি কক্ষের পলেস্তারা খসে পড়েছে, টিনের চালও নেই

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফসা বেগম বলেন, ‌‘সরকারিকরণের পর আমরা নতুন একটি একাডেমিক ভবনের জন্যে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করি। এরপর ২০১৭ সালে নতুন ভবন নির্মাণের বরাদ্দ ও অনুমোদন পাওয়া যায়। কিন্তু বিদ্যালয়ের জমি দুই মৌজার হওয়ায় সে কাজটি আটকে যায়। এ অবস্থায় আমরা পরে ভূমির মৌজা সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান করি। এছাড়া পুরনো ভবনের সাড়ে তিন শতাংশ জমিতে অনুমোদিত নতুন ভবনটি হবে না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে স্থানীয় চেয়ারম্যানের উদ্যোগে পাশের জমি ভরাট করা হয়। কিন্তু পরে মাটি পরীক্ষার পর বলা হয়, ওই জমিতে আরও মাটি ফেলতে হবে। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু চলতি বছর স্কুল নির্মাণের টেন্ডার বাতিল হয়ে যায়। একটি নতুন ভবনের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, ‘নতুন একটি ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে আবেদন করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। যেকোনও সময় বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়ের এই দুরবস্থা থেকে উত্তরণে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই।’

চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিচু জমি হওয়ায় ভবন নির্মাণের টেন্ডার বাতিল হয়েছে। গত ২৬ মে শিক্ষা কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় রেজুলেশন এনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই স্থানের উপযোগী একটি ভবন নির্মাণের জন্য আমরা লিখেছি। এখন এটি রি-টেন্ডার করার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি খুব দ্রুতই ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রেজ্জাক সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি এখানে কয়েক দিন আগে যোগদান করেছি। তাই এ বিষয়ে তেমন কিছুই বলতে পারছি না।’

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
আলো ছড়াচ্ছে কুষ্টিয়ার বয়স্ক বিদ্যালয়
শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক অর্থ: পাল্টে দেওয়া হলো ২৪৭টি স্কুলের নাম
প্রাথমিক শিক্ষায় ২৫, মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে
সর্বশেষ খবর
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
প্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
লোকসভা নির্বাচনপ্রথম ধাপে ভোটের হার ৬০ শতাংশ, সর্বোচ্চ পশ্চিমবঙ্গে
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এলো বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
ইসরায়েলি বিমান কীভাবে এলো বাংলাদেশে, প্রশ্ন নুরের
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা   
ইরানের ওপর কোনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি: ইরানি কর্মকর্তা