X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বদির চার ভাইসহ ১০১ ইয়াবা কারবারির কারাদণ্ড

কক্সবাজার প্রতিনিধি
২৩ নভেম্বর ২০২২, ১৪:৪৪আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৩৩

কক্সবাজারের টেকনাফে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণ করা ১০১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা পুলিশের দুটি মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে আত্মস্বীকৃত ১০১ ইয়াবা কারবারির প্রত্যেকেকে দেড় বছর করে কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অস্ত্র মামলায় খালাস দিয়েছেন আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাই রয়েছেন। বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে মামলার রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, ‌‌‘২০১৯ সালে টেকনাফে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাদের বিরুদ্ধে ইয়াবা ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হয়। দুই মামলায় বুধবার দুপুরে রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক। এদের মধ্য একজনের মৃত্যু হলে ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছিল। রায়ে আত্মস্বীকৃত ১০১ ইয়াবা কারবারির প্রত্যেকেকে মাদক মামলায় দেড় বছর করে কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অস্ত্র মামলায় সব আসামিকে খালাস দেন আদালত। এর মধ্যে ১৭ জন কারাগারে রয়েছেন। পালাতক রয়েছেন ৮৪ জন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সরকার পক্ষ ১০১ জনের অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। এরপরও আদালত দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে প্রতিকী শাস্তি হিসেবে এ রায় ঘোষণা করেছেন।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, পলাতকদের মধ্যে অনেক জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী রয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাই আব্দুল আমিন, আব্দু শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, ফয়সাল রহমান, ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু, চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ ও বড় ভাই আব্দুর রহমান, বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের ছেলে দিদার মিয়া, টেকনাফ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের এনামুল হক এনাম মেম্বার প্রমুখ।

মামলার এজাহারের বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ সৈকত এলাকায় ইয়াবা ও অস্ত্রসহ একদল ইয়াবা কারবারি অবস্থান নেওয়ার খবরে পুলিশ অভিযান চালায়। ওই সময় পুলিশের কাছে ১০২ জন আত্মসমর্পণের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। ওই দিন টেকনাফ সদরের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশীয় তৈরি বন্দুক ও ৭০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণকারী ১০২ জনকে আসামি করে টেকনাফ মডেল থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করেন টেকনাফ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ
ইবনে আলম। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পরিদর্শক এবিএমএস দোহাকে। মামলা দায়েরের দিনই আদালতের মাধ্যমে সব আসামিকে গ্রেফতার দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ১০২ আসামির মধ্যে মামলার বিচারকাজ চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল নামে এক আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে ১০১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সব আসামির উপস্থিতিতে শুনানি শেষে মামলার চার্জ গঠন করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। এর মধ্যে মামলায় সাজার হওয়ার খবরে পালাতক হন ৮৪ জন।

এদিকে, মামলায় ৮৩ জন পালাতক থাকলেও বুধবার রায় ঘোষণা সময় অনেকে আদালতে উপস্থিত থাকতে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন ১৮ আসামি। কারাগার থেকে তাদের আদালতে আনা হয়েছে।

কারাগারে থাকা ১৮ আসামি হলেন—নুরুল হুদা, শাহ আলম, আব্দুর রহমান, ফরিদ আলম, মাহবুব আলম, রশিদ আহমেদ, মোহাম্মদ তৈয়ব, জাফর আলম, মোহাম্মদ হাশেম ওরফে আংকু, আবু তৈয়ব, আলী নেওয়াজ, মোহাম্মদ আইয়ুব, কামাল হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কালাভাই, আব্দুল করিম ওরফে করিম মাঝি, দিল মোহাম্মদ, মো. সাকের মিয়া ওরফে সাকের মাঝি ও মোহাম্মদ হোছাইন।

দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ৮৩ আসামি হলেন—সাবেক এমপি বদির চার ভাই আব্দুল আমিন, আব্দু শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, ফয়সাল রহমান, ভাগনে মো. সাহেদ রহমান নিপু, চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলম, বেয়াই সাহেদ কামাল ওরফে সাহেদ, ফুপাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল, খালাতো ভাই মং অং থেইন ওরফে মমচি, আব্দুল আমিন, নুরুল আমিন, এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার, একরাম হোসেন, ছৈয়দ হোসেন, মৌলভী বশির আহমদ, আব্দুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নুরুল বশর ওরফে কাউন্সিলর নুরশাদ, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান ওরফে জিহাদ, মোহাম্মদ শাহ, নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মোহাম্মদ ইউনুচ, ছৈয়দ হোসেন ওরফে ছৈয়দু, মোহাম্মদ জামাল ওরফে জামাল মেম্বার, মো. হাসান আব্দুল্লাহ, রেজাউল করিম ওরফে রেজাউল মেম্বার, মো. আবু তাহের, রমজান আলী, মোহাম্মদ আফছার, হাবিবুর রহমান ওরফে নুর হাবিব, শামসুল আলম ওরফে শামশু মেম্বার, মোহাম্মদ ইসমাঈল, আব্দুল গনি, মোহাম্মদ আলী, জামাল হোসেন, আব্দুল হামিদ, নজরুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে দানু, মোহাম্মদ সিরাজ, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, হোসেন আলী, নুরুল কবির মিজি, শাহ আজম, জাফর আহমেদ ওরফে জাফর, রুস্তম আলী, নুরুল আলম, শফি উল্লাহ, মো. জহুর আলম, মোহাম্মদ হুসাইন, মোহাম্মদ সিদ্দিক, রবিউল আলম, মঞ্জুর আলী, হামিদ হোসেন, মোহাম্মদ আলম, নুরুল আমিন, বোরহান উদ্দিন, ইমান হোসেন, মোহাম্মদ হারুন, শওকত আলম, হোছাইন আহম্মদ, মোহাম্মদ আইয়ুব, মো. আবু ছৈয়দ, মো. রহিম উল্লাহ, মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ সেলিম, নুর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ হেলাল, বদিউর রহমান ওরফে বদুরান, ছৈয়দ আলী, মোহাম্মদ হাছন, নুরুল আলম, আব্দুল কুদ্দুস, আলী আহম্মেদ, আলমগীর ফয়সাল ওরফে লিটন, জাহাঙ্গীর আলম, নুরুল আলম, সামছুল আলম শামীম, মোহাম্মদ ইউনুচ, নুরুল আফসার ওরফে আফসার উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান আনছারী ও দিদার মিয়া।

/এমএএ/এএম/
সম্পর্কিত
ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার ব্যক্তির যাবজ্জীবন
ফেনসিডিল বহনের দায়ে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২৩
সর্বশেষ খবর
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’