বান্দরবানের চিম্বুক সড়কের ওয়াইজংশন এলাকায় ম্রো জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্রদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পের আওতায় সেখানে চারটি দোকান নির্মাণ করে ম্রো জনগোষ্ঠীর এক প্রতিনিধিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেসব দোকান ভেঙে এখন তারকা মানের রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করছেন মো. রিপন নামের এক ব্যবসায়ী। সরকারি প্রকল্পের জায়গা দখল ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করায় এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ম্রো জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্রদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ওয়াইজংশন এলাকায় সড়কের পাশে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চারটি পাকা দোকান নির্মাণ করেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। পরে ওই এলাকার ম্রো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি রাংলাই ম্রোকে দোকানগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তিনি হতদরিদ্রদের দোকানগুলো বুঝিয়ে না দিয়ে নিজের দখলে রেখে দেন। কয়েক মাস আগে জায়গাসহ দোকানগুলো এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। সম্প্রতি ওই ব্যবসায়ী দোকানগুলো ভেঙে তারকা মানের রেস্টুরেন্ট নির্মাণ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের দোকানগুলোর জায়গায় তারকা মানের রেস্টুরেন্ট নির্মাণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে রেস্টুরেন্টের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত সময়ে শেষ হবে বলে জানান নির্মাণশ্রমিকরা।
রেস্টুরেন্ট নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘মো. রিপন নামের চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী রেস্টুরেন্টটি নির্মাণ করছেন। এই কাজের দেখাশোনা করছি আমি। ইতোমধ্যে রেস্টুরেন্টের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
ব্যবসায়ী রিপনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর চাইলে ফরিদ বলেন, ‘রিপনের মোবাইল নম্বর দেওয়ার অনুমতি নেই। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে রাংলাই ম্রোর সঙ্গে কথা বলেন।’
এ বিষয়ে জানতে রাংলাই ম্রোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে কয়েকবার। তার পরিবার জানায় রাংলাই ম্রো ভারতে অবস্থান করছেন। দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ওয়াইজংশন এলাকার ম্রো জনগোষ্ঠীর কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত চারটি দোকান ম্রো জনগোষ্ঠীর হতদরিদ্রদের বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য রাংলাই ম্রোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন দোকানগুলো দখলে রেখে বহিরাগত ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে ম্রো জনগোষ্ঠীর ভুক্তভোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াছির আরাফাত বলেন, ‘কয়েক বছর আগে চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে চারটি দোকান নির্মাণ করে ওই এলাকার একটি সমিতিকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে দোকানগুলো দখলে রেখে বিক্রি করে দেওয়া এবং সেখানে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের কথা আমাদের জানা নেই। আমি খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।’