চট্টগ্রামে ঈদের দ্বিতীয় দিনে লাখের বেশি পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) ঈদের পরদিন অবসর কাটাতে সাগরের কাছে ছুটে যান শিশু, যুবক, বৃদ্ধসহ সব বয়সী বিনোদনপ্রেমীরা। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, পারকি সমুদ্র সৈকত, ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতেও প্রচুর লোক সমাগম দেখা গেছে। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ সমুদ্রের পানিতে গোসল করেছেন। আবার কেউ স্পিডবোটে চড়ে সমুদ্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কেউ কেউ সমুদ্রের পাড়ে বসে গান গেয়ে আনন্দে মেতে উঠেছেন। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত এ সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য পর্যটকদের কাছে যেন এক অন্যরকম মনোমুগ্ধকর ঘটনা।
এ সৈকতে আসা দর্শনার্থীদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। যেটি দেখতেও মানুষের ছিল প্রচণ্ড ভিড়।
ঈদের ছুটিতে মঙ্গলবার বিকালে রফিকুল ইসলাম নামে এক চাকরিজীবী পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত অন্যরকম একটি বিনোদনের স্থান। যেখানে সাগরের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য অপেক্ষমাণ সারি সারি জাহাজ এ সৈকতের পরিবেশকে ভিন্নতা এনে দিয়েছে। সাগরপাড়ে এলে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। কর্মব্যস্ত জীবনে সুযোগ পেয়ে আজ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে এসেছি।’
সমুদ্র সৈকত এলাকায় দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. ইসরাফিল মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে এই সৈকতে লাখের কাছাকাছি দর্শনার্থী এসেছে। দর্শনার্থীরা যাতে কোনও ধরনের সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের টহল পুলিশ মোতায়েন ছিল। আজ কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও ঈদের দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, আনোয়ারা পারকি সমুদ্র সৈকত, ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড, কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল, পতেঙ্গা প্রজাপতি পার্ক, কর্ণফুলী নদীর অভয় মিত্র ঘাট, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা পার্ক, আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশু পার্ক, আগ্রাবাদ জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর ও হালিশহর সাগর পাড় ছিল লোকে লোকারণ্য।
নগরের পাশাপাশি জেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সাগরপাড়, চন্দ্রনাথ পাহাড়, মীরসরাইয়ে মহামায়া লেক, আনোয়ারায় পারকি সমুদ্র সৈকত, রাউজানে মহামুনি মন্দির, অণিরুদ্ধ বড়ুয়া অনি শিশু পার্ক, বেতাগি কর্ণফুলী নদীর পাড়, রাউজান রাবার বাগান, ফটিকছড়ি চা বাগান অন্যতম।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ভিড় জমে চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানায়। যেখানে আছে দুর্লভ সাদা বাঘ, সিংহ, মায়া হরিণ, বানর, হনুমান, জেব্রা ও বিভিন্ন প্রজাতির হরিণসহ অসংখ্য পশুপাখি। এখানে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে আসেন বয়স্করাও। চিড়িয়াখানার পশুপাখির পাশাপাশি পাহাড়ের মাঝখানে থাকা সিঁড়ি এবং শিশুদের রাইডগুলো বেশ উপভোগ্য।
চিড়িয়াখানার চিকিৎসক ও ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকে চিড়িয়াখানায় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদিনে ১১ হাজার দর্শনার্থী টিকিট নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। টিকিটের প্রবেশ মূল্য ৭০ টাকা করে। ঈদের দিন দর্শনার্থীদের ভিড় তেমন ছিল না। মাত্র আড়াই হাজার দর্শনার্থী এসেছিল। আজ সারা দিনই ভিড় ছিল।’
কনকর্ড ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কের ডেপুটি ম্যানেজার (মার্কেটিং) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। স্বাভাবিক সময়ে এখানে ৬০০-৮০০ জন দর্শনার্থী থাকে। আজ তা কয়েক হাজারের মতো হবে। তবে কতে দর্শনার্থী এসেছে তার হিসেব এখনও পাইনি। ঈদকে ঘিরে ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ডকে নতুন রূপে সাজানো হয়। দর্শনার্থীরা এসে যাতে আনন্দ উপভোগ করতে পারে সে জন্য সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি আমাদের ছিল। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি এখানে রাত্রি যাপনেরও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।’