চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বৃদ্ধকে উদ্দেশ্য করে ‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহু উঁহু’ বলায় মাথায় গরম পানি ঢেলে ঝলসে দেওয়া সেই কিশোরী এখনও সুস্থ হয়নি। এখনও ঠিকমতো খেতে এবং চলাফেরা করতে পারছে না সে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াইজারো বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছিল। আহত কিশোরীর নাম পপি আক্তার (১২)। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯ দিন চিকিৎসাধীন ছিল। পপির বাবা মহিউদ্দিন ৯ বছর আগে এবং মা বেবী আক্তার আট বছর আগে মারা যান। ওই ইউনিয়নে নানার বাড়িতে বসবাস করে আসছে। ঘটনার দেড় মাসেও শুকায়নি তার শরীরের ক্ষত।
অসুস্থের কথা জানিয়ে সোমবার (০৪ নভেম্বর) বিকালে পপি আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, ‘গরম পানিতে আমার মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে গিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও এখন পর্যন্ত আমি শক্ত কোনও খাবার চিবিয়ে খেতে পারছি না। তরল খাবার খেতে হচ্ছে। এমনকি ভাত পর্যন্ত নরম করে খেতে হয়। কথা বলতে গেলেও গলায় ব্যথা অনুভব হয়।’
পপি আরও জানায়, ‘আমি নানার বাড়ির পাশে একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় পড়তাম। অসুস্থ হওয়ার পর আর মাদ্রাসায় যেতে পারছি না। পুরোপুরি সুস্থ হলে মাদ্রাসায় পাঠাবে বলেছেন নানা।’
পপির নানা আমির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টার দিকে আমার নাতনির ওপর গরম পানি নিক্ষেপ করা হয়। এতে শরীর ঝলসে যায়। প্রথমে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠান। ওই হাসপাতালে নেওয়ার পর বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে টানা ৯ দিন চিকিৎসাধীন ছিল। ছাড়পত্র দেওয়ার পরও তিন থেকে পাঁচ দিন পর পর হাসপাতালে গিয়ে ব্যান্ডেজ পাল্টাতে হয়েছিল। এখনও ক্ষত পুরোপুরি শুকায়নি। মুখ ও পিঠসহ বেশ কয়েকটি স্থানে এখনও ক্ষত দৃশ্যমান।’
আমির হোসেন আরও বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে পপির মা বেবী আক্তার সবার বড় ছিল। মেয়ের মৃত্যুর পর থেকে নাতনি আমার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছে। অনেক কষ্টে লালন-পালন করছি।’
পপির মামা আজিম উদ্দিন বলেন, ‘পপির বাবা মো. মহিউদ্দিন ৯ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। বাবার মৃত্যুর এক বছর না যেতেই সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় মা বেবী আক্তারও। এরপর থেকে পপি আমাদের বাড়িতেই থাকছে।’
এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ কী নেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিশোরীর নানা আমির হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। পুলিশ আসামি সায়েরা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে। মামলাটির তদন্ত এখনও চলছে।’
মামলার তদন্ত করছেন আনোয়ারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুনুর রশিদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন একজন। তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছি। এখনও তদন্ত চলছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকলে আইনের আওতায় আনা হবে।’
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৮ সেপ্টেম্বর বিকালে কয়েকজন শিশু-কিশোরের সঙ্গে ওই কিশোরী নানাবাড়ির উঠানে খেলছিল। এ সময় প্রতিবেশী এয়ার মোহাম্মদকে (৬৫) দেখে খেলারত শিশু-কিশোরদের সবাই ‘মুরুব্বি মুরুব্বি উঁহু উঁহু’ বলে দুষ্টুমি শুরু করে। এয়ার মোহাম্মদ এতে ক্ষিপ্ত হলেও শিশু-কিশোরদের কিছু না বলে ঘরে ঢুকে যান। কিছুক্ষণ পর এয়ার মোহাম্মদের ছোট ভাই মৃত আবুল কালামের স্ত্রী সায়েরা খাতুন (৬০) গরম পানি নিয়ে উঠানে আসেন। একপর্যায়ে কিশোরী পপির মাথায় গরম পানি ঢেলে দেন। এতে পপি চিৎকার দিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি শুরু করে। এলাকার লোকজন তাকে প্রথমে বাড়ির পুকুরের পানিতে ভিজিয়ে আনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।