X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

৪৬ বছরেও গোপালগঞ্জের দুটি গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

মনোজ সাহা, গোপালগঞ্জ
২৪ মার্চ ২০১৭, ১৮:১৩আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৭, ১৮:১৩

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাকান্দর গণকবর দীর্ঘ ৪৬ বছরেও গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দুটি গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অবহেলা আর অনাদরে কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের তারাকান্দর ও কোটালীপাড়া পৌর এলাকার সিকিরবাজার গণকবর পড়ে রয়েছে। দিন দিন এ গণকবরের স্মৃতি চিহ্ন হারিয়ে যেতে বসেছে। সেখানে শহীদ স্মৃতি ফলক নির্মাণ করে শহীদদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী তারাকান্দর গ্রামের নটবর রায় (৭৫) জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে ঢাল, সড়কি, ট্যাটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেন তারাকান্দর,কান্দি, ধারাবাসইল, শুয়াগ্রাম, ডুমুরিয়া, তালপুকুরিয়া, ভেন্নাবাড়ি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। এ কাজে ওই সব গ্রামের মানুষ তারাকান্দর গ্রামে জমায়েত হতেন। এ খবর পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয় স্থানীয় রাজাকাররা। ৩ মে পাকিস্তানি বাহিনীর নেতৃত্বে রাজাকাররা তারাকান্দর গ্রামে হামলা করে গণহত্যা চালায়। এতে দুশ নারী-পুরুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং মা-বোনদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শী তারাকান্দর গ্রামের রাম লাল বায় (৭৯) বলেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী চলে গেলে তারাকান্দর গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশগুলো রায়বাড়িতে এনে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মাটি চাপা দেই। এ গণকবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হলে স্মৃতি ফলক নির্মাণের জন্য আমরা সরকারকে জায়গা দেব।’

সিকিরবাজার গণকবর কোটালীপাড়ার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক জানান, মে মাসের মাঝামাঝি কোটালীপাড়া উপজেলার সিকির বাজারে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে হেমায়েত বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে টিকতে না পেরে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটে। হেমায়েত বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার কমলেশ বেদজ্ঞর বাড়ি সিকিরবাজার গ্রামে। মে মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানি বাহিনী সিকিরবাজারে হামলা চালিয়ে ১৯ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।

প্রত্যক্ষদর্শী বিলাসী বাড়ৈ বলেন, ‘নিহতদের লাশ কমলেশ বেদজ্ঞের বাড়ির পাশে ও আমাদের বাড়ির পাশের ডোবায় মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। এ দিন গ্রামের জীবন বাড়ৈ,কালু বাড়ৈকে হত্যা করা হয়। পরে ওই দুই পরিবারের সদস্যসহ আরও ১৭ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী।’

বিপুল বাড়ৈ বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশের ডোবা থেকে ছয় বছর আগে মাটি কাটার সময় শহীদদের হাড়, মাথার থুলি বেড়িয়ে আসে। এখানে গণকবরের স্মৃতি ফলক করা হলে আমরা জায়গা ছেড়ে দেব।’

সিকিরবাজার গণকবর কোটালীপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল মালেক সরদার বলেন, ‘তারাকান্দর ও সিকিরবাজারে পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা চালায়। এতে তারাকান্দরে দুশ’ ও সিকির বাজারে ১৯ জন শহীদ হন। তাদের মাটিচাপা দেওয়া হয়। ওই দুটি গণকবর সংরক্ষণ করে স্মৃতিফলক নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ ওই স্মৃতি ফলকে শহীদদের নামের তালিকা সংযোজনের অনুরোধও করেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিলাল হোসেন জানান,গণকবর দুটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সেখানে স্মৃতি ফলক নির্মাণ করে শহীদের তালিকা সংযোজন করা হবে। এছাড়া কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের তথ্য বোর্ডের ৪৬নং কলামে দুটি গণকবরের তথ্য পরিবেশন করা হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।  

/বিএল/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লাইসেন্সবিহীন টিভি চ্যানেল বন্ধে কার্যক্রম শুরু
লাইসেন্সবিহীন টিভি চ্যানেল বন্ধে কার্যক্রম শুরু
হামাসের রকেট হামলার জবাবে রাফাহ শহরে ইসরায়েলি অভিযান
হামাসের রকেট হামলার জবাবে রাফাহ শহরে ইসরায়েলি অভিযান
সুন্দরবনে আগুন লাগা স্থানে ধোঁয়া দেখলেই পানি দেওয়া হচ্ছে
সুন্দরবনে আগুন লাগা স্থানে ধোঁয়া দেখলেই পানি দেওয়া হচ্ছে
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?