X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাত বছর খাঁচাবন্দি ১০ বছরের শিখা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৫:২৭আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৬:১৩

১০ বছর বয়সী শিখা কথা বলতে পারে না, হাঁটাচলাও করতে পারে না। কোনোরকমে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করে। কাউকে কাছে পেলে কামড় ও খামচে দেয়। এ কারণে তিন বছর বয়স থেকে তাকে বন্দি করে রেখেছে পরিবার।

রাজবাড়ীর কালুখালীর মাঝবাড়ি ইউনিয়নের পূর্বফুল কাউন্নার গ্রামের মদন কুমার দাস ও চন্দনা রানীর মেয়ে শিখা। এক বছর বয়সে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়টি বুঝতে পারে মা-বাবা। পরিবারের দাবি, তখন থেকেই মানুষ দেখলে কামড় ও খামচি দিতে চায় শিখা। এ কারণে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। কিন্তু ওই রশিও কামড়ে ছিঁড়ে ফেলতো। এরপর হামাগুড়ি দিয়ে মা-বাবাসহ আশপাশের লোকজনকে কামড় ও খামচে দিতো। তার কামড়ে ‘জলাতঙ্ক’ হওয়ার আশঙ্কায় তিন বছর বয়স থেকে খাঁচায় বন্দি করে রাখেন স্বজনরা।

সরেজমিন দেখা যায়, শিখাদের বাড়ি টিনের, মেঝে মাটির। ঘরের সামনে মাটির বারান্দার এক কোণে মোটা জাল দিয়ে তৈরি খাঁচায় শিখার বাস। পাশেই রান্নাঘরে কাজের পাশাপাশি মেয়ের দেখভাল করেন তার মা।

শিখার মা চন্দনা রানী জানান, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে শিখা মেজো। বড় ছেলে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলের বয়স দুই বছর। মদন কুমার একটি সেলুনে কাজ করেন। সেই টাকা দিয়েই মেয়েকে চিকিৎসা করানোর জন্য একাধিকবার ভারতে নিয়ে গেছেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি। মানুষকে কামড় ও আঁচড় দেওয়ায় বারান্দায় একটি খাঁচা করে শিখাকে আটকে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি। জমানো টাকা, জমিজমা বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে গিয়েছিলাম। টাকার অভাবে সেখানে চিকিৎসা করাতে পারলাম না। এখন দেশে চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন ১৫০ টাকার ওষুধ লাগে। মাসে খরচ সাড়ে চার হাজার টাকার বেশি। চিকিৎসা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত।

এলাকাবাসী জানান, শিখাকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের দুঃখের শেষ নেই। তাদের সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। তার ওপর মেয়েটির চিকিৎসা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। সরকারসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।

জাল দিয়ে তৈরি খাঁচায় শিখার বাস

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শরীফুল ইসলাম  বলেন, বিষয়টি জানার পর শিশুটিকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছিলাম। ছয় মাস পর পর ২১০০ টাকা করে পায়। কিন্তু সামান্য টাকা দিয়ে চিকিৎসা ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও আমি ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করছি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন জানান, খাঁচার মধ্যে আটকে রাখার বিষয়টি অমানবিক। এতে তার মস্তিষ্কে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। সমাজসেবার অধীনে এ ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তাকে সেখানে রাখা যেতে পারে। শিশুটির যেহেতু মস্তিষ্কে সমস্যা, সেহেতু তাকে একজন নিউরো সার্জনের অধীনে চিকিৎসা দেওয়া উচিত।

কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, সরকারিভাবে বা সমাজসেবায় কালুখালীতে এরকম শিশুদের রাখার ব্যবস্থা নেই। শিশুটি বাবা-মা ছাড়া থাকতে পারে না। এজন্য তাকে দূরে কোথাও রাখা যাচ্ছে না।

জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও সমাজকল্যাণ অধিদফতরের সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধীদের সহায়তা দিয়ে আসছি। ওই শিশুটিকেও সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

/এসএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
গান নয়, সন্তান হারানো পিতার ক্রন্দন (ভিডিও)
মানসিক ভারসাম্য হারানো কিশোর ভারত থেকে দেশে ফিরলো
রাজশাহীতে প্রতিপক্ষকে মারার পর অস্ত্র নিয়ে কিশোরদের উল্লাস!
সর্বশেষ খবর
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত: সাকিব
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক রকেট হামলা হিজবুল্লাহর
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেফতার ৫
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
কারাগারে যেভাবে সেহরি-ইফতার করেন কয়েদিরা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’