কথায় আছে, প্রেম আর যুদ্ধে নাকি সবই ঠিক! অন্তত নারায়ণগঞ্জের তরুণী খাদিজার বেলায়তো বটেই। অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায়, বিয়ে বন্ধ করতে এই তরুণী বেছে নিয়েছেন অভিনব এক পন্থা, আকস্মিক বুকে ব্যথার ভান করে পরিবারের সদস্যদের তটস্থ করে চলে গেছেন হাসপাতালে। এরপর চিকিৎসক তার ‘আসল রোগ’ বুঝতে পারলে নিজে উদ্যোগী হয়ে প্রেমিক ওয়ালী উল্লাহকে চার হাত এক করে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইলের ‘মা হাসপাতালে’ ঘটে যাওয়া এ ঘটনা গতকাল শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) ছিল ‘টক অব দ্য টাউন’।
বর-কনে দুই জনই পোশাক কারখানার কর্মী। কর্মক্ষেত্রেই তাদের পরিচয়, পরে গড়ে ওঠে প্রেম। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বুকে ব্যথা নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের হাউজিং এলাকার মো. ইউসুফের মেয়ে খাদিজা (১৮) মা হাসপাতালে আসেন। এসময় তার মা-বাবাও সঙ্গে ছিলেন। তখন হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মাহফুজ ‘রোগী’ খাদিজাকে দেখে সন্দেহ করেন। তিনি বুঝতে পারেন খাদিজা অভিনয় করছে।
চিকিৎসক মাহফুজ রোগীর বাবা-মাকে চেম্বারের বাইরে পাঠিয়ে একান্তে খাদিজার সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে খাদিজা জানান, তিনি ওয়ালীউল্লাহ নামে এক যুবককে ভালোবাসেন। তবে এরই মধ্যে তার বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করায় তাকে এই অভিনয় করতে হয়েছে।
তারপরও আদৌ কোনও সমস্যা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে নেন ডা. মাহফুজ। দেওয়া হয় হার্টের কয়েকটি টেস্টও। রিপোর্টে সবকিছু স্বাভাবিক এলে তিনি নিশ্চিত হন, তার কোনও অসুস্থতা ছিল না।
পরেরদিন বৃহস্পতিবার ডা. মাহফুজ প্রেমিক ওয়ালীউল্লাহকে কল করে তার প্রেমিকা অসুস্থ উল্লেখ করে তাকে হাসপাতালে আসতে বলেন। এক পর্যায়ে বিয়ের কথা বললে ওয়ালী উল্লাহ রাজি বলে জানায়। বিষয়টি পরে কনের পরিবারের দিকে জানানো হয়।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। নাটকীয়তার তখনও অনেকটা বাকি। ঘটনা শুনে বেঁকে বসেন বাবা ইউসুফ। এমনকি মেয়েকে আর বাড়িতে তুলবেন না বলেও জানিয়ে দেন। তবে মেয়ে খাদিজাও নাছোড় বান্দা, বাবাকে রাজি করিয়ে ফেলে সে। চিকিৎসক এবং উপস্থিত সবার কথায় একপর্যায়ে মন গলে মো. ইউসুফের।
তাৎক্ষণিকভাবে কেনা হয় বিয়ের কেনাকাটা। ছেলেপক্ষের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত হন হাসপাতালে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালে লেগে যায় বিয়ে বাড়ির ধুম। সবার সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
