ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম (৫৫) ও এসআই উত্তম কুমার সেনের (৫০) বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৭ নম্বর আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বোয়ালমারীর ব্যবসায়ী মো. আতিয়ার রহমান নান্টু। দণ্ডবিধির ৩২৩/৩৮৫/৫০৬(বি)/১১৪ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, মামলার বাদী আতিয়ার রহমান নান্টু বোয়ালমারী পৌর সদরের ওয়াপদার মোড়ে ২০০০ সালে সাড়ে ১০ শতাংশ জমি কিনে ২ শতাংশের উপর গুদাম ঘর (হোল্ডিং নম্বর- ০৬০৭-০১) নির্মাণ করে হার্ডওয়্যারের ব্যবসা করে আসছেন।
এ সময় তার সঙ্গে জমি নিয়ে সোতাশী গ্রামের মৃত মহিউদ্দীনের ছেলে মো. ইয়াকুব হোসেন ও মো. বেলায়েত হোসেনের বিরোধ চলে আসছিল। উক্ত ব্যক্তিরা জোরপূর্বক জমি ও গুদাম ঘর দখল করে নেওয়ার পায়তারা করে। এ অবস্থায় বাদী আতিয়ার রহমান নান্টু ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর থানায় জিডি (নম্বর- ১৯৭৭) করেন।
ওই তারিখে ওসির নিকট বিস্তারিত অভিযোগ দিলে ওসি নুরুল আলম বাদী নান্টুর কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তিনি ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে ওসি এসআই উত্তম কুমার সেনকে ঘটনাস্থলে পাঠালে উত্তম কুমার সেন ইয়াকুব হোসেন ও তার ভাই বেলায়েত হোসেনকে নান্টুর জমি ও ঘরে যেতে নিষেধ করে আসেন। এরপর এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে ইয়াকুব ও বেলায়েত হোসেন লোকজন নিয়ে বাদীর গুদাম ঘরের তালা ভেঙে সিমেন্টের বস্তা উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিক আতিয়ার রহমান নান্টু থানায় গিয়ে ওসিকে জানালে ওসি নুরুল আলম আরও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে বলেন টাকা না দিলে ইয়াকুবদের থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে তাদের ঘরে তুলে দিবেন।
টাকা দিতে অস্বীকার করলে আতিয়ার রহমান নান্টুকে জীবননাশের হুমকি দেন ওসি নুরুল আলম। এসআই উত্তম কুমারকে দিয়ে তাকে থানা থেকে বের করেও দেন। এ সময় ওসি হাত-পা ভেঙে দেওয়া এবং পেন্ডিং মামলায় দিয়ে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়ারও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন নান্টু। এরপর ইয়াকুবদেরকে নান্টুর ঘরে তুলে দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর প্রতিকার চেয়ে আতিয়ার রহমান নান্টু ফরিদপুরের পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেন।
মামলার বাদী আতিয়ার রহমান নান্টু বলেন, আমার কেনা সাড়ে দশ শতাংশ জমি থেকে দুই শতাংশের উপর ঘর তুলে আমি ২০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। ইয়াকুবরা পুলিশের সহায়তায় অন্যায়ভাবে আমার ঘর দখল করে নিয়েছে। ওসিকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। পরবর্তীতে চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় ওদেরকে ঘরে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন যায়গায় অভিযোগ দিলে ওসি আমার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে বলেছে। কিন্তু আমারতো টাকা না, ঘর দরকার। ঘর, বিদ্যুতের মিটার, ট্রেড লাইসেন্স সব কিছু আমার। এ কারণে শেষ পর্যন্ত মামলা করে দিলাম।
বাদীর পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী অ্যাড. খন্দকার লুৎফর রহমান পিলু বলেন, আমাদের কাছে যথেষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে, বিধায় বোয়ালমারী থানার ওসি মো. নুরুল আলম এবং এসআই উত্তম কুমার সেনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, অভিযোগ দেওয়ার ও মামলা করার স্বাধীনতা মানুষের আছে। তবে যে অভিযোগে মামলা করেছে সে অভিযোগ সত্য নয়। আমি বোয়ালমারীতে আছি, মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। টাকার জন্য কাউকে হয়রানি করেছি, এমন রেকর্ড নেই। মামলাটি সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক ও মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বিপিএম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা আগে থেকেই তদন্ত করছি। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিষয়টি দেখছেন এবং পর্যবেক্ষণ করছেন। যেহেতু মামলা হয়েছে, বিষয়টিকে অবশ্যই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও পুলিশ সদস্য অপরাধ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে আপনারাও সত্যি ঘটনা তুলে ধরুন।’