নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আটক করতে তার বাড়ির অভিমুখে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে পুলিশ। এ সময় শত শত এলাকাবাসী জড়ো হয়ে পুলিশকে বাধা দেয় ও বিক্ষোভ করে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে পুলিশের একটি টিম শহরের দেওভোগ এলাকায় আইভীর বাসবভনে প্রবেশ করতে চাইলে এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়েন।
এর আগে, সাবেক মেয়র আইভীকে আটকের খবরে তার বাড়ি ঘিরে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করছেন। ঘটনার প্রতিবাদে বাড়িটি ঘিরে রেখেছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, সাবেক মেয়রের বাড়ির সামনের সড়কের এক প্রান্তে বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার জনগণ দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় পুলিশের একটি টিম বাড়ির গলিতে প্রবেশ করতে চাইলে এলাকাবাসী পুলিশকে বাধা দেয়। এ সময় অনেকে পুলিশকে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা এখন চলে যান। রাতে নয়, সকালে তাকে গ্রেফতার করেন।‘
জানা গেছে, রাত সাড়ে ১১টার দিকে আইভীকে আটক করতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পুলিশের একটি দল দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত আইভীর বাসভবন চুনকা কুটিরে প্রবেশ করে। পুলিশের অভিযানের খবরে রাস্তায় নেমে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় আইভীর বাড়ির প্রবেশ পথের দুই রাস্তায় বাঁশ, ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি ফেলে অবরুদ্ধ করে রাখে এলাকার মানুষ। আশেপাশের এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়দের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানানো হয়। তবে এখন পযন্ত তাকে আটক করা হয়নি বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সাবেক মেয়র আইভীর বাড়ির গেটের সামনে শত শত মানুষ জড়ো হয়েছেন। এ সময় তারা ‘আইভী আপার কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘আইভী আপা আটক কেন, জানতে চাই প্রশাসন’, ‘এমন নানা স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছেন পুরো এলাকা।
এলাকাবাসী মনির মিয়া বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাবেক মেয়র আইভীর বাড়ির আশেপাশে কয়েকজন পুলিশকে দেখা যায়। তখন কে বা কারা স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে তার বাড়ির সামনে আসার আহ্বান জানায়। এরপর তার বাড়ির সামনে এলাকাবাসীর ঢল নামে এবং তার পক্ষে তারা নানা স্লোগান দেয়। মেয়র আইভী এখনও বাড়ির ভেতরে আছে। আমরা তাকে গ্রেফতার করতে দেবো না।
এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিনের মোবাইলে নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন নারায়ণগঞ্জে একটি হত্যা মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী নাজমুল হক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন গুলিতে নিহত পোশাকশ্রমিক মিনারুল ইসলামের ভাই। মামলায় ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০০৩ সালে বিএনপি জোট সরকারের আমলে প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে দেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
গণঅভ্যূত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৯ আগস্ট দেশের বাকি সিটি করপোরেশনগুলোর মতো টানা তিনবার নির্বাচিত সিটি মেয়র আইভীকেও অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও 'পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ' হিসেবে পরিচিত সেলিনা হায়াৎ আইভীকে এই ধরনের কোনও পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি।