নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি কাজ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধের জেরে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে ‘মব’ তৈরি করে মহানগর বিএনপির সাবেক এক সহসভাপতিকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৯ জুন) দুপুরে বন্দর উপজেলার হরিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তি বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শহরের বি বি রোডে অবস্থিত একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বিএনপির ওই নেতাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মারধর করে তার পরনের পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে ফেলা হয়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নেতার পায়জামা ও পাঞ্জাবি ছেঁড়া অবস্থায় বস্ত্রশূন্য ছিল। এ সময় তাকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ সম্বোধন করে অনেকে গালিগালাজ করছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার দুপুরে বন্দরের হরিপুর এলাকায় অবস্থিত ৪১২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জনবল সরবরাহের ঠিকাদারি কাজের জন্য ওই বিএনপি নেতা ও তার অনুসারীরা সেখানে যান। সেখানে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সহসভাপতি বজলুর রহমান ওরফে ডন ও তার লোকজনের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা এবং হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকে মারধর করে তার পরনের পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে ফেলা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ‘ওই বিএনপি নেতা হরিপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি কাজ নেওয়ার জন্য সেখানে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মারধর করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ ঘটনায় কেউ কোনও অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ওই বিএনপি নেতার। ওসমান পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বিএনপি নেতা সাংবাদিকদের জানান, হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের জনবল সরবরাহের কাজ পেয়েছেন তিনি। আজ সেখানে দরপত্রে স্বাক্ষর করতে গেলে পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা বজলুর রহমান ও তার লোকজন তাকে মারধর করে পা ভেঙে দেন। তার পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে ফেলেছেন। কী কারণে হামলা হয়েছে, তিনি বুঝতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘ওদের যদি কোনও চাওয়া-পাওয়া থাকতো, ওরা আমাকে বলতে পারতো। আমি টেন্ডারে সরকারি কাজ পেয়েছি। সেই কাজ করতে গিয়ে আমার ওপর হামলা হয়েছে। আমার পায়জামা-পাঞ্জাবি খুলে ফেলেছে তারা। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে সোনারগাঁ থানা বিএনপির সহসভাপতি বজলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। শুনেছি এলাকার কিছু লোকজন তাকে হেনস্তা করেছেন। তিনি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের নির্বাচন করেছেন। তাদেরই লোক, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত। আমি জানি হরিপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন জেলা মোটরযান শ্রমিক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন। আলাউদ্দিনের কাজের দালালি করতে গেলে ওই আওয়ামী লীগের ওই দোসরকে গণপিটুনি দেন স্থানীয় লোকজন। শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ও অতীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে হামলার সঙ্গে আমি ও আমার অনুসারীরা জড়িত নয়।’
বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তিনি মূলত মবের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’