X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুপেয় পানি সংকটে মোংলার ৬৭ শতাংশ পরিবার

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা
০৭ অক্টোবর ২০২১, ১৮:১০আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৫২

জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবের শিকার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় উপজেলা বাগেরহাটের মোংলা। এই অঞ্চলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। চারদিক পানিতে সয়লাব থাকলেও সুপেয় পানির সংকটে উপজেলার ৬৭ শতাংশ পরিবার।

পশুর নদীর মোংলা পয়েন্টে ১৯৬২ সালে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল দুই পিপিটি। ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ পিপিটিতে। এ অবস্থায় আগামী ৫ বছরে মোংলায় শতভাগ নিরাপদ পানি নিশ্চিতে কাজ করছে ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি।

প্রায় দেড় লাখ জনসংখ্যার মোংলা উপজেলায় ৩৫ হাজার ৯৩৯টি পরিবার। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ পরিবারে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। পৌরসভা বাদ দিয়ে হিসাব করলে দেখা যায়, মোংলার ৬৭ শতাংশ (১৮ হাজার ৩১৪ পরিবার) পরিবারের নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা নেই।

উপজেলার ৬.৬ শতাংশ মানুষ ‘ট্যাপ ওয়াটার’ বা পাইপলাইনে সরবরাহ করা পানি এবং ৪.৪ শতাংশ টিউবওয়েলের পানি পান করেন। বাকি ৮৮.৯ শতাংশকে অন্যান্য উৎস্য থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। এর মধ্যে বৃষ্টির পানি, পুকুর ও নদীর পানি অন্যতম। আধা কিলোমিটার থেকে আট কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করেন তারা। তবে, শুধু মোংলা পৌরসভা এলাকায় পাইপলাইনে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা আছে।

মোংলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি থেকে প্রায় ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে রিভার্স ওসমোসিস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। মেশিনটির ক্যাপাসিটি প্রতি ঘণ্টায় ৬০ লিটার। আর্সেনিক, আয়রন, ক্লোরাইড, টিডিএস, হার্ডনেস ও ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সক্ষম।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. সেলিম বলেন, রিভার্স ওসমোসিস প্লান্টের মাধ্যমে প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। পুকুর ও নলকূপের লবণ পানি পরিশোধন করে তা সরবরাহ করা হয়। অসহায়দের বিনামূল্যে ও সক্ষমদের কাছে কিছু দামে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ প্লান্ট পরিচালনার জন্য কলেজের নয় সদস্যের কমিটি রয়েছে।

 অসহায়দের বিনামূল্যে ও সক্ষমদের কাছে কিছু দামে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে

ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট পানি সংকট মোকাবিলায় ২০০০ সালে ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি মাধ্যমে মোংলায় কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয় ২০১৯ সালে। ২০০০ সালের চিলা ইউনিয়ন এলাকায় ৭৫টি পানির ট্যাংক প্রদানের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি রিজার্ভার তৈরি করে দিয়ে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা কার্যক্রম শুরু হয়। তখন প্রতিটি ট্যাংকে ব্যয় হয় ৩৮ হাজার টাকা।

২০২১ সালে এক হাজার পরিবারকে রিজার্ভার তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কর্মসূচি শুরুর পর তা এক হাজার ১৫০টিতে উন্নীত হয়। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৭১৮ জনকে রিজার্ভার দেয়া হয়েছে। প্রতিটিতে খরচ হয় ৩২ হাজার টাকা করে, যা নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হচ্ছে। গ্রাহকদের জন্য কোনও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে না। ২০২৬ সালের মধ্যে এ উপজেলায় শতভাগ নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

মোংলার উত্তর চাপাই গ্রামের রোজিনা বেগম বলেন, আগে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় মাটির মটকায় বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করতেন। কিন্তু নিরাপদ পানি সংকট থেকেই যেতো। দূর-দুরান্ত থেকে পানি আনতে হতো। আবার পানি কিনে খেতে হতো। কিনে খেয়ে সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ সম্ভব না। এখন সুপেয় পানি মিলছে।

উত্তর চাঁদপুর গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, ৮০ বছর পার করলাম লবণ পানিতে। শেষ সময়ে এসে ব্র্যাকের সহযোগিতায় মন ভরে মিষ্টি পানি খেতে পারছি। এতেই শান্তি।

একই এলাকার ফুলজান বেগম বলেন, গরিব মানুষ, টাকা পয়সা নেই। পানি কিনে খেতে পারতাম না। পুকুরের পানি ছিল ভরসা। তাতে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ লেগেই থাকতো। এখন তৃপ্তি সহকারে পানি খতে পারছি।

ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, সারাদেশের মধ্যে প্রথম মোংলায় এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে এ উপজেলায় শতভাগ নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে। এখন দুস্থ ও অসহায়দের বিনামূল্যে ট্যাংক দেওয়ার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ফিল্টার ব্যবস্থাও আছে। একটা উপজেলায় কাজ শেষ করে পরবর্তী উপজেলা নির্ধারণ ও কাজ শুরু করা হবে।

লবণাক্ততা বাড়ায় কারণে উপকূলের প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ মানুষ তীব্র খাবার পানি সংকটে ভুগছে। এখানে একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে মাত্র দুই লিটার খাবার পানির মাধ্যমে ১৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ দিনে ৫ গ্রাম। তার ওপর আয়রন, আর্সেনিক ও ফ্লোরাইডও পাওয়া যায় এসব এলাকার পানিতে। 

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য বলছে, লবণাক্ততার প্রভাবে ২০৫০ সাল নাগাদ ৩০-৫০ লাখ দরিদ্র ও ২০-৩০ লাখ অতি দরিদ্র মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
গরমে পানির সংকট রাজধানীতে, যা বলছে ওয়াসা
গরমে নাকাল পথচারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করলো ফায়ার সার্ভিস
তাপ কমাতে সড়কে প্রতিদিন ৪ লাখ লিটার পানি ছিটাচ্ছে ডিএনসিসি
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা