X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে ছয় দফা দাবি

যশোর প্রতিনিধি
১২ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:০৭আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:০৭

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে ক্রাশ প্রোগ্রামে আগামী মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়া টিআরএম চালু ও প্রস্তাবিত প্রায় ৫০ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাতিলসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়েছে। রবিবার দুপুরে যশোর শহরের নীলরতন ধর রোডে অবস্থিত সংগ্রাম কমিটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরে  ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি।

দাবিগুলো হলো ক্রাশ প্রোগ্রামে আগামী মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়া টিআরএম চালু, প্রস্তাবিত প্রায় ৫০ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাতিল, ভবদহ স্লুইসগেটের ভাটিতে হরি নদীতে পাঁচ-ছয়টি ভেকু মেশিন দিয়ে পাইলট চ্যানেল করা এবং ২১, ৯ ও ৬ ভেন্টের গেটগুলো ওঠানামার ব্যবস্থা, জনপদের ফসল, মাছসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কৃষিঋণ মওকুফ, আমডাঙ্গা খাল সংস্কারকাজে প্রি-ওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্ক জনসমক্ষে টানিয়ে দেওয়া ও কাজের স্বচ্ছতা নিরূপণে আন্দোলনকারী সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তদারকি কমিটি গঠন এবং সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান, নদী হত্যা, জনপদের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, ফসল, বসতবাড়ি ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্বৃত্ত ও রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসাজশে ভবদহবাসীকে ডুবিয়ে মারার একের পর এক ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘদিনের আন্দোলনে দাবি ছিল, আমডাঙ্গা খাল প্রশস্ত করে খনন, বিল কপালিয়ায় টিআরএম ও পর্যায়ক্রমে বিলে বিলে টিআরএম চালু করে নদীর নাব্যতা রক্ষা ও জলাবদ্ধতার অবসান এবং উজানে পদ্মা-মাথাভাঙা-ভৈরবের নদী সংযোগের সঙ্গে মুক্তেশ্বরী নদীকে যুক্ত করে প্রবাহমান করা। কিন্তু সেসব দাবি না মেনে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আন্দোলনের চাপে সম্প্রতি একনেকে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের বরাদ্দ হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। কিন্তু সে কাজ দ্রুত ও লুটপাটবর্জিত স্বচ্ছভাবে হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। অপরদিকে, টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ না করে ভবদহ স্লুইসগেট থেকে প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী মেরে ফেলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারের নদী বাঁচানোর গৃহীত নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং জনগণকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার হাতে জিম্মি করে অর্থ লোপাটের স্থায়ী পরিকল্পনা করেছে। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সহজ ও পরীক্ষিত সমাধান টিআরএম না করার জন্য জেদ ধরেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরকারকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করছে এবং জনমতকে উপেক্ষা করে পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে জলাবদ্ধতা মুক্ত করার অবিবেচনাপ্রসূত প্রকল্প দিয়ে অর্থ অপচয় করছে। এবার পাম্পের মাধ্যমে পানি সেচ দেওয়ার ফলে এলাকায় ব্যাপক ফসল উৎপাদন এবং জলাবদ্ধতা হয়নি। মানুষের বাড়িঘর-রাস্তা এবং কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠেনি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং প্রধান প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে এক কর্মশালায় আন্দোলনকারী সংগঠন, জনপ্রতিনিধিরা পাম্প করে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করেন।

গত ১৫ নভেম্বর খুলনার প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে পাঁচ শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ সমবেত হয়ে পাম্প বাদ দিয়ে ভাসমান ভেকু মেশিন দিয়ে নদীতে পাইলট চ্যানেল করা, ২১ ভেন্টের স্লুইসগেটগুলো তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছিল। প্রধান প্রকৌশলী ওই প্রস্তাবে সম্মত হয়ে এক-দুই দিনের মধ্যে ভাসমান ভেকু মেশিন আনার কথা জানান। বাস্তবতা হলো চার-পাঁচটি ভেকু মেশিন দিয়ে নদীতে পাইলট চ্যানেল করলে আসন্ন ইরি-বোরো মৌসুমে এলাকার বিলে ধান চাষ করা সম্ভব। কিন্তু পাম্প প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জনমত উপেক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৫০ কোটি টাকার সেচ প্রকল্পের বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ফলে অনভিপ্রেত যে পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে তার সব দায় তাদেরই নিতে হবে। এই গণবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রের দায় সরকারের ওপর বর্তায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রের চক্রান্তে পুনর্বার ২০১৭ সালে জাতীয় কর্মশালায় গৃহীত টিআরএম প্রকল্প বানচালের ফলে এই জনপদের জনগণের বার বার হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল, বসতবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে। চলতি বছরের জলাবদ্ধতায় পানিতে ডুবে একটি শিশুসহ চার জন মারা গেছেন। জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার কারণে এই ক্ষয়ক্ষতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় লাগাতার অবস্থানসহ বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া ছাড়া ছাড়া সামনে কোনও পথ খোলা থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল, সদস্য অনিল বিশ্বাস, নাজিম উদ্দিন, জিল্লুর রহমান ভিটু, শিবপদ বিশ্বাস, কার্তিক বকসী, ইলিয়াস হোসেন, রাজু আহম্মেদ, উত্তম কুমার গাইন, চৈতন্য কবিরাজ, ইন্তাজ আলী, পলাশ মোল্যা, সবুজ কবিরাজ ও গৌর চন্দ্র রায় প্রমুখ।

/এএম/
সম্পর্কিত
৩ বছর শেষ, কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ মেয়রের ৩৭ প্রতিশ্রুতি
সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা
টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি ময়মনসিংহ নগরীতে
সর্বশেষ খবর
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
‘বিএনপি যে কোনও উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে’
‘বিএনপি যে কোনও উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে’
ফেসবুকে নিজের সমালোচনা দেখে হাসি পায় সাকিবের
ফেসবুকে নিজের সমালোচনা দেখে হাসি পায় সাকিবের
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
উপজেলা নির্বাচনে পলকের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে হাইকোর্টে রিট
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না