X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

শীতের রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ

খুলনা প্রতিনিধি
২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৪আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৪

হাসান, খুলনার একজন টোকাই। ২৮ বছরের যুবক। তিন সন্তানের পিতা। দিনভর টোকাইয়ের কাজ করে রাতের অবস্থান সপরিবারে ফুটপাতে। এক টুকরো কার্পেট ও পলিথিন দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি তুলে রাত্রিযাপন। ভোরের আলো ফোটার আগেই ছাউনি তুলে নেমে যেতে হবে টোকানোর কাজে।

খুলনা মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ের ভেঙে ফেলা পাবলিক হলের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে থাকা ফুটপাতের ওপর তার শীতের বাদল রাতে অবস্থান। তিনি জানান, বরিশাল থেকে মা-বাবা খুলনায় আসেন ২৮ বছর আগে। তখনই তার জন্ম হয়। এরপর হাঁটাচলা শেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। হাঁটাচলা করতে পারামাত্রই রেলস্টেশন এলাকায় টোকাই হিসেবে পরিচিতি শুরু হয়। সেই তার টোকাই হয়ে ওঠা। এখনও টোকাই।

সংসার পেতেছেন তিনি। মামাতো বোনের সঙ্গে তার সংসারে এখন এক মেয়ে দুই ছেলে। মেয়ে ৭ বছরের। তাকে একটি এতিমখানা মাদ্রাসায় দিয়েছেন। আর বড় ছেলে ৩ বছর ও ছোট ছেলের বয়স ২ বছর। এক মাস হলো বড় ছেলেটা রেল থেকে পরে বাঁ পা কোমরের নিচ থেকে ভেঙে গেছে। তাকে নিয়ে তার মা ভিক্ষা করে। আর সে টোকাইয়ের কাজ করে। এতে যা আসে তা দিয়ে খাওয়া আর চিকিৎসা করা হয়। রাতে আগে রেলস্টেশনে থাকতেন। এখন সেখানে থাকতে দেওয়া হয় না। তাই এই ফুটপাতে রাত কাটাতে হয়। একজন বৃষ্টি দেখে পলিথিন দিয়ে গেছেন।

হাসানের মতো অনেক টোকাই, অসহায় মানুষ, দিনমজুররা এভাবেই রাত কাটান ফুটপাতে।

শেখ সাইদ, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চিংড়ার বাসিন্দা। স্বাধীনতার পরই খুলনায় আসেন। টোকাইয়ের কাজ করে জীবন চালান। আর ফুটপাতে রাত কাটান। গত ৫০ বছর ধরে এভাবেই চলছে তার জীবন। তিনি বলেন, ‘দিনভর প্লাস্টিক ও কাচের বোতল টোকাই। এগুলো বেচে যা পাই, তা দিয়ে খাওয়ার কাজ হয়। রাতে আগে থাকতাম রেলস্টেশনে। এখন সেখানে থাকতে দেওয়া হয় না। তাই ফুটপাতে থাকি। বৃষ্টির কারণে শোয়া যায় না। বসে থাকতে হয়।’

শীতের রাতে বৃষ্টির হানা

পিরোজপুরের রাজার হাটের পরিমল জানান, গ্রামে তার বসতভিটা আছে, কিন্তু আয় নেই। সংসারে ৪ জন আছেন। তাদের জন্য এক সপ্তাহ আগে খুলনায় এসেছেন। ঢালাইয়ের কাজ পেয়েছেন। দিনে ৮০০ টাকা পান। খাওয়ায় ৩০০ টাকা যায়। আর ৫০০ টাকা করে জমিয়ে সপ্তাহে বাড়ি পাঠান। তাই বাসা নিতে পারেননি। ফুটপাতেই রাত্রি যাপন করেন। কাজের খোঁজে তার এলাকা থেকে ১২ জন খুলনায় এসেছেন। তারা সকলেই ফুটপাতে রাত কাটান। আর দিনে দিনমজুর খাটেন। একে তো শীত। তার ওপর বৃষ্টি। এতে ফুটপাতের ওপর বসেই রাত কাটাতে হয়।

খুলনা অঞ্চলে কয়েক দিন ধরে তীব্র শীত। সঙ্গে ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাস। মেঘলা আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও আছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বুধবার দুপুরের পর থেকে আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। শীতের মধ্যে কয়েক দফায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা বাড়ে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, বিভাগে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। খুলনায় বুধবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া যশোরে ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং মোংলায় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
সর্বশেষ খবর
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ মে, ২০২৪)
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
খুলনায় আড়াই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরে জলাবদ্ধতা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস