X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গর্ত, ঠিকাদার মানেনি শর্ত

হানিফ উল্লাহ আকাশ, নেত্রকোনা
১১ আগস্ট ২০২০, ১৮:২৯আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২০, ১৮:৩২

নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্যামগঞ্জ রেলক্রসিং এলাকার বেহালদশা নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ সমাপ্তির সময়সীমা এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ করতে পারেনি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসমূহ। ফলে এই সড়কে যান চলাচল ও পথচারীদের দুর্ভোগ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এমন সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যেও প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ নেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের, অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা ও নেত্রকোনার সচেতন নাগরিকদের।

সড়ক সংস্কারের যে সকল কাঁচামাল ব্যবহার করা হচ্ছে তার গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ কাজে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বিলম্বের কারণ হিসেবে বৃষ্টি ও বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির অজুহাত দিলেন।

জানা গেছে, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্যামগঞ্জ থেকে নেত্রকোনা অংশের কাজ চলছে ধীর গতিতে। সড়কে চলাচল করা যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তে পানি জমে যায়। কাদা মাটিতে একাকার হয়ে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটে। এ নিয়ে জেলাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জেলার পূর্বধলার হিরনপুর এলাকার বাসিন্দা মোজাহিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কাজটি সময় মত শেষ হচ্ছে না। এতে এলাকাবাসী ও সড়ক ব্যবহারকারী  মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শ্যামগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী কেরামত আলী বলেন, এই সড়কের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। কেন যে কাজ শেষ হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না। রাস্তা খারাপ থাকায় যাত্রীদের চলাচলে খুব সমস্যা হয়। আমাদেরও মালামাল আনতে কষ্ট হয় ও বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্যামগঞ্জ থেকে সদর উপজেলার কান্দুলিয়া পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এই সড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। প্রায় ১০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এই কাজ সমাপ্তির মেয়াদ নিধার্রণ করা হয়। দুটি প্যাকেজে এই কাজ ভাগ করা হয়। প্রথম ভাগে পেট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং ও তানভির কনস্ট্রাকশন নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে কাজ পায় এমএম বির্ল্ডাস, ইনফ্লাটেক ও তানভির কনস্ট্রাকশন নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান। কিছুটা বিলম্বে কাজ শুরু করে তারা। সড়কের কিছু কিছু জায়গায় কাজ করলেও বেশিরভাগ কাজ এখনও বাকি। এতে করে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই সড়কে চলাচল করা যাত্রীদের। এছাড়াও কাজে ব্যবহৃত মালামলের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিভিন্ন অংশে সম্প্রতি সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সংস্কার কাজে পেট্রোবাংলার বিটুমিনের পরিবর্তে নিম্নমানের ইরানি বিটুমিন দিয়ে ওভারলে সিলকোর্টের কাজ করা হয়। সড়কে ৬০ মিলি ওভারলে থিকনেসের কথা থাকলেও স্থানবেদে ৪৫ থেকে ৫০ মিলি পর্যন্ত ওভারলে কার্পেটিং করা হয়। এছাড়াও বেস্ট অব ওয়ানে (পাথরের মেকাডম) ৭০ ভাগ পাথরের সঙ্গে ৩০ ভাগ বালি সংমিশ্রনের স্থলে প্রায় ৬০ ভাগ বালির সঙ্গে ৪০ ভাগ পাথর মিশ্রনেরও অভিযোগ উঠেছে। এমন কি সড়কের প্রাইমকোড করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল এবং বৃষ্টিতে ওই প্রাইমকোড নষ্ট হয়েছে বলেও দাবি তার।

শ্যামগঞ্জ রেলক্রসিং সড়কের বেহালদশার আরও চিত্র সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কের শ্যামগঞ্জ বাজারের পূর্ব ও পশ্চিমপাশ, ইসবপুর মোড় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে ভবের বাজার, নারান্দিয়া, হিরনপুর, কুতুবপুর, হাটবারেঙ্গা, বাগড়া, চল্লিশাসহ বিভিন্ন স্থানে একটু পর পরই রাস্তার বেহালদশা। ছোট বড় অসংখ্য গর্ত, ইট বালি উঠে খানাখন্দে পরণত হয়েছে। ওই সমস্ত গর্তে পানি জমে রয়েছে। অন্তত ১০টি পয়েন্ট মারাত্মক দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। ওই সমস্ত স্থানে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। ফলে সড়কেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় জ্যামে আটকে থাকতে হচ্ছে পরিবহন যাত্রীদের।

এ সড়কে চলাচল করা বাস চালক মামুন জানান, এমনিতেই যানবাহন বেশি। এমন অবস্থায় বছরের পর বছর রাস্তায় খোড়াঁখুড়ি সড়কে দুর্ভোগের অন্যতম কারণ। ভগ্ন সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে খুব কষ্ট হয়। প্রয়োজনীয় গতিতে গাড়ি চালানো যায় না। প্রায়শই গাড়ির যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে রাস্তায় আটকে যায়। এতে করে যাত্রীদের চরম অসুবিধা হয়।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানভির কনস্ট্রাকশন এর ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের কাজে ব্যবহৃত সকল মালামাল বুয়েট থেকে পরীক্ষা করে তার পর কাজে লাগানো হয় এবং সড়ক বিভাগের লোকজন তখন সাইডে উপস্থিত থাকে। সুতরাং খারাপ মাল ব্যবহারের কোনও সুযোগ নেই । এছাড়াও গত বছরে নেত্রকোনায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে আমাদের কয়েক লাখ ফুট বালি পানিতে ভেসে যায়। পরে করোনার কারণে কাজ করা যায়নি। তবে যে কাজ বাকি আছে তা আগামী ৩ মাসের মধ্যেই শেষ হবে।

নেত্রকোনার পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ থেকে সদর উপজেলার কান্দুলিয়া পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। সড়ক সংস্কার কাজ নিয়ে গাফিলতি ও জন দুর্ভোগের অভিযোগে করেছেন এই সড়কে চলাচল করা যাত্রী সাধারণ। অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনা- ময়মনসিংহ সড়কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মেরামতের নামে ঠিকাদার এবং ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এই চরম দুর্ভোগ। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েই চলছে।

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, সড়কটি সংস্কার কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। করোনা ও বৃষ্টির কারণে কাজ করতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। ঠিকাদারকে দ্রæত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়। কাজ কারার পর যাছাই বাছাই করে বিল পরিশোধ করা হয়।

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি পেছালো
অর্থ আত্মসাতের মামলাড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি পেছালো
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি