X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সবুজ দেখতে কারাগারে গমের চারা লাগিয়েছিলেন শেখ মুজিব’

তৌহিদ জামান, যশোর
২৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৭:১২আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:৩৩

আব্দুল মালেক
‘বঙ্গবন্ধুকে যেখানে রাখা হয়েছিল সেটা ছিল একটা ফ্যামিলি কোয়ার্টারের মতো।উত্তর-দক্ষিণে লম্বা টিনশেডের ওই কোয়ার্টারে বেশ কয়েকটি রুম। বঙ্গবন্ধু থাকতেন একেবারে উত্তরপাশের রুমে। রুমের সঙ্গে ছোট্ট বারান্দা। তার সামনে একটা টিউবওয়েল। সেখানে গোসল করতেন তিনি। টিউবওয়েলের পাশে ৪/৫ হাত জায়গায় কিছু গম গাছ বেশ বড় হয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘স্যার, এই গম গাছগুলো কে লাগিয়েছে?’ উনি বললেন, ‘আমিই বীজ আনিয়ে লাগিয়েছি। একটু সবুজ দেখার জন্য। সকাল-বিকেল সবুজ দেখলে চোখের জ্যোতি ভালো থাকে। এখানে তো আকাশ আর বালি ছাড়া কিছুই দেখতে পাই না।’

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের মিয়াওয়ালি লয়ালপুর জেলে (বর্তমান নাম ফয়সালাবাদ সেন্ট্রাল জেল) আটকে রাখা হয় বঙ্গবন্ধুকে। সেসময় একই জেলে আটক ছিলেন ভোলা জেলার সদর থানার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের চরকুমারিয়া গ্রামের আব্দুল মালেক। সেখানেই কাছ থেকে তিনি দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে। সেই দেখার টুকরো টুকরো কিছু স্মৃতি এই প্রথম মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেছেন তিনি।বয়সের কারণে দিন-তারিখের হিসাব এখন কিছুটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বলে জানান আব্দুল মালেক।

তিনি জানান, ১৯৬৭ সালে সৈনিক হিসেবে তিনি পাকিস্তান আর্মির মেডিক্যাল কোরে যোগ দেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যখন কারাগারে ছিলেন তখন তার বয়স ছিল ২৪ বছর। আর এখন তার বয়স ৭১। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের সেনানিবাসে।

একাত্তরের অক্টোবর মাসের এক সকালে ড্রিলে তিনিই ছিলেন একমাত্র বাঙালি।তিনবার ড্রিলশেষে হঠাৎ এক পাঞ্জাবি সেনা বঙ্গবন্ধুকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলে ওঠে, ‘পূর্ব পাকিস্তানে ভুট্টো এবং কায়েদে আযমের ছবি ভাঙা হচ্ছে।’

আব্দুল মালেক বলেন, ‘প্যারেড শেষে আমি তখন ঘামে ভিজে গেছি, একটু ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকে গালি দেওয়ায় মেজাজ চড়ে যায়। আমিও পাল্টা গালিগালাজ করি। সঙ্গে সঙ্গে ওরা হাবিলদার গোস্তাম খানের (কাশ্মিরে বাড়ি) কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করে। হাবিলদার গোস্তাম খান এসেই আমাকে বেল্ট খুলে দিতে বলে। আমি দেইনি। পরে সে নিজেই এসে আমার বেল্ট খুলে নিয়ে যায়। একজন সৈনিকের কোমর থেকে বেল্ট খুলে নেওয়া মানেই সে গ্রেফতার।’

তিনি বলেন, ‘হাবিলদার বেল্ট খুলে নিয়ে হেড কোয়ার্টারে গিয়ে টুআইসি মেজর আব্দুল ফাত্তার চৌধুরীর কাছে বিষয়টি জানায়। আব্দুল ফাত্তার চৌধুরী ছিলেন বাঙালি, বাড়ি সিলেটে। উনি আমার সম্পর্কে জানেন। যেহেতু উনিও বাঙালি, আমিও বাঙালি, তাই বিষয়টি তিনি সেন্ট্রাল কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আসমান ইয়ার খানের কাছে দেন।সেসময় ওরা কেবল আমার বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছে। ওরা যে প্রথমে গালি দিয়েছে সে বিষয়টি বলেনি। ব্রিগেডিয়ার আসমান ইয়ার আমাকে শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।’

আব্দুল মালেক বলেন, ‘হাবিলদার গোস্তাম খান হ্যাভারস্যাকে ১০টি ইট ভরে আমার পিঠে ঝুলিয়ে দেয়, ডাবলিং, ফ্রগ জাম্প, সাইড রোলিং করায়। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে ২টা পর্যন্ত চলে এ শাস্তি। আমাকে লাথি মারে, পা দিয়ে চটকায়। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। সন্ধ্যার পর জ্ঞান ফিরলে দেখি, আমি প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে।পরে সেখান থেকে কোয়ার্টার গার্ডে নিয়ে যায়। ১৪/১৫ দিন ছিলাম ওখানে। পরে কোনও কোর্ট মার্শাল ছাড়াই আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লয়ালপুর জেলে।’

আব্দুল মালেক বলেন, আমাকে নিয়ে ওরা জেলগেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই দায়িত্বরত মুনশিকে ডেকে বলে, এটা নতুন আর্মি পারসন। মুনশির নাম আশরাফ। সে পাঞ্জাবি। আমার সঙ্গে আর্মি মেডিক্যাল কোরে ট্রেনিং নিয়েছিল। অফিসারের এক মেয়েকে নিয়ে ভেগে যাওয়ায় ওর সাড়ে সাত বছর জেল হয়। এখানে সেও একজন কয়েদি। শিক্ষিত হওয়ায় ওকে জেলখানার মুনশির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমাকে দেখেই সে চিনতে পারে। বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করে, ‘আরে তুমি এখানে কেন?’ আমি ভয়ে আসল কারণটা চেপে যাই। বলি, ‘আর্মিতে চাকরি করি, ভুল-ভ্রান্তি তো হতেই পারে; তাই এখানে এসেছি।’ যাই হোক, খাতা-কলমের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আশরাফ আরেকজন কয়েদিকে দিয়ে ক্যান্টিন থেকে আমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসে। রাতে ওরই সিটে বসে আছি। হঠাৎ সে বলে ওঠে, ‘ভাই মালেক, ইস্ট পাকিস্তানের নেতা হ্যায় না শেখ মুজিবর রহমান, ইধার হ্যায়।’ আমি তো অবাক! শেখ সাহেব এখানে!’

আব্দুল মালেক এরপর বলেন, ‘আমি বলি, আশরাফ ভাই, তুমি কি আমাকে শেখ সাহেবকে দেখাতে পারবা?’ আশরাফ বলে, ‘হ্যাঁ পারবো, আমি তো মুনশি, শেখ সাহেবকে নিজেই খানা খাওয়াই। আমি যখন খানা নিয়ে যাবো, তুমিও একটা কিছু নিয়ে যেও আমার সঙ্গে।’

তিনি জানান, ‘‘আশরাফ অবশ্য একটু ভয়ও পাচ্ছিল। তারপরও পরদিন বেলা দেড়টার দিকে আমাকে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর রুমের সামনে গিয়ে আশরাফ বলে, ‘স্যার, আপনার জন্য খানা নিয়ে আসছি।’ পায়জামা, পাঞ্জাবি পরা বঙ্গবন্ধু বাইরে এলেন। বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকিয়ে আশরাফ বলে, ‘স্যার, ইয়ে আপকা বাঙালি হ্যায়।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে সালাম দিই। বঙ্গবন্ধুও সালামের প্রত্যুত্তর দেন। উনি জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি বাঙালি?’ আমি বলি, ‘জি স্যার।’ আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার বাড়ি কোথায়?’ আমি বলি, ‘ভোলা সাব ডিভিশনে।’ আবার প্রশ্ন করেন, ‘তুমি জেলখানায় কেন?’ আমি চিন্তা করলাম, এমনিতেই বঙ্গবন্ধু এখানে টেনশনে আছেন, আটক অবস্থায় আছেন, তাকে যদি আসল কথা বলি, তিনি আরও কষ্ট পাবেন। তাই সেই একই কথা বললাম যে, ‘স্যার, ডিফেন্সে চাকরি করি, ভুল হতেই পারে, সেকারণে এখানে এসেছি।’ উনি শুধু বললেন, ‘আচ্ছা আচ্ছা।’

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আব্দুল মালেক ওই কারাগারে ৫/৬ মাস ছিলেন বলে জানান। তার ওয়ার্ড থেকে বঙ্গবন্ধুর ওয়ার্ড ছিল ৩০/৩৫ গজ দূরে ছিল। লম্বা টিনশেডের একটি কোয়ার্টারে একেবারে উত্তরপাশের রুমে থাকতেন বঙ্গবন্ধু। রুমের সঙ্গে ছোট্ট বারান্দা। তার সামনে একটা টিউবওয়েল। সেখানে গোসল করতেন তিনি।

আব্দুল মালেকের (টুপি ও পাঞ্জাবি পরিহিত) সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বাংলা ট্রিবিউনের যশোর প্রতিনিধি তৌহিদ জামান (বাম পাশে)

 

 

‘বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি নিজেই কাপড় ধুই’

আব্দুল মালেক বলেন, ‘২/৩ দিন পর আবারও গেছি। আশরাফ তখন ভয় পায়। বলে, তুমি যদি যাও, আমার সমস্যা হতে পারে। আবার সেই-ই বলে, চলো মালেক। গিয়ে দেখি স্যার ভেতরে। আশরাফ সালাম দেয়।’ বঙ্গবন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ভালো আছো মালেক’। আমি বলি, ‘হ্যাঁ স্যার, ভালো আছি। টিউবওয়েলের দিকে তাকিয়ে দেখি, একটা উট মার্কা কাপড় কাঁচা সাবান অর্ধেকটা পড়ে আছে। চিন্তা করলাম, স্যার হয়তো এই সাবান দিয়ে কাপড় কাচেন, গোসল করেন। আমি জিজ্ঞেস করি, ‘স্যার, এই সাবানটা দিয়ে কি কেউ আপনার কাপড় ধুয়ে দেয়?’ উনি বলেন, ‘না রে বাবা, আমি নিজেই কাপড় ধুই, গোসল করি’। একথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো। আমি বিড়ি-সিগারেট খাই না। ২০ টাকা করে অ্যালাউন্স পেতাম, সেটা জমাতাম। সেই টাকা থেকে ৪৮ টাকা দিয়ে ইংল্যান্ডের তৈরি তিনটা ইম্পেরিয়াল ল্যাদার সাবান কিনি। আশরাফকে বলি, আমি যদি বঙ্গবন্ধুকে তিনটা সাবান দিই, তুমি কি কাউকে কিছু বলবা? আশরাফ বলে, না বলবো না। তুমি দুই পকেটে ভাগ করে নাও, যাতে কেউ বুঝতে না পারে। বেশি ভয় ছিল সুবেদার মেজর রশিদকে। টের পেলে কাউকে ছাড়বে না।’

পরদিন খাবার নিয়ে আশরাফের সঙ্গে মালেক ফের যান বঙ্গবন্ধুর কাছে। তিনি জানান, ‘গিয়ে বলি, ‘স্যার কিছু মনে করবেন না। আপনার জন্য তিনটা সাবান নিয়ে এসেছি।’ শুনে বঙ্গবন্ধুর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে।বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মালেক, আমার ছেলেমেয়েদের দেখতে পাই না। তোমারে দেখে ভালোও লাগছে, খারাপও লাগছে। আজ  তুমি আমার জন্য সাবান নিয়ে আসছো। এইখানে আমার সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসে না।’

সাবানগুলো হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ‘মালেক তোমার মুখটা গ্রিলের কাছে আনো।’

মালেক গ্রিলের কাছে গেলে তিনি দুই হাত দিয়ে তার মুখটা টেনে নিয়ে একটা চুমু দেন এবং বলেন, ‘বাবা, আমি যদি বেঁচে বাংলাদেশে ফিরতে পারি, তুমি আমার সঙ্গে দেখা করো। তোমার মতো আমার ছেলেমেয়ে আছে। তারাও আমাকে দেখতে পারছে না। দেশে আটক থাকলেও তো তারা দেখতে পেতো। এরা আমাকে মেরে ফেলবে, না জীবিত রাখবে তা আল্লাহই জানেন।’

মালেক বলেন, যতবারই গেছি, ‘দেখি বঙ্গবন্ধু বুকে দুই হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের দেখলেই দুই হাত ছেড়ে বাইরের দিকে আসতেন। ঘরের বারান্দার সঙ্গে একটা গ্রিল গেট ছিল,সেই গেট দিয়েই তাঁকে খাবার দেওয়া হতো।’

চাউল আপকা লিয়ে, রুটি হামারা খানা হ্যায়

মালেক জানান, ‘জেল কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে ভাত খেতে দিতো। সেই ভাতে এক ইঞ্চির চেয়েও বড় বড় পোকা ভরা থাকতো।পোকা বেছে বঙ্গবন্ধু সেই ভাত খেতে চাইতেন না। বেশকিছু দিন তিনি (মালেক)পোকা বেছে ভাত গরম করে বঙ্গবন্ধুর কাছে পাঠাতেন।’

বঙ্গবন্ধু একদিন দুঃখ করে বললেন, ‘মালেক, রুম চেক করতে আসা এক অফিসারকে বললাম, আমি ভাত খাবো না, আমাকে রুটি দেন। অফিসার আমাকে বলে, ‘চাউল খানেকে লিয়ে আপ দেশকে টুকরা টুকরা কর দিয়া, ইয়ে চাউল আপকা লিয়ে, রুটি হামারা খানা হ্যায়।’

বঙ্গবন্ধুর কাছে একথা শুনে রুমে ফিরে আশরাফকে ঘটনা খুলে বলেন মালেক। তাকে অনুরোধ করেন, বঙ্গবন্ধুকে রুটি দিতে। আশরাফ রাজি হয়,কিন্তু ভাত রান্না বন্ধ করা হয় না। মালেক ও আশরাফ ভাত ভাগাভাগি করে খেয়ে নিতেন, বঙ্গবন্ধুকে রুটি দিতেন। রুটি পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি।

আব্দুল মালেক বলেন,‘লায়েলপুর জেলখানার গেট থেকে ৪০/৫০ গজ ভেতরে একটা একতলা বিল্ডিংয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্য ট্রাইব্যুনাল বসতো। সপ্তাহে ৫/৬ দিনই ট্রাইব্যুনাল বসতো। হেলিকপ্টারে করে প্রায় একশ’র ওপরে ফ্লাগ স্টাফ অফিসার আসতেন। ভেতরে কী হচ্ছে, তা আমরা বাইরে থেকে দেখতে পেতাম না। বঙ্গবন্ধুর কাছে কখনও জিজ্ঞেস করিনি।’

মালেক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু প্রায়ই জিজ্ঞেস করতেন, ‘মালেক, তুমি দেশের কোনও খবর জানো?’ আমি বলতাম, ‘স্যার, আপনিও যেখানে বন্দি, আমিও সেখানে।’ পরে দেখা হলে আবারও জিজ্ঞেস করতেন, ‘দেশের কোনও খবর পাইছো?’ উনারে যখন জেলখানা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়, সম্ভবত উনি আগে থেকে জানতেন না। জানলে যাওয়ার আগে নিশ্চয়ই আমাকে বলে যেতেন। আশরাফের কাছে একটা রেডিও ছিল। সে বিবিসি শুনতো। সেখান থেকেই আমরা জানতে পারি।’

দুই বার চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে পারিনি

১৯৭৩ সালে দেশে ফেরেন আব্দুল মালেক। তিনি বলেন,‘বিমানবন্দর থেকে আমাদের সোজা নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। সেখান থেকে দুই মাসের ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। পরে যশোর সেনানিবাসের সেভেন ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সে জয়েন্ট করতে বলা হয়। এখানকার সিও সাহেবের অর্ডারলি ছিলাম। এরমধ্যে দুইবার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করি। ধানমণ্ডির বাসাতেও গিয়েছিলাম। কিন্তু সফল হইনি।’

তিনি বলেন, ‘একদিন সেভেন ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স থেকে একটি গাড়ি যশোর থেকে ঢাকায়  ওষুধ আনার জন্য যাবে। সিও সাহেবের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে গাড়িতে ঢাকায় গেলাম আমরা ১০/১১ জন। এফএমএসডিতে উঠে মেসে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আমার লক্ষ্য ছিল, পরদিন সকালে সবার আগে উঠে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাব। সকাল সকাল উঠে মেসের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁত মাজছি। প্যান্ট-শার্ট পরা এক ব্যক্তি সাইকেল চালিয়ে আমার কাছে এসে ধমক দিলেন, ‘আপনি এখানে ঘোরাঘুরি করেন ক্যান, ভেতরে যান।’

মালেক তাকে বলেন, ‘দাঁত ব্রাশ করছি।’

উনি আবারও ধমকের সুরে বলেন, ‘আপনি কিছু জানেন না, শেখ সাহেবের পুরো পরিবার রাতে মারা গেছেন। দেশের অবস্থা জানেন না? যান, ভেতরে যান।’

একথা শুনে সেখানেই একটি গাছের নিচে বসে পড়েন মালেক। সারাদিন কিছু খেতে পারেননি। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার আশা তার আর পূরণ হলো না।

শেখ হাসিনাকে শোনাতে চাই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি

মালেক বলেন, ‘সেনাবাহিনীর চাকরি শেষে এলপিআরে গিয়েই আবার বিমানবাহিনীতে চাকরি হয়। সেখান থেকে ১৯৯৭ সালে অবসর গ্রহণ করি। ছোট চাকরি। বিধি ভঙ্গ করে এসব কথা কখনও বলতে পারিনি। সময়ও অনুকূলেও ছিল না। এসব কথা বলতে বলতে এতোদিন কেবল পরিবারের লোকজনের কানই ঝালাপালা করেছি। একাত্তর বছর বয়সে এসে এখন শুধু একটাই আশা, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে শোনাতে চাই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি।’

/এফএস/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
ওপারের গোলার বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন