X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘সপ্তর্ষি এখনও বাবার অপেক্ষায়’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:০২আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:৫০

‘আমরা চার বোন। তিনজনের বিয়ে হয়েছে। এ লেভেল পড়ুয়া ছোট বোন সপ্তর্ষি সরকার এখনও বাবার জন্য অপেক্ষায় থাকে। আমাদের কোনও ভাই নেই। তিন বোন যে যার স্বামীর বাড়িতে থাকি। বাবার শোকে আমাদের মা অর্চনা সরকার ধীরে ধীরে অসুস্থ্ হয়ে পড়ছেন।’ সোমবার নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা জানান নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের কন্যা সুস্মিতা সরকার।

রায় ঘোষণার পর অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের কন্যা সুস্মিতা সরকার আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুলসহ পাঁচ জনকে অপহরণের দৃশ্য দেখে ফেলায় চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকেও চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাবের একটি দল। সেদিন রাতেই অপর পাঁচ জনের সঙ্গে তাদেরও হত্যা করা হয়।

এ ঘটনার প্রায় পৌনে তিন বছর পর সোমবার রায় ঘোষণা করা হয়।প্রধান আসামি নূর হোসেন, লে. কর্নেল সাইদ, মেজর আরিফুল, লে. কমান্ডার রানাসহ মোট ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সোমবার সকাল পৌনে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে হাজির হন সুস্মিতা। একেবারে পেছনের বেঞ্চে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটির পাশে গিয়ে বসেন। রায় ঘোষণার পর সুস্মিতার চোখ বেয়ে পড়তে থাকে নোনা জল। মোবাইল ফোনে কাউকে রায়ের খবরটি জানাতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার পেশায় চিকিৎসক সুস্মিতা সরকার বলেন,‘আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। উচ্চ আদালতের প্রতিও আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে। রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
সুস্মিতা সরকার বলেন,‘আমার বাবা নিজেদের জন্য না করতে পারলেও অন্যের জন্য সব সময় কাজ করতেন। অন্যের জন্য নিজের জীবনটা দিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আমাদের বাসায় যিনিই আসতেন বাবা নিজ হাতে খাওয়াতেন। আমাদের বাড়িতে কেউ এসেছেন আর না খেয়ে গেছেন, এমন একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি বাবাকে নিয়ে গর্ব করি যে, আমি গর্বিত সন্তান।’
সুস্মিতা বলেন,‘আমরা খুব সুখী পরিবার ছিলাম। আমার ছোট বোনকে খুব আদর করতেন বাবা। ও এখনও বিশ্বাস করে, বাবা ফিরে আসবে। বাবা নিজে খেতে না পারলেও অন্যদের খাওয়াতেন। তিনি কখনও ক্রিমিনাল কেস করেননি, তবুও তাকেই ক্রিমিনালদের হাতেই মরতে হলো।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন একজন অসম্ভব সৎ মানুষ। আমরা তাকে বলতাম, আমাদেরই তো নেই তুমি মানুষকে সবকিছু কিভাবে দিয়ে দাও। বাবা বলতেন, ‘আমি যখন না থাকবো দেখবে তোমাদেরকেও কেউ না কেউ সাহায্য করবে।’ এখন বাবার কথাগুলোর মর্ম বুঝতে পারি। আমরা এখনও বাবার প্রত্যাশায় থাকি।’
সুস্মিতা সরকার আরও জানান,‘আমরা চার বোন। তিনজনের বিয়ে হয়েছে। এ লেভেল পড়ুয়া ছোট বোন সপ্তর্ষি সরকার এখনও বাবার জন্য অপেক্ষায় থাকে। সঙ্গে থাকি আমরাও। আমাদের কোনও ভাই নেই। তিন বোন যে যার স্বামীর বাড়িতে থাকি। আমাদের মা অর্চনা সরকার ধীরে ধীরে অসুস্থ্ হয়ে পড়ছেন।’
সুস্মিতা বার বার তার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, ‘এখন রায় কার্যকর হলেই আমার বাবার পরম আত্মা শান্তি পাবে।’

/এপিএইচ/আপ-এমও/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আপাতত মেনশন নয়, আপিল বিভাগে সিরিয়াল অনুযায়ী চলবে মামলার শুনানি
আপাতত মেনশন নয়, আপিল বিভাগে সিরিয়াল অনুযায়ী চলবে মামলার শুনানি
ধূসর ছবির ঝকঝকে প্রিন্ট!
ধূসর ছবির ঝকঝকে প্রিন্ট!
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
আমান উল্লাহ আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আপিল বিভাগ
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?