X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভাত কুমার থেকে জঙ্গি আবদুল্লাহ!

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ
২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৫:৫৩আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ২১:০২

প্রভাত কুমার, ধর্মান্তরিত হওয়ার পর আবদুল্লাহ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় যে বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা ছিল সেই বাড়ির মালিক একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তার নাম আবদুল্লাহ। দেশজুড়ে এত সতর্কতা জারির পরেও আব্দুল্লাহ নিজের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা গড়ে তোলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেছে সে নিজেও জঙ্গি। তবে তাকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বাড়িটি ঘিরে রাখার আগেই সে পরিবারসহ পালিয়েছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকেই সে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করছে। ঠনঠনেপাড়ায় বসবাস করলেও এলাকাবাসীর সঙ্গে তার খুব একটা সম্পর্ক ছিল না।

স্থানীয়রা জানান, আবদুল্লাহ’র বয়স প্রায় ৪০ বছরের মতো হবে। পাঁচ বছর আগে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এর আগে তার নাম ছিল প্রভাত কুমার। তার বাবার নাম চৈতন্য বাউতি। মা সন্ধ্যা রানী। আবদুল্লাহরা তিন ভাই। বড় ভাই দিলীপ বিশ্বাস, মেঝ ভাই বিপুল বিশ্বাস ও সবার ছোট আব্দুল্লাহ। আবদুল্লাহ তিনটি বিয়ে করেছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। প্রভাত কুমার থেকে জঙ্গি আবদুল্লাহ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে প্রভাত একটি বিয়ে করে। সেই ঘরে তার একটি মেয়ে রয়েছে। এরপর সে স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়। পরে মেঝ ভাই বিপুল বিশ্বাসের শ্যালিকাকে প্রেম করে বিয়ে করে। সেই ঘরে দুটি ছেলে সন্তান হয়। পরে তাকেও ছেড়ে দেয় প্রভাত। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়ে ফাতেমা ওরফে রুবিনাকে বিয়ে করে আবদুল্লাহ। এ ঘরে তার আয়েশা (২) নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

প্রতিবেশী আসলাম, ইউসুফ আলী ও চাঁদ আলী জানান, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর আবদুল্লাহ পোড়াহাটির ঠনঠনেপাড়ায় ওয়াহেদ নামের একজনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকায় মাঠের মধ্যে এই জমি কেনেন। সেখানে একটি দুই রুমের টিন শেড বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেন। প্রতিবেশীরা দাবি করেন, আবদুল্লাহ’র বাড়িতে কেউ যেত না। মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে অচেনা কিছু লোক তার বাড়িতে যাওয়া-আসা করতো। বাড়িটি টিন দিয়ে চারিদিক থেকে ঘেরা ছিল। বাইরে থেকে কিছুই দেখা যেত না। বাড়িতে থাকলেও কেউ ডাকলে আবদুল্লাহ সাড়া দিত না। সে সবার থেকে আলাদা ও বিচ্ছিন্নভাবে চলাফেরা করতো।  ঝিনাইদহে জঙ্গি আস্তানা

প্রতিবেশী শিরিনা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবুদল্লাহর স্ত্রী ফাতেমা ওরফে রুবিনা কারও সঙ্গেই কথা বলতো না। সবসময় মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতো। তার স্ত্রীকে কেউ দেখতে পারতো না। সব সময় বাড়ির গেট তালা লাগিয়ে রাখত।’

একই গ্রামের টিপু জোয়ার্দ্দার জানান, ‘ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে আবুদল্লাহ পোড়াহাটির শরিফুল ইসলামের তেল পাম্পে ১৪/১৫ বছর শ্রমিকের কাজ করেছে। বর্তমানে সে আলমসাধু (স্যালো ইঞ্জিন চালিত যান) গাড়ি চালাতো। আলমসাধুতে সে কাঠের গুড়ি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে ঘুরতো। বিভিন্ন সময় তার সঙ্গে মোটরসাইকেলে অপরিচিত লোকদের আসতে দেখা যেত।’

জামিরুল ইসলাম নামে গ্রামের আরেক ব্যক্তি জানান, ‘আবদুল্লাহ গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তো না। গ্রামের মসজিদে নাকি তার নামাজ হবে না এই কথা বলতো। তাই সে শহরের মারকাজ মসজিদে নামাজ পড়তে যেত। গ্রামের কোনও লোকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এমন আমরা দেখিনি।’

তবে আবদুল্লাহ জঙ্গি হতে পারেন এই কথা জানার পর গ্রামের লোকজন বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন। আসলেই দোষী হলে তাকে গ্রেফতার করা উচিত বলে মনে করেন তারা।

ঝিনাইদহে জঙ্গি আস্তানা

 

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পোড়াহাটি গ্রামের ঠনঠনেপাড়ায় আবদুল্লাহর বাড়িটি ঘিরে রাখে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ রাতের জন্য অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেন। পরদিন, শনিবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে অপারেশন ‘সাউথ প’ (দক্ষিণে থাবা) শুরু হয়। অপারেশন চলাকালে ওই বাড়ি থেকে থেকে ২০ ড্রাম হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, ১০০ প্যাকেট লোহার বল, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৯টি সুইসাইডাল বেল্ট, বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রিক সার্কিট, ১৫ টি জিহাদি বই, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, ১টি মোটরসাইকেল, ১টি চাপাতি, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট ও ২ টি বোমা নিস্ক্রিয় করা হয় বলে ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি শেখ দিদার আহম্মেদ জানান।

অপারেশনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), র‌্যাব, পুলিশ, পিবিআই, এলআইসি, বোমা ডিসপোজাল ইউনিট, খুলনা রেঞ্জ পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার শতাধিক সদস্য অংশ নেন।

ডিআইজি দিদার আহমেদ আরও জানান, বাড়িটিকে জঙ্গিদের বোমা তৈরির কারখানা বলা যেতে পারে। এই বাড়িতে তিন-চার জন জঙ্গি ছিল। তারা আগেই পালিয়ে গেছে। এই জঙ্গিদের সবাই জেএমবি ও নব্য জেএমবির সদস্য। এই বাড়িতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভাগীয় পর্যায়ের লোকজন আসা যাওয়া করতো।

/এফএস/ টিএন/

আরও পড়ুন- 


রানা প্লাজার নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধান মেলেনি আজও

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লবণাক্ততায় আক্রান্ত উপকূলীয় ১৮ জেলার ৯৩টি উপজেলা
লবণাক্ততায় আক্রান্ত উপকূলীয় ১৮ জেলার ৯৩টি উপজেলা
চট্টগ্রামে দন্ত চিকিৎসক হত্যা: মামলা ডিবিতে হস্তান্তর
চট্টগ্রামে দন্ত চিকিৎসক হত্যা: মামলা ডিবিতে হস্তান্তর
ব্রাজিলে বৃষ্টিপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, এখনও নিখোঁজ অনেকে
ব্রাজিলে বৃষ্টিপাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৮, এখনও নিখোঁজ অনেকে
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
হারিয়ে গেছে প্রাণ, নদীর বুকে বুনছে ধান
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?