X
বুধবার, ০১ মে ২০২৪
১৮ বৈশাখ ১৪৩১

শতবর্ষী এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট: এখনও সিদ্ধান্তহীন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, অনড় চেম্বার অব কমার্স

মোয়াজ্জেম হোসেন, লালমনিরহাট
১৩ নভেম্বর ২০১৭, ২০:২০আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৭, ২১:০৩

ঐতিহ্যবাহী এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (রাজশাহী) প্রধান ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা অবশেষে শতবর্ষী এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট চত্বর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এই ঘটনায় কোনও ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা চত্বরে স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্তে এখনও অটল লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।
গত ২ নভেম্বর রেল কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে এম টি ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘এলসিসিআই মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহল তীব্র ক্ষোভ জানায় এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবরও প্রকাশিত হয়। পরে শনিবার (১১ নভেম্বর) সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (রাজশাহী) প্রধান ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান।
এর আগে, লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের স্টেট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সরকারের দুই প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিও সরেজমিন পরিদর্শন করেন এই ইনস্টিটিউট। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কারও পক্ষ থেকেই দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি।
এদিকে, এম টি ইনস্টিটিউট চত্বরে স্কুল নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দা মো. রাজু। তিনি জানান, সোমবার (১৩ নভেম্বর) ওই চত্বরে স্থাপন করা টিনের চালা খুলে নিয়ে গেছে। তবে কারা, কেন টিনের চালা খুলে নিয়ে গেছে, সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি তিনি। আর ইনস্টিটিউট চত্বরে মজুত রাখা ইট ও ভিত্তিপ্রস্তর সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্তও সরানো হয়নি।
ইনস্টিটিউট চত্বরে স্কুলের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল চালা; সোমবার সন্ধ্যায় তা খুলে নেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি একেএম কামরুল হাসান বকুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টিন চুরি হয়ে যাচ্ছিল বলে তা খুলে সরিয়ে আনা হয়েছে। এরই মধ্যে ছয়টি টিন কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। আপাতত নির্মাণ কাজ স্থগিতও আছে। তবে এলসিসিআই মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাট্রিজ কর্তৃপক্ষ সরে আসেনি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।’
লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা রেজুয়ানুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এম টি হোসেন ইনস্টিটিউটের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ স্টেট অফিসার সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বা হবে, তা আমি বলতে পারছি না। আসলে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা আছে। তবে বিষয়টি এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হাতে। এখানে আমার কিছুই করার বা বলার নেই।’
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট সম্পর্কে রেলওয়ের স্টেট বিভাগকে (ভূ-সম্পদ) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (রাজশাহী) প্রধান ভূ-সম্পদ কর্মকর্তাও এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কী ফলাফল হয়েছে তা এখনও আমি জানতে পারিনি। বিষয়টি জেনে পরে আপনাদের জানানো হবে।’
ভারত সফরে যাওয়ার আগে রবিবার (১২ নভেম্বর) লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এম টি হোসেন ইনস্টিটিউটকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার নাজমুল ইসলামকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ যাচাই কাজ চলছে।’
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (রাজশাহী) প্রধান ভূ-সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের কাছে রেলওয়ের প্রয়োজনীয় জমি লিজ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মনে করলে যেকোনও অপ্রয়োজনীয় জমি লিজ দিতে পারে। তবে সেসব জমির প্রয়োজনীয়তা বা অপ্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা হয়। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট পড়ার কথা নয়। কিন্তু আশপাশের পরিত্যক্ত জমি রেলওয়ে চাইলে লিজ দিতে পারে।’
এম টি হোসেন ইনস্টিটিউটের ক্ষেত্রে রেল প্রশাসন শাখার সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনের শর্ত মানা হচ্ছে না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে এখনও আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করা হবে।’
শিল্পকলা একাডেমির বিজ্ঞপ্তি ইতিহাস ঘেঁটে ও লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় লালমনিরহাটে প্রায় ২২ হাজার রেলওয়েকর্মীর বসবাস ছিল। তাদের বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য দক্ষিণ সাপটানা মৌজা (বাবুপাড়া) এলাকায় ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট। দক্ষিণ সাপটানা মৌজার ৩১০৫ নম্বর দাগে ২ দশমিক ৭৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই মঞ্চটি রেলওয়ে অডিটোরিয়াম নামেও পরিচিত। এক সময় এই ইনস্টিটিউটে ছিল একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারও।
এদিকে, দেশের শতবর্ষী নাট্যমঞ্চ সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। তাদের তালিকাভুক্ত মঞ্চগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে লালমনিরহাটের এম টি ইনস্টিটউটের নাম। রবিবার (১২ নভেম্বর) একাডেমির মহাপরিচালকের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দেশের ৩৫টি শতবর্ষী নাট্যমঞ্চ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব শতবর্ষী মঞ্চগুলোকে ঘিরে নাট্যোৎসব আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে শিল্পকলা একাডেমির।
ঐতিহ্যবাহী এই ইনস্টিটিউট দখলের কৌশলের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে সংগীত শিল্পী ও লেখক নূরিতা নুসরাত খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এম টি হোসেন ইনস্টিটিউটে এক সময় বিশ্বের নামকরা অপেরা, থিয়েটার দল এসে অভিনয় করেছে। এখানকার ঘূর্ণায়মান মঞ্চের আদলে যশোর ও লন্ডনেও দুইটি ঘূর্ণায়মান মঞ্চ রয়েছে। ওই দু’টি মঞ্চ সচল থাকলেও রহস্যজনক কারণে এটি আজও সংস্কার করা হয়নি। এই প্রজন্মের মানুষ ও একজন সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে রাহুগ্রাস থেকে রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।’
লালমনিরহাট উন্নয়ন আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক সুপেন্দ্র নাথ দত্ত বলেন, ‘এম টি হোসেন ইনস্টিটিউটটি নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রতিষ্ঠানটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
এ সংক্রান্ত আগের খবর:
স্কুলের নামে শতবর্ষী ঐতিহ্য এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট দখলের পাঁয়তারা!

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের নিয়ে আ.লীগ কী ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে!
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপি’র আত্মীয়দের নিয়ে আ.লীগ কী ‘ইউটার্ন’ নিচ্ছে!
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
‘মানুষের কত ফ্রেন্ড, কাউকে পাশে পাইলে আমার এমন মৃত্যু হইতো না’
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
বরগুনায় দুই সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা
ভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগ, সেমিফাইনালভিনিসিয়ুসের জোড়ায় প্রথম লেগে বায়ার্নকে জিততে দেয়নি রিয়াল
সর্বাধিক পঠিত
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুয়াডাঙ্গা জেলায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
এক ফ্রেমে এত ‘সুন্দরী’, স্মৃতিকাতর সকলেই!
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
সাতক্ষীরার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস