X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
লক্ষ্মীপুর-৩ আসন

বিএনপির দুর্গ দখলে মরিয়া আ. লীগ, প্রচারণায় ব্যস্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

সাইফুল ইসলাম স্বপন, লক্ষ্মীপুর
১৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৫৪আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:১৯

বিএনপির দুর্গ দখলে মরিয়া আ. লীগ, প্রচারণায় ব্যস্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লক্ষ্মীপুর সদর আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হেভিয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে নবীন মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও জমজমাট প্রচার-প্রচারণায় সময় পার করছেন। বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুর-৩ আসনটি এবার দখলের জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপিও সেখানে কোনওভাবে ছাড় দিতে রাজি নয়। আসনটিতে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে লক্ষ্মীপুরে প্রধান দলগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বেশ জোর প্রচার চালাচ্ছেন। লক্ষ্মীপুর সদর আসনের বর্তমান এমপি শাহাজাহান কামাল বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। গত জানুয়ারি মাসে তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দলীয় অবস্থান ভালো হলেও সেখানেও এবার আওয়ামী লীগ থেকে ভিন্ন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা নিজেদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে বিএনপির নেতারাও আসনটিতে দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। কেউ কেউ দলীয় ফোরামে ব্যাপক সক্রিয়, আবার মাঠে ময়দানে ভোটারদের সঙ্গে পরিচিতির জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। এছাড়া ডিজিটাল ব্যানারে জনসচেতনতামূলক বাণী দিয়েও জনগণের কাছে নিজের ইমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তারা। এসব প্রচারণায় নিজের ছবি ও পরিচয়ও তুলে ধরছেন তারা।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বেশির ভাগ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। স্বাধীনতার পর দ্বিতীয়বারের মতো গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত একেএম শাহজাহান কামাল নির্বাচিত হন। অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সাবেক ছাত্র নেতা বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী নির্বাচিত হন। পঞ্চম ও সপ্তম র্নিবাচনে ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে এ্যাডভোকেট খায়রুল এনাম র্নিবাচিত হন। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ র্নিবাচনে নুরুল আমিন ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে র্নিবাচিত হন। ৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে একবার মোহাম্মদ উল্ল্যাহ এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনটি মূলত বিএনপির ভোটার বেশি থাকায় বঙ্গবন্ধু প্রথম সংসদ ছাড়া কখনো আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেননি। ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা মাস্টার সফিক উল্ল্যাহ দাড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
লক্ষ্মীপুর-৩ এ সংসদীয় আসনে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই মূল লড়াই হবে। তাই সেখানে দল দুটির বেশ কয়েকজন নেতা মনোনয়ন পাওয়ার আশায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে উপস্থিত থাকছেন। লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুও জেলায় নানাভাবে তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এমএ সাত্তার নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। আরেক মনোয়নয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও ডেলিকেট গ্রুপের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। তরুণ এই নেতাও জনসংযোগ করছেন। জেলা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য বদরুল আলম শ্যামলও আগামী সংসদ র্নিবাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন।
বর্তমান এমপি একেএম শাহজাহান কামাল বলেন, ‘আমি এলাকার উন্নয়নে সদা কাজ করে যাচ্ছে। দলীয়, সামাজিক অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত থাকি। এলাকার সঙ্গে আমার কোনও দূরত্ব নেই। দলীয়ভাবেও আমার ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নাই। এখানে আগামী নির্বাচনে আমি নমিনেশন পাবো ইনশাআল্লাহ।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, ‘২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমাদের নেতা-কর্মীরা যখন ঘরবাড়ি ছাড়া তখন আমি নেতাকর্মীদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। জেল থেকে মুক্ত করতে কাজ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ২০১৫ সালে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর থেকে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সভা-সমাবেশ, মতবিনিময়ের মাধ্যমে দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার কাজ করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। দলের মধ্যে এখন শৃঙ্খলা আছে। নেতাকর্মীরা চাঙ্গা আছে। আমাদের নেত্রী আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ ও শ্রমের মূল্যায়ন অতীতে করেছেন আশা করি ভবিষ্যতেও করবেন।’
লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তাহের বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের সুখে-দুঃখে আমি পাশে ছিলাম, এখনো আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। সদর আসনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।’
অধ্যক্ষ এমএ সাত্তার বলেন, ‘বেকারত্ব দূরীকরণ ও যুব সমাজকে কারিগরী শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করতে আমি লক্ষ্মীপুরে শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ কয়েকটি কারিগরী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। এছাড়াও অধ্যক্ষ এমএ সাত্তার ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে সদর উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজের অসহায় মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখেছি। দল থেকে মনোনয়ন পেলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য বদরুল আলম শ্যামল বলেন, ‘দলের জন্য কাজ করছি, নৌকার জন্য প্রচার-প্রচারণা করছি। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সুখে দুখে পাশে আছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো, দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে ইনশাল্লাহ বিজয়ী হবো।’ আর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দলের জন্য কাজ করছি। এলাকার উন্নয়ন ও বেকার সমস্য সমাধান করবো। দল যদি আমাকে মনোয়ন দেয় লক্ষ্মীপুর-৩ আসন হবে দেশের মধ্যে মডেল।’
এদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও দলীয় সমাবেশসহ জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু মনোনয়ন পেতে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যাপক তৎপর রয়েছেন। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধও ব্যাপক আকার নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সমর্থকরা পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক কথার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী জানান, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনকে সক্রিয় করতে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘হামলা-মামলা মোকাবিলা করে ছাত্রজীবন থেকে দলের সঙ্গে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো আমার বিরুদ্ধে এখনও অর্ধশতাধিক মিথ্যা মামলা রয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন ছাড়াও নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।’ সারাদেশে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হলে বিএনপি ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে এবং সরকার গঠন করবে বলেও আশাবাদী এই নেতা।
জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু বলেন, ‘আমি সব সময় মাঠে আছি এবং ছিলাম। তৃণমূল থেকে দায়িত্ব পালন করে জেলা সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছি। বিগত ২০১৩ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনেও মাঠে নেতৃত্ব দিয়েছি। এ সময় সরকারী বাহিনীর গুলিতে আমি মারাত্মক আহত হই। তাছাড়া ১/১১ এরপর বিনা অপরাধে দীর্ঘদিন আমি কারাবাস করি। দলীয় নেত্রীর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে লক্ষ্মীপুর-৩ অথবা লক্ষ্মীপুর-২ যে আসন থেকেই হোক আমাকে মনোনয়ন দেবেন ।’
নির্বাচন উপলক্ষে প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন জাতীয় পার্টির নেতারাও। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) জেলা সাধারণ সম্পাদক এম আর মাসুদ সাংগঠনিকভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন। সাবেক এই ছাত্র নেতা লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের ভিপি ছিলেন। এছাড়া জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলালও এই আসন থেকে সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্যে সাংগঠনিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি ছাত্রজীবনে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের জিএস ছিলেন।

/আরএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
পার্বত্য অঞ্চলে অদৃশ্য শক্তি বলে কোনও কথা নেই: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা