X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিধস ও বন্যার ঝুঁকিতে লাখো রোহিঙ্গা

আবদুর রহমান, উখিয়া
১৫ জুন ২০১৯, ১০:০৩আপডেট : ১৫ জুন ২০১৯, ১৫:০৩

রোহিঙ্গা শিবিরে ভূমিধসের শঙ্কা (ছবি: টেকনাফ প্রতিনিধি) কক্সবাজারে বসবাসরত লাখ লাখ রোহিঙ্গা এই বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যায় ঝুঁকিতে রয়েছে। অবাধে বন কেটে ও পাহাড়ের খাড়া ঢালে ঘর তৈরি না থামায় ঝুঁকি আরও বাড়ছে। ভারি বৃষ্টি শুরু হলে জলাবদ্ধতার কারণে বন্যা এবং পাহাড়ি ঢালের মাটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে রোহিঙ্গারা।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, ১৯৭৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বছরে গড়ে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুনে তা বেড়ে ৮০০ এবং জুলাই মাসে তা ১০০০ মিলিমিটার হয়। এপ্রিল ও মে মাস থেকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও থাকে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে পাহাড় কেটে কেটে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বছর দেড়েক আগেও যেখানে পর্যটন এলাকা কক্সবাজার ও টেকনাফের আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলোর দুই পাশে গাঢ় সবুজ ঘন জঙ্গলসহ পাহাড় ছিল। অবাধে সেসব পাহাড় ও বনের গাছপালা কেটে ঘর তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে ঝুপড়ি ঘরের সংখ্যাও।  রোহিঙ্গা শিবিরে বন্যা ও ভূমিধসের শঙ্কা

উখিয়া কতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) মোহাম্মদ সালে আহমদ বলেন, ‘এবার এখনও সেই রকম ভারি ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়নি। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। অপেক্ষায় আছি ঘরগুলো যদি এর আগেই আরও শক্ত করে বেঁধে দেয়। বর্ষায় দিনের চেয়ে রাতটা বেশি ভয়ে কাটে। ভারি বর্ষণ হলে নির্ঘুম রাত কাটে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ঘরগুলো খুবই দুর্বল। বাতাস হলেই নড়াচড়া করে। তখন ছেলেমেয়েরা খুব ভয় পায়। সামান্য বৃষ্টিতেও আশ্রয় শিবিরে ভয়াবহ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। আবার রোদেও কষ্ট কম না। গরমে কুঁড়ে ঘরে হাঁসফাঁস করতে হয়।’ রোহিঙ্গা শিবিরে ভূমিধসের শঙ্কা

উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘যারা পাহাড়ের খাড়া ঢালে ঘর তুলেছে তারা বেশি ঝুঁকিতে আছে। ভারি বৃষ্টি হলেই ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। আর যারা নিম্নাঞ্চলে থাকে তাদের বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বর্ষাকাল যত ঘনিয়ে আসবে রোহিঙ্গাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। কারণ মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি থাকে।’  
জেলা বন বিভাগ সূত্র মতে, উখিয়া রেঞ্জে কুতুপালং, থাইংখালী, বালুখালী-১, বালুখালী-২, মধুরছড়া, তাজমিনার ঘোনা, নকরার বিল, সফিউল্লাহঘাটা, বাঘঘোনা, জামতলী, টেকনাফের চাকমারকুল, পুটিনবনিয়া, শামলাপুর, লেদা, নয়াপাড়া, জাদিমুড়া, শালাবাগানসহ আশপাশের পাহাড় কেটে রোহিঙ্গারা বসতি গড়ে তুলেছে। মোট ৮ হাজার একর জায়গায় পাহাড়ি বন কেটে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। টানা বৃষ্টি হলে এসব জায়গা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয়। 
বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)। এই সংস্থার প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘পাহাড়গুলো কেটে যে হারে ঘর নির্মাণ করেছে, তাতে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আবার বনের গাছপালা কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। এই অবস্থায় সামনের বর্ষা মৌসুমে যে কোনও সময় বড় ধরনের পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।’ রোহিঙ্গা শিবিরে বন্যা ও ভূমিধসের শঙ্কা (ছবি: টেকনাফ প্রতিনিধি)
কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ৮ হাজার একর জমি দখল করে বসতি গড়ে তুলেছে। যার বেশিরভাগই পাহাড় ও বন কেটে গড়েছে। এসব জায়গায় টানা বৃষ্টিপাত হলে মাটিগুলো সরে যায়। এতে বড় ধরনের ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড় ও বন কেটে রোহিঙ্গাদের তৈরি করা বসতিগুলোর মধ্যে বর্ষা মৌসুমে কোনগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তা সার্ভে করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’  

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্ষায় দুর্ঘটনা এড়াতে এপ্রিল থেকেই রোহিঙ্গা শিবিরে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কী পরিমাণ রোহিঙ্গা ঝুঁকিতে রয়েছে এটা তালিকা শেষে বলা যাবে। তবে কোনও মানুষ যাতে ভূমিধস ও বন্যার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ না করে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত বছর বর্ষার আগে প্রায় লাখের কাছাকাছি মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সরানো হয়েছিল। এবারও রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।’ 
উল্লেখ্য, এই ভূমিধসের আশঙ্কা থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর হাতিয়ায় অবস্থিত ভাসানচরে স্থানাস্তরের পরিকল্পনা করেছিল সরকার। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করে ওই চরে আবাস তৈরি হলেও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমালোচনার মুখে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর আপাতত স্থগিত রয়েছে। গত এপ্রিলে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন,  ভূমিধসে রোহিঙ্গারা যদি প্রাণ হারায় তবে বাংলাদেশ দায়ী থাকবে না। তার মতে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে বিরোধিতাকারীরাই এ জন্য দায়ী থাকবে।

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে: প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল
পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে: প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
‘আশ্রয়ণ’: গ্রামীণ বসতি রূপান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
ছক্কা মেরেও আউট হলেন মুশফিক !
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা