X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

হাবিপ্রবিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, বঞ্চিত হচ্ছেন মেধাবীরা

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
০৫ জুলাই ২০১৯, ০৮:২৯আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৯, ১০:০৩

হাবিপ্রবি দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) প্রভাষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা ও নিয়ম ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন মেধাবী প্রার্থীরা। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নাম প্রস্তাবের মাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়োগ বোর্ডে রাখার কথা থাকলেও উপাচার্য তা করেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রভাষক নিয়োগে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন খোদ (উদ্যানতত্ব) নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য। বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপাচার্যকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি।

এছাড়াও প্রভাষক নিয়োগের লিখিত, মৌখিক ও প্রদর্শনী ক্লাস পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও নিয়োগ পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগও উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই প্রার্থী উপাচার্যকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ জন কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইটে প্রকাশ হওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অন্যদিকে ১৬ জন কর্মকর্তা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও ২২ জনকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানা গেছে। ফলে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ জন প্রভাষক, ১৬ জন কর্মকর্তা ও ২২ জন কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ৩১ মার্চ ছিল আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার কারণে প্রভাষক ও কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষার তারিখ কয়েকবার পেছানো হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

এদিকে প্রভাষক ও কর্মকর্তা নিয়োগে নোটিশ দিয়ে তারিখ ঘোষণা ও পরীক্ষা গ্রহণ করা হলেও কর্মচারীদের মৌখিক পরীক্ষা গোপনভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এই পরীক্ষার তারিখ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। কর্মচারীদের ২২ জনের মধ্যে ১৮ জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিপন্থীদের স্বজন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল কর্মচারী পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কর্মচারীর ২২টি পদের মধ্যে ১৮ জন ভিসিপন্থীদের স্বজন। তাদের নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা চলছে, এতে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১৬ জন কর্মকর্তা নিয়োগ করার কথা থাকলেও ২২ জনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের সভায় আলোচ্যসূচিতেও বিষয়টি রাখা হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মমিনুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে ১৬টি পদে নিয়োগের কথা থাকলেও ২২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিক। এতে করে যোগ্যদের বঞ্চিত করা হচ্ছে এবং প্রশাসনের নিজস্ব লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা চলছে।

এছাড়া শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। তাদের অভিযোগ নিজস্ব ও পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়ম ভেঙেছেন, নিয়োগ বোর্ডে রেখেছেন নিজস্ব লোক, মেধাবী প্রার্থীদের মূল্যায়নও করেননি তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দাবি করেছেন, অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিএনপি-জামায়তপন্থীরা শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মামুনুর রশিদ বলেন, শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে থাকতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে নাম প্রস্তাব করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটি অনুমোদন করে। তবে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার নিজস্ব কিংবা বিশেষ এলাকার হিসেবে পরিচিতদেরকে নিয়োগ বোর্ডে রেখেছেন। অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মেধাবীদের নিয়োগ দিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অক্ষুণ্ন রাখার দাবি জানান তিনি।

ছাত্রশিবির কিংবা ছাত্রদলের সদস্যদেরকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষকরা চাই যারা যোগ্য ও মেধাবী তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হোক। কিন্তু যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে তা সম্পূর্ণই উল্টো।’

এদিকে উদ্যানতত্ব বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় স্বচ্ছতার অভাব ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তোলে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন নিয়োগ কমিটির সদস্য ও বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শরীফ মাহমুদ। গত ১০ মার্চ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বরাবরে একটি চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি উল্লেখ করেন।

নিয়োগ পাচ্ছেন না যোগ্য প্রার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি অ্যান্ড পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের আবেদন করেন বগুড়ার টলু মিয়ার ছেলে শাকিল ইসলাম। গত ২৮ মার্চ লিখিত, মৌখিক ও প্রদর্শনী ক্লাশ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পান তিনি। তবে তাকে নিয়োগের সুপারিশ না করে তার চেয়ে কম নম্বরপ্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগের চেষ্টা চলছে। এমন অভিযোগে গত ১৩ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন শাকিল। তবে কোনও সঠিক সুরাহা কিংবা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

শাকিল বলেন, ‘সবগুলো পরীক্ষায় আমি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছি। আমি পরীক্ষায় ৭০ নম্বর পেয়েছি, যেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রার্থী পেয়েছেন ৫৬ নম্বর। এরপরেও আমাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় প্রার্থীকে নিয়োগের চেষ্টা চলছে। উকিল নোটিশ পাঠিয়েও কোনও কাজ হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশীদ বলেন, নিয়োগের সিলেকশন কমিটিতে অস্বচ্ছতা ছিল। নিয়মবহির্ভূতভাবে সিলেকশন কমিটি গঠন করায় যোগ্যরা সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও এখানে সুযোগ পায়নি। আরও স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিতশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. বলরাম রায় বলেন, উপাচার্য আসার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়কে অনিয়মের আখড়া হিসেবে গড়ে তুলেছেন। রিজেন্ট বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া ১৬ জনের স্থলে ২২ জনকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব না। কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি, এর বিরোধিতা করে তিনি বলেন, অনেককেই কার্ড দেওয়া হয়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. ফজলুর রহমান দাবি করেন, ‘উপাচার্য মনে করলে রিজেন্ট বোর্ডে লোকজন প্রয়োজনের ক্ষেত্রে কম-বেশি করতে পারেন। শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যহত না হয়, এজন্য যা করার প্রয়োজন সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ শতভাগ আইনগতভাবে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।’

নিয়োগ বোর্ডে নাম প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক হয়েছে, তাই যথেষ্ট। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব নিয়মে চলে।’

তিনি উল্টো অভিযোগ করেন, এর আগেও বিভিন্ন সময় নির্ধারিত নিয়োগ প্রক্রিয়া না মেনেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তখন কোনও অভিযোগ উঠেনি। তার দাবি বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়া আইন মেনে সঠিক নিয়মেই করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কথা বলতে তার বাসভবনে যাওয়া হলেও তিনি কতা বলেননি।

/টিটি/
সম্পর্কিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুজিবনগর দিবস পালনের নির্দেশ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই ধাপে কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ পালনের নির্দেশ
টেস্ট পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি নিলে ব্যবস্থা
সর্বশেষ খবর
শরিফুলের গতিতে উড়ে গেলো শেখ জামাল
শরিফুলের গতিতে উড়ে গেলো শেখ জামাল
ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া কি আলোর মুখ দেখবে?
ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া কি আলোর মুখ দেখবে?
চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলা ২৫ এপ্রিল থেকে
চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলা ২৫ এপ্রিল থেকে
যে কারণে ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছাড়তে উৎসাহী হবে
যে কারণে ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছাড়তে উৎসাহী হবে
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট
তৃতীয় ধাপে যেসব উপজেলায় ভোট