X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাবিপ্রবিতে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

দিনাজপুর প্রতিনিধি
১০ জুলাই ২০১৯, ২৩:০২আপডেট : ১০ জুলাই ২০১৯, ২৩:২৯

 

সংবাদ সম্মেলন দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে নিয়োগ না দিয়ে রাজাকার ও জামায়াত পরিবারের সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার দিনাজপুর প্রেসক্লাবে পৃথক দুটি সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্র মুহিউদ্দিন নুর জামায়াত পরিবারের সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়েও সে শিবিরের রাজনীতি করেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে কটূক্তি করেছে। এছাড়া নিয়োগে হত্যা মামলার আসামিদেরকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত শিক্ষক ড. রমজান আলীকেও বহিষ্কার না করে পরিকল্পিতভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এ সময় প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. বলরাম রায়, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. হারুন-অর রশীদ, অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান ও অধ্যাপক ড. এটিএম সফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সময় একজন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টকে নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হয়েছিল। এছাড়াও বিজ্ঞপ্তিতে ১৬ জন কর্মকর্তা নিয়োগের কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ২২ জনকে, যা পক্ষপাতিত্বমূলক কর্মকাণ্ড।

প্রভাষক নিয়োগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিয়োগে বোর্ডে সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধ্যাপকদের রাখা হয়নি। অনেক মেধাবী যারা প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণ পদক পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদেরকে নেওয়া হয়েছে। উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে, কীটতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। কম নম্বরপ্রাপ্ত হলেও উপাচার্যের নিজস্ব এলাকার এবং আত্মীয়কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রমজান আলীর গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ও ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের সত্যতা পায় এবং স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করে। গত এক বছরে তিনটি রিজেন্ট বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হলেও প্রশাসন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার না করে পরিকল্পিতভাবে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।

মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মমিন সরকারের স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

এদিকে দুপুর ১২টায় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সদর উপজেলার নয়নপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মমিন সরকারের স্ত্রী মনিজা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমার ছেলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করার পরও তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ রাজাকারের সন্তান কেবিএম মুহিউদ্দিন নুরের চাকরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোনও কোটা সংরক্ষণ করা হয়নি, যা একজন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে আমি লজ্জিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ মুক্তিযোদ্ধা কিংবা অন্য কোনও কোটায় চাকরি পাননি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মকর্তা পদে যে পরিমাণে লোকবল নেওয়ার কথা উল্লেখ ছিল, তার চেয়ে বেশি লোকবল নেওয়া হয়েছে, যা রীতিমত আবেদনকারীদের সঙ্গে প্রতারণা। এছাড়াও একাধিক পদে আবেদনকারীদের একাধিক পরীক্ষা না নিয়ে একটিমাত্র লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রত্যেক পদের জন্য আলাদাভাবে পোস্টাল অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফট নেওয়া হয়েছে। হাবিপ্রবির এমন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।’

মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মমিন সরকারের স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন এ ব্যাপারে কেবিএম মুহিউদ্দিন নুর বলেন, ‘আমি ৭ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এতদিন আমার সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ না এলেও এখন করা হচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে এটা করা হচ্ছে। পুলিশ ভেরিফিকেশনে আমি সিলেক্ট হয়েছি। কোনও অভিযোগ থাকলে তো আর চাকরি পেতাম না। আমার কিংবা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলার কোনও যৌক্তিকতা নেই। শুধু হয়রানি করার জন্যই এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।’

এসব ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, ‘কারও মুখ তো বন্ধ রাখা যায় না, আল্লাহর রহমতে শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়েছে। যাদের নিয়োগ হয়েছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা কিংবা হত্যা মামলার আসামি এমনটি পাওয়া যায়নি।’

মুক্তিযোদ্ধার কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, ‘এই মুহুর্তে এ বিষয়ে ঠিক তথ্য দিতে পারছি না, এটি পরে জানাবো।’ যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক ড. রমজান আলীর স্থায়ী বহিষ্কারের বিষয়ে অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, ‘তার বিষয়টি রিজেন্ট বোর্ডে উত্থাপন করা হয়েছে। সবকিছু পর্যালোচনা করে আদালতে মামলা থাকায় সেই মামলা নিষ্পত্তির পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেমের মোবাইলফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

 

/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
ইরান হামলা বন্ধ করলেও ছায়াশক্তিরা সক্রিয়
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
খিলগাঁওয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী