X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, নদীভাঙনে শত শত পরিবার গৃহহীন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
১১ জুলাই ২০১৯, ২০:৫২আপডেট : ১১ জুলাই ২০১৯, ২০:৫৬

নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢলে গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। শত শত পরিবারের বসতভিটে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জরুরিভাবে বালুর বস্তা ফেলার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৪০ সেন্টিমিটার। টানা কয়েকদিনের বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা ২৪ সেন্টিমিটার, ব্রক্ষপুত্র ৫৭ সেন্টিমিটার, ঘাঘট শহর পয়েন্টে ৯৭ সেন্টিমিটার ও  করতোয়া কাটাখালি পয়েন্টে ২০০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বর্ষণ অব্যাহত থাকলে দুই-একদিনের মধ্যে সবকটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভাঙনে গত ১৫ দিনে বিলীন হয়েছে সুন্দরগঞ্জ, সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার অন্তত পাঁচ শতাধিক বসতভিটে, আবাদি জমি, গাছপালা ও ফসলী জমি। অন্যদিকে নদীভাঙনে বসতভিটে হারিয়ে নিঃস্ব মানুষরা আশ্রয় নিচ্ছেন বাঁধসহ উঁচু এলাকায়। অনেকে সহায় সম্বল নিয়ে ছুটছেন অন্য এলাকায়। উঁচু জায়গায় ও অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া কর্মহীন এসব মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন।

এদিকে, টানা বৃষ্টির কারণে জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুররা। তবে বন্যা কবলিত ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খোঁজখবর নেওয়াসহ তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া এলাকার তিস্তা নদী তীরের মানুষরা জানান, উজানের ঢল আর কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাপাসিয়া, পুটিমারি, লালচামাড় ও হরিপুরসহ চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। বর্তমানে কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের বসতভিটেয় পানি উঠেছে। এতে রান্না, খাওয়া ও চলাফেরায় কষ্টকর হচ্ছে। তারা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন গৃহপালিত গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি নিয়ে।

কালাম মিয়া নামে লালচামাড় গ্রামের বাসিন্দা বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির কারণে কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন বেড়েছে। গত ১০ দিনে কাপাসিয়া, হরিপুর, বেলকা ও লালচামাড়সহ কয়েকটি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারের বসতভিটে নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভাঙনে গাছপালা, আবাদি জমি চলে গেছে নদীতে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে লালচামাড়সহ কয়েকটি গ্রাম নদীতে হারিয়ে যাবে।’

শ্রীপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান, চারবার নদীভাঙনে ভিটেমাটি, জমি যা ছিল তা নদীতে চলে গেছে। অনেক কষ্ট করে নদীর তীরে একটি ঘর তুলে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছিলেন। কিন্তু এবারের ভাঙনে আর ঘরে বসবাস করা সম্ভব নয়। এখন ঘর ভেঙে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।’

শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনে দুই সপ্তাহে তার ইউনিয়নের অন্তত দুই শতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা ও ১০০ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভাঙনে শ্রীপুর গ্রামের অর্ধেক নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের শিকার অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধসহ অন্যের জায়গায়। ভাঙন অব্যাহত থাকা এবং নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে তার ইউনিয়নের চারটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া ভাঙনের শিকার ও বন্যা কবলিত মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও ডিসিকে অবহিত করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনও সহায়তা পাওয়া যায়নি।’

এদিকে, সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে কামারজানি বাজারের মাঝিপাড়া ও গোঘাট এলাকার অর্ধশতাধিক বসতভিটে গত চার দিনে নদীতে বিলীন হয়েছে।

কামারজানি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম জাকির বলেন, ‘কয়েক বছরের ভাঙনে নদীতে মাঝিপাড়া, গোঘাট বিলীন হয়েছে। অন্তত পাঁচ শতাধিক বসতভিটে, আবাদি জমি, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেড়ে নিয়েছে তিস্তা। প্রতি বছর ভাঙনে শত শত মানুষ নিঃস্ব হলেও ভাঙন প্রতিরোধে নেওয়া হয়নি স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা। বর্ষা ও ভাঙন মৌসুমে তড়িঘড়ি করে কিছু বালুর বস্তা ফেলে দায় সারে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’

ফোনে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘অবিরাম বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বাড়ছে। তবে সবকটি নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন রোধে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে কামারজানির গোঘাট, হরিপুর, হাট ভরখালীম, এন্ডেরাবাড়িতে সিসি ব্লক বসানোর কাজ চলছে। এছাড়া কামারজানিতে নতুন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা চলছে। সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ঝুকিপূর্ণ বাঁধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় দ্রুত মেরামতের কাজ শুরু হবে।’

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভাতা বাড়ানোর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
ভাতা বাড়ানোর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
সরকারি চাকরির আশ্বাস ও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ
সরকারি চাকরির আশ্বাস ও ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে ভুটানের রাজার সন্তোষ প্রকাশ
অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে ভুটানের রাজার সন্তোষ প্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে