টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় এই ইউনিয়নের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সড়কে পানি ওঠায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে আটটি ইউনিয়নের মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি। বৃষ্টির পাশাপাশি সাঙ্গু নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় চন্দনাইশে এই বন্যা সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের হাশিমপুর বড়পাড়া এলাকায় ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বড় কিছু বাস চলাচল করলেও তা সংখ্যায় অনেক কম। শনিবার রাত থেকে এই সড়ক পানিতে তলিয়ে যায় বলে জানান স্থানীয়রা।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) প্রকল্প পরিচালক জিয়াদ মোহাম্মদ তানজিম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে রাত ৮টায় বাসে উঠি। আমাদের গাড়ি রাত ৩টা ২০ মিনিটে চন্দনাইশ পৌঁছায়। চন্দনাইশের হাশিমপুর বড়পাড়া এলাকায় গাড়ির লম্বা লাইন। সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় বাস চলাচল করতে পারছে না। সড়কের কিছু কিছু অংশে তিন থেকে চার ফিট পানি জমেছে। পরে অনেক কষ্টে বাস সিঙ্গেল লাইনে চালিয়ে সড়কের ওই অংশ পার হয়। মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে আমাদের প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে।’ বর্তমানে তিনি রামুর কাছাকাছি রয়েছেন বলে এ জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার কাঞ্চনাবাদ, হাশিমপুর, বরমা, বরকল, জোয়ারা, ধোপাছড়ি, বৈলতলি ও দোহাজারির অধিকাংশ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় মানুষের বাড়িতে পানি ঢুকেছে। বৃষ্টি পড়লে পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। আবার বৃষ্টি কমে গেলে পানির উচ্চতাও কমে যায়। বন্যায় গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে মানুষ চরম দুভোগে আছে। বিভিন্ন এলাকায় গৃহপালিত পশুপাখি মারা যাচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় সড়কে জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. সোলাইমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলার দুয়েকটি গ্রাম ছাড়া প্রায় সব গ্রামে হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি। এসব এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারণে মানুষের চলাচলে অসুবিধা হয়। ঘরবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় মানুষ রান্নাবান্না করতে পারছে না। অনেকে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।’
বরকল ইউনিয়নের বাসিন্দা হেশামুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাস্তায় পানি, থাকার ঘরে পানি, রান্নাঘরে পানি। ঘরে-বাইরে সবখানে পানি। পানির কারণে রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না। তাই গত দুই দিন ধরে শুকনো খাবার খেয়ে কোনও মতে বেঁচে আছি।’
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম বদরুদ্দোজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলার প্রায় সব জায়গায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ অনেক কষ্টে দিন পার করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে ৬০ টন চাল ও ৩০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দিয়েছি। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়কে কোমর সমান পানি জমে থাকায় কিছু কিছু এলাকায় ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’