X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষুকের বসতবাড়ি স্ত্রীর নামে লিখে নিলেন ভূমি কর্মকর্তা!

নরসিংদী প্রতিনিধি
২৮ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৫৯আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০১৯, ২০:২৯

নরসিংদী নরসিংদীর মনোহরদীতে এক ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার (তহশিলদার) বিরুদ্ধে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে জোর করে ষাটোর্ধ্ব এক বিধবা ভিক্ষুকের বসতবাড়ী নিজের স্ত্রীর নামে লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার একদুয়ারিয়া ইউনিয়নের গোখলা কলিকান্দা গ্রামে।

প্রতারণার শিকার ভিক্ষুক মিনারা বেগম দুখী গোখলা কলিকান্দা গ্রামের আব্দুল আউয়ালের স্ত্রী। অভিযুক্ত তহশিলদার একই গ্রামের টুকুব আলী মুনশীর ছেলে তাজুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে একই জেলার রায়পুরা উপজেলার রায়পুরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সহকারী ভূমি কর্মকতা হিসেবে কর্মরত। ভূমি কর্মকর্তার এ প্রতারণার বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মিনারা বেগম দুখী।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, মিনারা বেগমের বাবা গয়েছ আলী প্রায় ২৫ বছর আগে তার নামে ছয় শতাংশ জমি লিখে দেন। ১৫ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর মিনারা বেগম এক ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে পৈত্রিক বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। বাবার লিখে দেওয়া জমির দলিলটি নিরাপদে রাখার জন্য প্রতিবেশী আকলিমার কাছে রেখেছিলেন তিনি। চার বছর আগে মিনারা বেগম জানতে পারেন তার দলিলটি হারিয়ে গেছে। পরবর্তীতে তিনি দলিলের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকলে প্রতিবেশী তহশিলদার তাজুল ইসলাম তাকে দলিলের নকল তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন। দলিলের নকল আনার পর তাজুল ইসলাম মিনারার কাছে পঁচিশ হাজার টাকা দাবি করেন। তার পক্ষে এতো টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় তহসিলদার তাকে জমি লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় পুলিশের ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে সাড়ে তিন শতাংশ জমি জোর করে স্ত্রী নাছিমা বেগমের নামে লিখে নেন তহশিলদার তাজুল।

তিনমাস আগে ভিটের বাতি আড়াই শতাংশ জমিও স্ত্রীর নামে লিখে দিতে ওই নারীকে ফের ভয়-ভীতি দেখান তাজুল। পরবর্তীতে মিনারা বেগম স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানকে ঘটনা জানান। এরপরই তহশিলদার তাজুল ইসলামের প্রতারণার ঘটনা ফাঁস হয়।

মিনারা বেগম দুখী বলেন, ‘আমার পৈত্রিক ভিটে ছাড়া সহায়সম্বল বলতে আর কিছুই নাই। আমি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার শেষ সম্বল বলতে এক খণ্ড ভিটে মাটি। কিন্তু সেই শেষ সম্বলটুকুও স্থানীয় প্রভাবশালী তহশিলদার মো. তাজুল ইসলাম আমাকে ফাঁদে ফেলে দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার স্ত্রী নাসিমা বেগমের নামে লিখে নিয়েছে। এখন আমাকে নিঃস্ব করে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে।’

তহশিলদার তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মিনারা বেগমের অনুরোধেই আমার স্ত্রী তার জমি কিনেছেন। আমরা তাকে কোনও প্রকার ভয়-ভীতি দেখাইনি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য শরীফ ভূঁইয়া জানান, ‘ভিক্ষুকের সঙ্গে তহশিলদার তাজুল ইসলামের প্রতারণার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গত শনিবার চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সালিশ আহ্বান করা হয়। সালিশে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত হলেও তাজুল ইসলাম আসেননি। এতেই প্রামাণিত হয় তাজুল ইসলাম ওই ভিক্ষুকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’

একদুয়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুজ্জামান মিটুল বলেন, ‘মিনারা বেগম দুখী ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত একজন ভিক্ষুক। ইউনিয়ন পরিষদের সব সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও তাকে আমরা সব সময় সহযোগিতা করে থাকি। আর ওই মহিলার সঙ্গে তহশিলদারের প্রতারণা করাটা খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের প্রতারকদের কঠিন বিচার হওয়া উচিত।’

মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিয়া আক্তার শিমু বলেন, ‘একজন ভিক্ষুকের লিখিত অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। ব্যস্ততার কারণ এখনও তা দেখতে পারিনি। অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
ভারত-পাকিস্তান টেস্ট হবে দারুণ: রোহিত
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ