প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিষ খাইয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে দুই যুবকের বিরুদ্ধে। বিষক্রিয়ায় গুরুতর আহত হয়ে ওই ছাত্রী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় মামলার পর পুলিশ অভিযুক্ত ওই দুই যুবককে আটক করেছে। কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুশামা মো. ইকবাল হায়াৎ এ তথ্য জানান।
ওই ছাত্রীর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই ছাত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল স্থানীয় বখাটে তারিফ ও আরমান। এ ঘটনা মেয়েটি তার বাবাকে একাধিকবার জানায়। পরে তার বাবা বখাটেদের অভিভাবকদেরও বিষয়টি জানান। গত ২৯ আগস্ট সকালে মসূয়া ইউনিয়নের বেতাল গ্রামে ওই ছাত্রী প্রাইভেট পড়তে গেলে এই দুই যুবক তার পথরোধ করে। এ সময় তারিফ আবারও তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে মেয়েটি প্রত্যাখ্যান করে। তারপর অভিযুক্ত দুজন ও তাদের আরও দুই সহযোগী তাকে ঘিরে ধরে। তাদের মধ্যে অভিযুক্ত দুজন তার মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। সহপাঠীরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই ছাত্রীকে প্রথমে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই ছাত্রীর বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার মেয়েটিকে ওই বখাটেরা প্রতিদিনই রাস্তায় উত্ত্যক্ত করতো। ঘটনার দিন মেয়েটিকে তারা বিষ খাইয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। ওরা আমার মেয়েকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আমি তাদের বিচার চাই। আমি ওদের অভিভাবকদের এর আগেও আমার মেয়েকে রাস্তাঘাটে কু-প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি।’
এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘মেয়েটি আমার বিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবী একজন ছাত্রী। যেদিন ঘটনাটি ঘটে সেদিন তার সহপাঠী অনেকেই ঘটনাটি দেখেছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যেমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার চাই।’
হাসপাতালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়েটি বাংলা ট্রিবিউনকে বলে, ‘ছয়-সাত মাস ধরে তারিফ ও আরমান আমাকে রাস্তায় বিরক্ত করছিল। বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিচ্ছিল। আমি ওদের জ্বালায় অতিষ্ঠ। ঘটনার দিন আমি স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিলাম। পথে তারিফ ও আরমানসহ চারজন আমাকে ঘিরে ধরে। তাদের অভিভাবকদের কাছে আমার বাবা কেন বিচার দিলো, এই নিয়ে তারা আমাকে বকাঝকা করে। বলে, সম্পর্ক না করলে আমাকে মেরে ফেলবে। আমি না বলার সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত পেছনে ধরে মুখে কী যেন একটা স্প্রে করে। তারপর আমার মুখ বিষ ঢেলে মুখ চেপে ধরে। আমি তাদের বিচার চাই।’
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তসাক্ষেপে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে ওসি বলেন, ‘ইতোমধ্যে অভিযুক্ত দুজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’
এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে।