নীলফামারীর ডিমলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক বাবুল মিয়ার (২৪) লাশ ও একই ঘটনায় আহত ও ভারতে আটক সাইফুল ইসলামকে (১৪) ৯ দিনেও ফেরত দেওয়া হয়নি। তাদের দ্রুত ফেরত আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসীসহ হতাহতের স্বজনেরা।
এদের মধ্যে নিহত বাবুল মিয়া (২৪) উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন কালীগঞ্জ বক্তার পাড়া গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে। আহত কিশোর সাইদুল ইসলাম (১৪) উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর গ্রামের গোলজার রহমানের ছেলে। ঘটনার পর হতাহতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় বিএসএফ।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই মানববন্ধনে জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার কয়েকশ’ মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বাবুলের বাবা নুর মোহাম্মদ ও মা আছিয়া খাতুন আহাজারি করে বলেন, ‘গত ৯দিন ধরে আমরা বিজিবি, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বাবুলের লাশ ফেরত পাইনি। আমরা সন্তানের মুখটি শেষ বারের মতো দেখে দেশের মাটিতে তাকে দাফন করতে চাই।’ অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর লাশ দ্রুত ফেরত আনার দাবি জানান বাবুলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজিফা আক্তার।
এদিকে বিএসএফের হাতে আটক কিশোর সাইফুলের বাবা গোলজার বলেন, ‘আমার ছেলে নাবালক-অবুঝ। আমরা তাকে আমাদের মাঝে ফেরত চাই।’
হতাহতের স্বজনদের অভিযোগ, তারা ঘটনার পর থেকে ৫১ বিজিবির দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাবে এখন পর্যন্ত নিহতের লাশ ও আহত কিশোরকে ফেরত পাননি। প্রথমদিকে বিজিবি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বললেও পরে সাফ জানিয়ে দেয়, এ রকম কোনও খবর তাদের কাছে নেই। হতাহতের এ ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিজিবি’র পক্ষ থেকে ভারতীয় বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠকও করা হয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরাও বারবার এ ব্যাপারে বিজিবির সাথে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের কোনও বক্তব্য নিতে পারেননি। গত রবিবার ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহারের মাধ্যমে বর্ডারগার্ড ৫১ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসারের (সিও) কাছে লিখিত আবেদন করলেও কোনও অগ্রগতি হয়নি।
সূত্র জানায়, মানববন্ধনের দিন (বুধবার) সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চোরাচালান প্রতিরোধে জনসচেতনতায় ৫১ বিজিবির পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভা করার কথা। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো ৫১ বিজিবির কমান্ডিং অফিসারের (সিও)। এজন্য প্রস্তুত করা হয়েছিলো সভা মঞ্চ। কিন্তু আসেননি সিও, ফলে কোনও সভাও হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে উপজেলার কালীগঞ্জ গরুর বিট-খাটাল সংলগ্ন সীমান্তে ভারতীয় গরু পারাপারের সময় সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ডিমলার দুইজন হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হতাহতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায় বিএসএফ।