চোখে মুখে তার বিগত যৌবনের ফেলা আসা স্বপ্নসাধ আর বয়ে চলা দুর্বিষহ জীবনের না বলা বেদনার ছাপ। সব দুঃখ-কষ্ট প্রকাশের শক্তি হারিয়ে আজ তিনি নির্বাক। ৩০ বছর ধরে ঘরের মধ্যে শিকলবন্দি জীবন কাটানোর পর অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে সেই রতন মিয়াকে (৫৫)। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসানের নির্দেশে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তার ৩০ বছর ধরে বন্দি থাকার তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর সবাই জানতে পারে বিষয়টি। এরপর এর কারণ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ।
পাটুয়া ভাঙা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন জানান, তিনিও এ ঘটনাটি জানতেন না। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছেন যে- সম্পত্তির লোভে চিকিৎসা না করিয়ে রতনকে পাগল বানিয়ে ৩০ বছর ধরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান জানান, ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন বিবেচনায় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে রতনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করি।’ একই সঙ্গে রতন মিয়ার চিকিৎসায় অবহেলার রহস্যও খুঁজে বের করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমানও রতন মিয়ার উচ্চতর চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রতন মিয়া কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ ষাটিয়াদী গ্রামের হাজী বাড়ির মৃত আবদুল মোমেনের ছেলে। ২৫ বছর বয়সে গরু বাঁধার খুঁটির আঘাতে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন অবিবাহিত রতন। অভিযোগ আছে, এরপর আর চিকিৎসা না করিয়ে বসতঘরের বারান্দায় একটি ছোট কক্ষে রতনকে শিকলে বেঁধে রাখেন তার বড় ও ছোট ভাই। সরেজমিন জানা গেছে, রতনকে যে কক্ষে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে, সে কক্ষের দরজা বাইর থেকে তালাবদ্ধ থাকে সবসময়ই। ওই কক্ষের মাঝে একটি কংক্রিটের পিলার তৈরি করে তার সঙ্গে রতনকে বেঁধে রাখা হয়েছে; যার পাশেই রয়েছে বিছানা-বালিশ-মশারি। ওই রুমের একপাশে রয়েছে প্রস্রাব-পায়খানার ব্যবস্থা, কমোড।
আরও খবর: ৩০ বছর ধরে শিকলে বাঁধা