X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘাইছড়িতে সংঘাতে ৯ মাসে ১৪ খুন

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২৩:৫৫আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২৩:৫৯

রাঙামাটি পাহাড়ে থামছেই না মৃত্যুর মিছিল। আবারও সবুজ পাহাড়ে রক্তের লাল হলো। পাহাড়ে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সংঘাতে প্রাণ হারাচ্ছে আঞ্চলিক দলের নেতাকর্মীরা। রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে গত নয় মাসে নিজেদের মধ্যে এলাকা নিয়ন্ত্রণ ও আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাতে ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ৩০-৩৫ জনের মতো। এসব সংঘাতের বিষয়ে আঞ্চলিক দলগুলো একে অপরকে দায়ী করে সব সময়।
সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা ঘটে গত মার্চে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে। সে সময় নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারীদের ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। ওই ঘটনায় প্রায় আটজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। নয় মাইল নামে যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছিল সেটি ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নিয়ন্ত্রিত এলাকা বলে লোকমুখে পরিচিত।

গত ১১ আগস্ট বাঘাইছড়ি নিজ বাসায় জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শতসিদ্ধি চাকমা ও এনো চাকমাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়রা জানায়, ঘটনাস্থল বাবুপড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এলাকায় আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল।

সর্বশেষ বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম গ্রাম নবছড়ায় প্রতিপক্ষের গুলিতে এমএন লারমা সমর্থিত জনসংহতি সমিতির সমর্থক রিপেল চাকমা (২৫) ও বর্ষণ চাকমাকে (২৪) হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মধ্য রাতে এই ঘটনা ঘটে। জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) বাঘাইছড়ি উপজেলার সাধারণ সম্পাদক জ্ঞান জীবন চাকমা এই ঘটনায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র গ্রুপকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘মূলত আমাদের দলকে সাপোর্ট করার দায়ে সন্তু লারমার লোকজন ওই দুজনকে হত্যা করে।’

বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমএ মনজুর বলেন, ‘মধ্যরাতে খুবই দুর্গম এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ পরদিন দুপুরে লাশ উদ্ধারের জন্য রওনা দিলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি।’ 

সংঘাতের নেপথ্যে

পাহাড়ে আঞ্চলিক চারটি দল থাকলেও তারা দুই ভাগে বিভক্ত। চুক্তির পক্ষের সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং চুক্তিবিরোধী প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এখন এক হয়ে কাজ করছে। সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বাধীন জেএসএস (এমএনলারমা) এবং শ্যামলকান্তি চাকমার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ’কে (গণতান্ত্রিক) এক হয়ে কাজ করছে বলে এলাকাবাসী মনে করে।

দুই দশক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সই হয়; যা পরে ‘শান্তি চুক্তি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার সঙ্গে এই চুক্তি সই হয়। সেই সময় গেরিলা বাহিনীর নেতা ও তার সব সদস্যরা অস্ত্র জমা দেয় সরকারের কাছে। চুক্তি পরবর্তী সময়ে পাহাড়ের মানুষের মধ্যে শান্তির বাতাস বইতে শুরু করে। কিন্তু চুক্তি বিরোধিতা করে সন্তু লারমার সংগঠন থেকে বের হয়ে প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গঠিত হয়। ১৯৯৮ সালের ২৬ জুন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা আত্মপ্রকাশ করে।

২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে নানা অভিযোগে সুধাসিন্ধু খীসা ও তারিন্দ্র লাল চাকমা (পেলে)র নেতৃত্বে জম্ম হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে পাহাড়ে আরেক নতুন সংগঠন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে খাগড়াছড়ি জেলায় সাংবাদিক সম্মেলন করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ভেঙে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামের নতুন সংগঠন জন্ম নেয়। এ নিয়ে এখন পাহাড়ে চারটি আঞ্চলিক দলের তৎপরতা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ছুফি উল্লাহ জানান, পাহাড়ে যেসব আঞ্চলিক দল আছে তাদের নিজের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। কেউ যদি সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তবে সেটি রোধ করা খুবই কঠিন। তারপরও খুনোখুনি রোধ করতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে সর্বদা কাজ করছে। প্রতিটি ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা অনেককে আটক করতে সম্ভব হয়েছি এবং বাকিদের আটকে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
ঝুঁকি নিয়ে পজিশন বদলে সব আলো কেড়ে নিলেন রাফায়েল
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক