X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএম কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭৯ লাখ টাকা আদায়: তদন্ত করছে দুদক

সালেহ টিটু, বরিশাল
১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:৫১আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:০০

বিএম কলেজে দুদকের প্রতিনিধি দল বরিশালে সরকারি বিএম কলেজে ‘সাবসিডি’র  নামে অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭৯ লাখ টাকা আদায়ের ঘটনা তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ইনফোর্স ইউনিটের সদস্যরা। কলেজের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে গত মঙ্গলবার অধ্যক্ষের সঙ্গেও কথা বলেন দুদক কর্মকর্তারা। বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরোয়ার এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া বিএম কলেজে ভর্তি ফরম বিক্রির টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিএম কলেজের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, কলেজের ২৩টি বিভাগে শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংখ্যা পাঁচ হাজার। ওই আসনের বিপরীতে চলতি বছর অনার্স প্রথম বর্ষে আবেদন জমা পড়ে ১২ হাজার ৪০৪টি। পাঁচ হাজার আসনের মধ্যে ভর্তি হন চার হাজার ৬২৫ জন। ৩৭৫টি আসন খালি রয়েছে।

জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় এক বছরের সেমিনার ফি বাবদ ৪০০ টাকা, ইনকোর্স ফি ১২০ টাকা এবং শিক্ষা সফর ফি বাবদ ৫০ টাকা হারে মোট ৫৭০ টাকা রাখা হতো। কিন্তু এ বছর হঠাৎ করে চার বছরের সেমিনার, ইনকোর্স এবং শিক্ষা সফরের ফি বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই হাজার ২৮০ টাকা করে রাখা হয়। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে তিন হাজার ৪৪০ টাকা করে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তিন বছরের ফি বাবদ প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৭শ’ ১০ টাকা বেশি নেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে ভর্তি হওয়া চার হাজার ৬২৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বেশি আদায় হয়েছে ৭৯ লাখ আট হাজার ৭৫০ টাকা।

একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সাধারণত এক বছরের সেমিনার ফি রাখা হয়। বিএম কলেজেও আগে এক বছরের সেমিনার ফি ভর্তির সময় রাখা হতো। এ বছরই প্রথমবারের মতো শিক্ষকদের স্বার্থে অকারণেই চার বছরের ফি এক সঙ্গে রাখা হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা এক বছর পড়াশোনার পর কলেজ ছেড়ে চলে যান। তাহলে যারা কলেজ ছেড়ে চলে যাবেন তারা তো টাকা ফেরত পাবেন না।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আকতারুজ্জামান খান বলেন, ‘চার বছরের সেমিনার ফি আদায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে বরাবরের মতো আলোচনা হয়েছে। সভায় কিছু শিক্ষক এর বিরোধিতা করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠরা চার বছরের পক্ষে মত দেন। সর্বোচ্চ মতামতের ভিত্তিতে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। তাছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা আছে কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলে চার বছরের সেমিনার ফি এক সঙ্গে নিতে পারবেন। আমরা আইনের বাইরে যাইনি।’ বরিশাল বিএম কলেজ

রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. এহতেশামুল হক বলেন, ‘আমরা সেমিনার, ল্যাব, শিক্ষা সফর বাবদ দুই হাজার ৮শ’ টাকা, ইনকোর্স ফি ৬৪০ টাকা হারে মোট তিন হাজার ৪৪০ টাকা করে রেখেছি।’ চার বছরের টাকা একসঙ্গে আদায়ের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বিভাগে গেলো বছর ভর্তি হয় ১৫০ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৯ জনে। বিভাগে দুই জন পিওন আছে যাদের ১১ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। এর ওপরে আবার আদায়কৃত টাকা দিয়ে ২৫% টাকায় বই ক্রয় বাধ্যতামূলক। বাকি বছরগুলো কভার করার জন্যই চার বছরের ফি এক সঙ্গে রাখা হয়েছে।’

বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরোয়ার বলেন, ‘ভর্তিতে টাকা বেশি নেওয়া হয় এমন অভিযোগে ঢাকা থেকে দুদকের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার কলেজে এসেছিলেন। আমরা তাদের কাছে সব ডকুমেন্ট দিয়েছি। আসলে ভর্তির পরে অনেক ডিপার্টমেন্ট থেকে শিক্ষার্থী চলে যায়। তাদের সাবসিডি দিতে চার বছরের ফি একসঙ্গে রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র রয়েছে। আমরা পরিপত্রের বাইরে কিছু করিনি, আর করার সুযোগও নেই।’

আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে বিএম কলেজে ভর্তির আবেদন করেন ১২ হাজার ৪০৪ জন শিক্ষার্থী। আবেদন ফর্ম বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ২৫০ টাকা করে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হয় ১৫০ টাকা। বাকি ১০০ টাকা কলেজ ফান্ডে জমা হয়। ভর্তি কার্যক্রম শেষে ওই টাকা শিক্ষক ও কর্মচারী এবং ভর্তি কমিটির সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বছর ভর্তিতে টাকা আদায় হয়েছে ৩১ লাখ ১০ হাজার টাকা। ওই টাকা থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা হয়েছে ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৬০০ টাকা। বাকি ১২ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন হয়েছে। ওই টাকার একটি বড় অংশ ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ আলম হাওলাদার এবং বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরোয়ার পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  

এ ব্যাপারে ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ‘এক টাকাও এদিক সেদিক করার কোনও সুযোগ নেই। আগে ছিল, কিন্তু এখন স্বচ্ছতা এসেছে। আমাদের ফান্ডে ১২ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা উঠেছে।  কলেজের ২০০ শিক্ষককে ২৪শ’ টাকা করে মোট ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে এবং ১৫০ জন কর্মচারীর প্রত্যেককে ১২শ’ টাকা করে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভর্তি কমিটির আট জন সদস্যের প্রত্যেকে পেয়েছেন ৩৮ হাজার টাকা করে।’

তবে অনুসন্ধানে ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক শাহ আলমের তথ্যে বড় ধরণের গরমিল পাওয়া গেছে। তিনি ২০০ শিক্ষককের কথা বললেও বাস্তবে ১৬৯ জন শিক্ষকের মধ্যে চার লাখ পাঁচ হাজার ৬শ’ টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। দেড়শ কর্মচারীকে টাকা দেওয়ার বিষয়টিও সত্য নয়। ৯৬ জন কর্মচারীকে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে মঙ্গলবার অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে তদন্তে ঢাকা থেকে বরিশালে আসা দুদকের প্রতিনিধি দল কলেজের বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে ভর্তি সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে দেখেন। পরে তদন্ত দল কথা বলেন কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে। এ বিষয়ে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, ‘ভর্তিতে বেশি টাকা রাখা হয়েছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের প্রতিনিধি দল কলেজে এসেছিলেন। আমরা তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র দিয়েছি। তবে যারা প্রথম বর্ষের পর চলে যাবে তারা চাইলে বাকি তিন বছরের টাকা নিয়ে যেতে পারবেন। এখানে অনিয়মের কোনও সুযোগ নেই।’

দুদক বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মো. জুলফিকার আলী বলেন, ‘ঢাকা থেকে ইনফোর্স ইউনিটের প্রতিনিধি দল বিএম কলেজে গিয়েছিল। এ সংক্রান্ত একটি ই-মেইল আমার কাছে এসেছে। তবে কী কারণে তারা এসেছেন সেটা বলতে পারবো না। প্রতিনিধি দল আমার কাছে রিপোর্ট দিলে তখন হয়তো বলা যাবে।’

 

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তামিমের ফেরা প্রসঙ্গে শান্ত, ‘সবার আগে উনার চাইতে হবে’
তামিমের ফেরা প্রসঙ্গে শান্ত, ‘সবার আগে উনার চাইতে হবে’
পশ্চিম তীরে ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি সেটেলাররা
পশ্চিম তীরে ২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করলো ইসরায়েলি সেটেলাররা
রিক্রুটিং এজেন্সিকে মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর
রিক্রুটিং এজেন্সিকে মানবিক হওয়ার আহ্বান প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর
চুয়াডাঙ্গায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি
চুয়াডাঙ্গায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪০.৬ ডিগ্রি
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা
ডাবের পানি খাওয়ার ১৫ উপকারিতা