দুর্নীতির অভিযোগে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন বাজেট কাম হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান, বাজার সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল ইসলাম ও ট্রেড লাইসেন্স সুপারিনটেনডেন্ট আজিজুর রহমান। সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার আগে তাদের নিজ দফতর থেকে সরিয়ে প্রশাসনিক শাখার বিশেষ কজে নিযুক্ত করেছিল কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা ও বর্তমানে প্রশাসনিক শাখায় বিশেষ কর্মে নিযুক্ত আহসান উদ্দিন রোমেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিসিসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত বাবলু জানান, কর্মকর্তা মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে নিজ পদে থাকাকালীন অর্থ দফতরে প্রভাব খাটিয়ে উচ্চতর স্কেল গ্রহণ, বেতনের সঙ্গে তারতম্যহীন অর্থ আয় ও নামে-বেনামে হিসাব নম্বর খুলে করপোরেশনের কৃত্রিম অর্থিক সংকট সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
নুরুল ইসলানের বিরুদ্ধে নিজ পদে দায়িত্বকালীন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে নামে-বেনামে সিটি করপোরেশনের একাধিক স্টল বরাদ্দ দেওয়া, কর্তৃপক্ষের অগোচরে নিজ ইচ্ছায় স্টল জনসাধারণের কাছে ভাড়া দিয়ে টাকা আত্মসাৎ এবং অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে স্টল বরাদ্দের অভিযোগ রয়েছে।
আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে বাজার সুপারিনটেনডেন্ট পদে থাকাকালীন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে নামে-বেনামে সিটি করপোরেশনের একাধিক স্টল বরাদ্দ দেওয়া, নিজ পদে (ট্রেড লাইসেন্স সুপারিনটেনডেন্ট) থাকাকালীন সহায়ক কর্মচারীকে দুর্নীতিতে উদ্বুদ্ধ করা এবং অবৈধ কাজ না করা হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেওয়াসহ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।
বরখাস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে তা সিটি করপোরেশনের (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা মোতাবেক অপরাধ বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বেলায়েত বাবলু আরও জানান, বিসিসি কর্তৃপক্ষ মনে করে তাদের কর্মকাণ্ডে সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি অনেকাংশে ক্ষুণ্নসহ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাই তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বিধিমালার ৪৪(১) ধারা মোতাবেক বরখাস্তকালীন তিন জনই খোরাকি ভাতা পবেন।
বরখাস্তের আদেশে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বিসিসি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আহসান উদ্দিন রোমেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে আদেশে উল্লেখ করা হয়, প্রশাসনিক শাখায় সংযুক্ত থাকলেও তথ্য গোপন রেখে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। তথ্য কমিশনের শুনানিতে উপস্থিত থাকার জন্য ঢাকায় অবস্থান করেও অফিস আদেশে স্বাক্ষর দেখিয়েছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়। তিন দিনের মধ্যে সেই নোটিশের জবাব না দেওয়ায় পুনরায় নোটিশ করা হলো।