X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহতের ঘটনায় রাবিতে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত

রাবি প্রতিনিধি
১৬ নভেম্বর ২০১৯, ২১:২৬আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৩৫

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করার প্রতিবাদে আন্দোলনরতরা রবিবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১০টা পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। এই সময়ের মধ্যে তিন দফা দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা আবারও আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন। শনিবার চার ঘণ্টা মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার পর বেলা পৌনে ৩টার দিকে তারা এ ঘোষণা দেন।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো– মারধরের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার; হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সোহরাবের চিকিৎসার ব্যয়ভার নেওয়া।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের একটি কক্ষে ফাইন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহরাব মিয়াকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ ওঠে শাখা ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। এতে সোহরাবের মাথা ও হাতে গুরুতর জখম হয়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মী হলেন– আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবির নাহিদ। তারা দুজনই জোহা হল শাখা ছাত্রলীগের দায়িত্বে রয়েছেন এবং রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী বলে জানা গেছে।

হল সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সোহরাবকে জোহা হলের ২৫৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান আসিফ ও হুমায়ুন। একপর্যায়ে তারা দুজন মিলে সোহরাবকে রড দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। সোহরাব রক্তাক্ত হলে তারা মারধর বন্ধ করেন। পরে সোহরাবের বন্ধুরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ও পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হাসপাতালে সোহরাবের সঙ্গে থাকা সহপাঠী তনয় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোহরাবের বাঁ হাতের কনুইয়ের ওপর এবং নিচে দুই জায়গায় ভেঙে গেছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন মাথার তিন জায়গায় মোট ১৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার পায়েও গুরুতর যখম হয়েছে। এক্সরে করা হচ্ছে। রিপোর্ট পেলে জানা যাবে পা ভেঙেছে কিনা।’

শুক্রবার রাতের ঘটনা সম্পর্কে তনয় বলেন, ‘দু’দিন আগে হল থেকে একটি ল্যাপটপ চুরি হয়। এরপর আসিফ লাক চুরি হওয়া ল্যাপটপ খুঁজে দিতে সোহরাবকে চাপ দেয়।’ ওই সময় সবার সামনে সোহরাবকে আসিফ চড়-থাপ্পড় মেরেছিলেন বলেও জানান তনয়।

তনয় আরও বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আসিফের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী সোহরাবকে তার রুমে খোঁজ করে। ওই সময় সে রুমে ছিল না। পরে  সোহরাবকে খোঁজ করে ২৫৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। এরপর আমরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এবং পরে রামেকে নিয়ে আসি।’

তবে অভিযুক্ত আসিফ লাক মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘গত দু’দিন আগে ২৫৮ নম্বর কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ চুরি হয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই ব্লকে দুজন বহিরাগত এসেছিল সোহরাবের কাছে। সোহরাব তাদের সঙ্গে প্রায়ই হলের মধ্যে মাদক সেবন করে। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে সোহরাবের সঙ্গে কথা বলি। গতকালও একজন বহিরাগত এসেছিল। সোহরাব তাকে নিয়ে পানি ট্যাঙ্কের ওপরে মাদক সেবন করছিল। এ সময় আমি তাদের দুজনকে  ২৫৪ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে কথা বলি। পরে সোহরাব রক্তাক্ত হলে আমি তাকে নিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বের হই। এ সময় তার বন্ধুরা আমাকে একা পেয়ে মারধর করে।’

ছাত্রলীগের চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

রাবি শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ ঘটনা তদন্তের জন্য চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহরাব হোসেনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। কমিটির সদস্যরা হলেন– বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত, যুগ্ম-সম্পাদক সাব্বির হোসেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু।

বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত কমিটিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সেলে জমা দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জুলকার নায়েন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এখন হলে অবস্থান করছি। রাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। ওই ব্লকের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। ঘটনাটি জানার পর আমি সহকারী প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সোহরাবের বন্ধু জুবায়েরের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সে সোহরাবের সঙ্গেই আছে।’

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন